কর্ণফুলী নদীর ডলফিন জেটি সংলগ্ন এলাকায় অপর একটি জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একটি অয়েল ট্যাংকার ফুটো হয়ে জ্বালানি তেল নদী ও সংযুক্ত খালে ছড়িয়ে পড়ছে।
শুক্রবার ভোরে ট্যাঙ্কারটি ফুটো হয়ে প্রায় ১০ টন ডিজেল নদীতে ছড়িয়ে পড়ে। শনিবার বিকাল পর্যন্ত তার আট টনের মতো (পানিমিশ্রিত তেল) নদী থেকে তোলা হয়েছে বলে দাবি করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
তবে এখনও আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় তেল লেগে থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি জোয়ারে সাগর থেকেও তেল ফিরে আসার শঙ্কা জানিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিদরা।
শুক্রবার ভোর ৪টার দিকে কর্ণফুলীর ডলফিন জেটি-৩ এর কাছে নদীতে ‘দেশ-১’ নামের অয়েল ট্যাঙ্কারটি অন্য জাহাজ ‘সিটি-৩৪’- এর সাথে সংঘর্ষে ফুটো হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘দেশ-১’ নামের তেলবাহী জাহাজটি অবস্থান পরিবর্তনের সময় অপর জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ‘দেশ-১’ ফুটো হয়ে তা থেকে তেল ছড়িয়ে পড়ে।
ওই ট্যাঙ্কারে ১২০০ টন ডিজেল ছিল। পদ্মা জেটি থেকে তেল নিয়ে সেটির খুলনা যাওয়ার কথা ছিল। দুর্ঘটনার পর আট টনের মতো তেল নদীতে চলে যায়।
পরে নদী থেকে প্রায় ৮০ শতাংশ তেল তুলে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বন্দর সচিব।
দুর্ঘটনার পরপরই তেল অপসারণ শুরু করা হয়েছিল জানিয়ে বন্দরের ডেপুটি কনজারভেটর ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোরে ঘটনার সময় কাছাকাছি ছিল আমাদের তেল অপসারণকারী জাহাজ বে ক্লিনার-২। তখন জোয়ার-ভাটার মাঝামাঝি সময় ছিল।
“ফলে সহজেই ছড়িয়ে পড়া তেল স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে অপসারণ সম্ভব হয়েছে। এরপর দ্রুততম সময়ে বে ক্লিনার-১ এবং সাপোর্ট ভেসেল হিসেবে কান্ডারি-৮, ১০ ও ১১ কাজ শুরু করে। আট টন তেল অপসারণ সম্ভব হয়েছে। কাজ চলছে। শেষ ফোটা পর্যন্ত অপসারণের চেষ্টা করব।”
শনিবার বিকেলে বন্দর চ্যানেলে আর কোনো ভাসমান তেল নেই দাবি করে ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম বলেন, জোয়ার-ভাটার কারণে কিছু তেল বিভিন্ন জেটিতে জাহাজের গায়ে লেগে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দরের একজন কর্মকর্তা বলেন, জোয়ারের সময় তেলের কিছু অংশ নদীর ভাটিতে এবং সংলগ্ন খালগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আবার ভাটার সময় মোহনা হয়ে কিছু তেল সাগরেও ছড়িয়েছে।
শনিবার দুপুরে ডলফিন জেটি-৩ এর অদূরে কর্ণফুলীর সাথে সংযুক্ত ৭ নম্বর খালের মুখে তেল ভাসতে দেখা গেছে।
ওই এলাকা থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে মহেশখালের মুখে (ইশান মিস্ত্রির হাট সংলগ্ন) খাল পাড়ের ঘাষে ও গাছপালায় তেল লেগে আছে।
সেখানকার নৌকার মাঝি কবির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কালকে পানিতে তেল ভাসতে দেখেছি। আজকেও সকালের দিকে জোয়ারের সময় তেল আসছিল। ভাটার টানে সেগুলো আবার নদীর দিকে যাচ্ছে।”
নদীতে তেল ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সংযুক্ত দাশগুপ্তা।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছবিসহ বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। পরিবেশ দূষণের আলামত পাওয়া গেছে।
“দুটি জাহাজের মালিকপক্ষকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের আগামীকাল শুনানির জন্য হাজির হতে বলা হয়েছে।”
জাহাজ দুটি আটক করা হয়েছে জানিয়ে বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেছেন, কোস্টগার্ড তাদের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
এভাবে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে কর্ণফুলী দূষণে সেখানকার পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইদ্রিস আলী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পানির উপরিভাগে জ্বালানি তেল ছড়ানোয় তা মাছ, নদীতে থাকা ক্ষুদ্র প্রাণি এবং বাস্তুসংস্থানের মারাত্মক ক্ষতি হবে। যতক্ষণ তেল থাকবে ততক্ষণ জোয়ার-ভাটায় এগুলো নদীতে বারবার আসতে থাকবে।
“কর্ণফুলী নদীতে বছরে এ রকম দু-চারটা ঘটনা ঘটছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।”