পর্ব ২
নীল যখন যেখানে যায়, যা কিছু করে তার একটি ধারা বর্ণনা করতে থাকে ম্যাসেঞ্জারে; যাতে অনন্যার মনে হয় ওরা এক সঙ্গেই আছে ঘরে এবং বাইরে। ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারেই কথা হয় বেশি। লংডিস্টেন্স কালে অনেক বিল এসে যায়, যা এফোর্ড করা দুইজনের পক্ষেই অসম্ভব।
নীলের কন্ঠটি অসাধারণ। নীল যখন কথা বলে অনন্যার হৃদয়ে তখন অন্য রকম এক অনুভূতির সঞ্চার হয়। রক্ত সঞ্চালনের গতি পরিবর্তিত হয়। হৃদস্পন্দনও বাড়তে থাকে।
নীল যে কোম্পানিতে চাকরি করে সেখান থেকে বছরে দুইবার হায়দরাবাদে যেতে হয় ট্রেনিংয়ের জন্য। অনন্যার সঙ্গে পরিচয়ের পর এই প্রথমবার সে যাচ্ছে হায়দরাবাদে। যেতে যেতে ধারা বর্ণনা, এয়ারপোর্ট থেকে ছবি পাঠানো ইত্যাদিতে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। নীলের মধ্যে ছেলে-মানুষীর ভাবটা বেশ জোরালো। এই যেমন, পথশিশুদের ধরে এনে রেস্টুরেন্টে খাওয়ানো, তাদের আইসক্রিম কিনে দেওয়া, সেলফি তোলা ইত্যাদি। নীল আসলে প্রচণ্ড নরম মন আর মানবিকতা ধারিত একজন মানুষ।
হায়দরাবাদের এটি একটি ট্রেনিং একাডেমি। রিসোর্টের মত শয়নকক্ষ, ডাইনিং রুম, বাগান, বাগান ভরা ফুল; সবই দেখিয়ে দিলো অনন্যাকে ভিডিও কল করে।
নীল অনন্যাকে “মেম সাহেব” বলে ডাকে। নিমাইয়ের সেই বিখ্যাত গল্পের মেমসাহেব নীলের কাছে অনন্যা। কলকাতার বাংলা অনন্যার কাছে মধুর মত মনে হয়। আরো এই জন্য মনে হয় কারণ, অনন্যা কথা বলে ঢাকার টিভি নাটকের নব্য কথ্য বাংলায়। যাকে বলা যায় জগাখিচুরি বাংলা। এই ভাষাটি এখনকার নাট্যকারদের আবিষ্কার। এর কোনো অঞ্চল বা অভিধান নেই।
মেম সাহেব বলে ডাক দিলেই অনন্যা কেমন যেন হয়ে যায়! সেই মেম সাহেব! কী রোমান্টিক ছিলো গল্পটি! আজও মনে পড়ে মেম সাহেব উপন্যাটির কথা অনন্যার। এমন করে অনন্যাকে আজও কেউ ডাকেনি, ভাবে অনন্যা।
ডিনার শেষে ফোন করলো নীল। অনন্যা ততক্ষণে দুপুরের রান্না নিয়ে ব্যস্ত। ভারত-কানাডার সময় তো পুরোই বিপরীত। অনন্যা তবুও হাত মুছে ফোন ধরে। নীল গল্প শুরু করে- জানো মেম সাহেব, আমি এখন দোলনায় বসে দোল খাচ্ছি। মনে হচ্ছে পাশে তুমি আছো। আমি তোমাকে জাপটে ধরে দুলছি। খুনসুটি করছি। একটা চুমু খাবে? দিই? হ্যাঁ বল না! অনন্যার অনুভূতিটা তখন তেমন কাজ করছে না। অনেকটা অভিনয় করে, নীলকে খুশি করার জন্যেই বললো, আচ্ছা দাও। নীল বললো, “উম্মমাহ”। অনন্যাও তাই করলো। নীল খুশি হয়ে শুতে চলে গেলো।
নীলের মনটা যে বিশাল এবং শিশুর মত সরল তা এতোদিনে বুঝে গেছে অনন্যা। তাই, ওর সব ছেলে-মানুষীই অনন্যার কাছে গ্রহনযোগ্য। হৃদয় উৎসারিত ভালোলাগার প্রকাশগুলো মধুময়, ভাবে অনন্যা।
ট্রেনিং শেষ করে কলকাতায় ফিরলো নীল। গাড়ি নেই, হোন্ডায় করেই অফিসে যায় সে। অফিস শেষ করে পার্কিং লটে হেঁটে যেতে যেতে বিরাট এক বকুল গাছ। তখন বকুলেরই মৌসুম। প্রতি দিন বাড়ি ফেরার পথে সে ফুল কুড়ায়। সেই ফুল রোদে শুকিয়ে একটা সুন্দর কাঁচের কন্টেইনারে সংরক্ষণ করে রাখে সে। একদিন অনেক কথার মাঝে নীল যখন ভাবাবেগ তাড়িত হয়, তখন সে জিজ্ঞেস করে– মেম সাহেব, তোমার বকুল ফুল পছন্দ? – হ্যাঁ, ভীষণ।
চলবে….