সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে দ্বিতীয়বারের মতো সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে জেলার ৯টির ওয়ার্ডের প্রায় প্রতিটিতেই অর্থের বিনিময়ে গোপনে ভোট বেচাকেনার অভিযোগ উঠেছে। টাকায় বেচাকেনা ভোট নিয়ে গত দুইদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। তবে সরাসরি অভিযোগ না পাওয়ায় ব্যবস্থা নেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা।
নির্বাচনে পরাজিত হওয়া কয়েকজন প্রার্থী আক্ষেপ করে অভিযোগ করেন, আজ অর্থ না থাকায় ভোট কিনতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে হেরে গেলাম।
রায়গঞ্জ উপজেলার ৪ নং ওয়ার্ডে বিজয়ী প্রার্থী সুমন সরকারের বিরুদ্ধে নকল টাকা সরবরাহ করে ভোট কেনার গোপন তথ্য ফাঁস হয়েছে। উপজেলার সোনাখাড়া ও পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের অন্তত সাত ইউপি সদস্য এমন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। প্রতারণার শিকার কয়েকজন ইউপি সদস্য ভোটার নকল টাকা চালাতে না পেরে আক্ষেপও করেছেন। ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে অভিযোগ দেননি কেউ-ই। এমন খবর ফেসবুকেও ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় নানা মন্তব্য। কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ভোট দিয়েই ভোটাররা খেলেন ধরা।
রায়গঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক শেখ মোস্তফা নুরুল আমিন নির্বাচনের দিন তার নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে লেখেন, আজ জেলা পরিষদের নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচনে রায়গঞ্জের এক সদস্য প্রার্থী তার পক্ষে ভোট আদায়ের জন্য সুকৌশলে তালিকাভুক্ত ভোটার সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের টাকার বান্ডিল দিয়েছেন আগের রাতে। নির্বাচনের দিন ভোট দিয়ে কিছু কেনাকাটা আর ফুর্তির জন্য বের হন তারা। কিন্তু পরখ করে দেখেন, রাতের অন্ধকারে ভোট বেচাকেনার সব টাকাই জাল। কয়েক ইউপি সদস্য তাদের সেই প্রার্থীকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, জাল নোট যার কাছে পাওয়া যাবে তাকেই কিন্তু পুলিশ আটক করবে। এ কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে আছেন তারা। ভোট বেচারকেনার বাজারে এভাবে কত কিছুই না ঘটছে।
এদিকে, অভিযুক্ত প্রার্থী সুমন সরকার রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য পদে (বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক) বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। দ্বিতীয়বারের মতো তিনি জেলা পরিষদের সদস্য হয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে বিজয়ী প্রার্থী সুমন সরকার বলেন, নির্বাচিত হওয়ায় প্রতিপক্ষ এমন মিথ্যা গুজব ছড়াচ্ছে। কোনও ইউপি সদস্যকে জাল টাকার বান্ডিল দিইনি।
একই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, জাল নোটের বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জেনেছি। তবে কে কাকে জাল টাকার বান্ডিল দিয়েছেন, সেটা জানা নেই।
রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাদি আলমাজি জিন্নাহ বলেন, অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নারী ভোটার সংগ্রহ করেছি। কিন্তু পুরুষ ভোটারদের নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা ছিলে না। অর্থ খরচের বিষয়টিও অমূলক।
সিরাজগঞ্জ পৌর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক খালেদ মোশারফ শাওন জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদর উপজেলার ২নং ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে হাতি মার্কায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একটিও ভোট পায়নি শাওন। তিনিসহ মোট ৫ প্রার্থীর জামানত বাতিলও হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে টিউবওয়েল প্রতীকে ৭৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন একরামুল হক।
শূন্য ভোট পাওয়া খালেদ মোশারফ শাওন বলেন, শ্রমিকবান্ধব মানুষ আমি। সততাই আমার একমাত্র পুঁজি। ভোট কেনার অর্থ আমার নেই। যদি অন্যদের মতো অবৈধভাবে আয় করতে পারতাম তাহলে সেই অর্থ দিয়ে ভোট কিনতাম। কিন্তু অবৈধভাবে ভোট কেনার অর্থও আমার নেই। তাহলে জিততেও পারতাম। জামানতও বাতিল হতো না।
মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) দুপুরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে অর্থ লেনদের হয়ে থাকলেও আমাদের কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। এ ব্যাপারে আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি।
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, নির্বাচনে জাল নোট দিয়ে ভোট বেচাকেনার বিষয়ে কেউই কোনও অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।