অফিসে যাচ্ছেন হঠাৎ মনে হলো জুতাটা রং করিয়ে নিলে ভালো হতো বা জুতা সেলাই করা প্রয়োজন, কিন্তু খুচরো টাকা নেই! তাহলে উপায়? উপায় রয়েছে। রাজধানীর মতিঝিলে দেখা মিলবে স্মার্ট এমন এক জুতা সেলাইকারীর। আপনি তার সেবা নিয়ে খুব সহজেই মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ভাঙতি টাকার ঝামেলা নেই এমনকি পরিচিত হলে সঙ্গে টাকা না-থাকলেও চিন্তার কিছু নেই। কেননা তার দোকানে কিউআর কোড স্ক্যান করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। এটি এ সময়ের আধুনিক এবং সহজ একটি ব্যবস্থা।
মতিঝিল সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে জুতা মেরামত করেন বিকাশ রিসি। সঙ্গে কাজ করেন স্ত্রী শেফালী দাস এবং ছোট ভাই রাকেশ রিসি। জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হলেও ১৯৮২ সাল থেকেই মতিঝিলে ফুটপাতে দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন বিকাশ রিসির পরিবার।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে ছাউনি ঘেরা একটি জায়গায় জুতা সারাইয়ের দোকান নিয়ে বসেছেন তারা। দোকানে সাজানো রয়েছে হাতুড়ি-বাটার-কাচি, সুতা, চামড়া, কালি, বিভিন্ন সোল এবং কিছু পুরনো জুতা। পুরনো জুতার ওপর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কিউআর কোড লেখা, যা বিশেষভাবে নজড় কাড়বে অনেকের।
কীভাবে এই ভাবনা মনে এলো জানতে চাইলে রিসি বলেন, একদিন ব্যাংকের এক বড় স্যার জুতা রং করাতে আসেন। কাজ করার পর ১ হাজার টাকার নোট দিলে ভাঙতি নিয়ে ঝামেলায় পড়ি। এরপর তিনি বললেন, তোমার মোবাইল আছে? আইডি কার্ড আছে? আমি স্যারকে সব দিলে তিনি একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেন। তারপর থেকে সেই একাউন্টের মাধ্যমেই অনেকের টাকা নিচ্ছি।
কিউআর কোড ব্যবহার করে কী ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে বড় বড় স্যারেরা আসে। বড় বড় নোট দিলে আগে ভাঙতি দিতে পারতাম না। অনেকে টাকা পরে দেওয়ার কথা বলে চলে যেতেন। অনেক টাকা মাইর যাইতো। এখন ঠিকঠাক টাকা পাই। ভাঙতি না থাকলে মোবাইলে টাকা পাঠায় দেয় অনেকে। টাকা মাইর যায় না।
ফুটপাতে জুতা সেলাইয়ের দোকানে পেমেন্টের এমন আধুনিক ব্যবস্থা পথচারীসহ অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। ফলে অনেকে আগ্রহ নিয়ে জুতা রং বা সেলাই করতে আসছেন। রাফসান তাহিন নামে এক গ্রাহক বলেন, ব্যাপারটা কিন্ত দারুণ! অনেক সময় আমাদের কাছে ভাঙতি থাকে না কিন্তু ফোনে টাকা থাকে। ফোনের মাধ্যমে টাকা দেওয়া যায়, ফলে সুবিধা হয়।
শিবলী খান নামে আরেক গ্রাহক কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ঢাকায় ভাঙতি পাওয়া খুব কঠিন। দেখবেন রিকশাওয়ালারও ভাঙতি দিতে চায় না। এটা ভালোই হয়েছে। সব জায়গায় এমন হলে সুবিধা হবে।
জানা যায়, সম্প্রতি ক্যাশলেস সেবা চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সেবা নিতে যে কোনো একটি ব্যাংকের অ্যাপস থাকলেই চলবে। গ্রাহক অ্যাপের মাধ্যমে কিউআর কোড ব্যবহার করে টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। বিকাশ, রকেট, এম ক্যাশসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেওয়া যাবে এই সুবিধা।
এই সুবিধা শুধু জুতা সেলাইয়ের দোকানে নয়, মতিঝিলের আশেপাশে বিভিন্ন ফলের দোকান, ভ্রাম্যমাণ পান- সিগারেটের দোকানসহ বিভিন্ন জায়গায় চালু হয়েছে।