সাঈদ তারেক
কেউ যদি ধরে বসে থাকেন ২৫ তারিখের মধ্যেই সব কিছু ওভার হয়ে যাচ্ছে, ২৬ তারিখ থেকে আবার আমরা অফিস আদালতে যাবো দোকানপাট খুলবে বাস ট্রেন চলবে- ভুল মনে করে আছেন। করোনাচক্রের যে ধাপ আমরা পার করছি আরও ৫/৭ দিন লাগবে এর ফাইনাল হিটটা বুঝতে। তারপরই বোঝা যাবে কবে থেকে আমরা স্বাভাবিকের পথে পা রাখতে পারবো। আমেরিকায় এই মৃত্যুর মিছিলের মধ্যেও ট্রাম্প পাগলা ইস্টার সানডে’র (গত রোববার) আগে সব খুলে দিতে চেয়েছিল। যাহোক পরে সে গোঁ থেকে সরে এসেছে।
এখন বলছে ১ মে’র মধ্যে কোন কোন রাজ্য খুলে দেবে। এক রাজ্যের গভর্ণর বলেছে নভেম্বরের আগে লকডাউন তোলা উচিত না। হার্ভার্ডের বিজ্ঞানীরা বলছে ২০২২ সাল পর্যন্ত সামাজিক দুরত্বের ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। নিউ ইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্ণর বলছেন লকডাউন তোলার দুইটা উপায়, হয় ভ্যাকসিন হাতে আসতে হবে অথবা মৃত্যুর হার শুণ্যের ঘরে আনা। এই দু’টোর যে কোন একটা সম্পর্কে যেদিন নিশ্চিত হবেন সেদিনই তিনি লকডাউন তুলে দেবেন। আমেরিকায় মোট মৃত্যুর অর্দ্ধেক মানুষ মারা গেছে নিউ ইয়র্কে।
আমাদের আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে কোন আইডিয়া নাই। এমনিতেই আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিন, সনাক্ত- নানা ক্যাটাগরি করে একটা বিভ্রন্তি সৃস্টি করে রাখা হয়েছে। আবার আছে উপসর্গের মৃত্যু। ফলে প্রকৃত পরিস্থিতি নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। আগে পরীক্ষার ব্যবস্থা প্রায় ছিলোই না সনাক্তের সংখ্যাও ছিল হাতেগোনা। এখন সক্ষমতা বেড়েছে, বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা হচ্ছে- সনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। তাতে গড়ে দশ শতাংশ করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। কত লোককে পরীক্ষা করা হবে জানিনা বা শেষ পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তাও অনুমান করা সম্ভব না তবে শেষ রোগীটি খুঁজে পাওয়া পর্যন্ত পরীক্ষা চালিয়েই যেতে হবে। তাহলেই অনুমান করা যেতে পারে কয়দিন লাগবে।
আক্রান্ত দেশগুলো লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছে। চীনের উহান ৭০ দিন অবরুদ্ধ ছিল। ২৫ তারিখে আমাদের শেষ হবে মোটে ৩০ দিন। কাজেই বলার অপেক্ষা রাখে না খুব শীগগিরই এই অচলাবস্থার অবসান ঘটছে না। ভারত ৩ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আরও বাড়াবে। বোঝাই যাচ্ছে ২৫ তারিখের পর আমাদেরকে আরও এক দফা বর্দ্ধিত করার দরকার হতে পারে। যদি ২০/২২ তারিখের মধ্যে সনাক্তের হার দুইতিন পার্সেন্টের মধ্যে এসে ঠেকে তাহলে হয়তো আর বেশীদিন অপেক্ষা করতে হবে না।
চিন্তা করা যায় কি ভয়ংকর একটা পরিস্থিতি আমরা পার করছি এবং সামনে আরও কি কঠিন দু:সময় অপেক্ষা করছে! রোগীর সংখ্যা যাই হোক ওদের চিকিৎসা নিয়ে আমি আর কিছু ভাবি না। নাই ডাক্তার নাই প্রশিক্ষিত নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী নাই, নাই বিশেষায়িত হাসপাতাল, এখানে ওখানে তাবু বা আচ্ছাদন ফেলে বানানো বিছানা বালিশের হাসপাতালে রোগীকে নিয়ে শুইয়ে রাখা যেতে পারে কিন্তু চিকিৎসা কি হবে সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এমনিতেই অভিযোগ উঠছে নির্দ্ধারিত হাসপাতালগুলোর কোন কোনটায় খাবার নাই পানি নাই। রোগী তো দুরের কথা নার্সরাই নাকি খাবার পায় না। ডায়াবেটিসের এক রোগী নাকি খাবার না পেয়ে সুগার ফল কে মারা গেছে! করোনা রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে ভেন্টিলেশন মেশিন জরুরী। কয়টা জায়গায় এ সুবিধা আছে বা কয়জনকে তা দেয়া যাবে তা কর্তারাই বলতে পারবেন!চিকিৎসা নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাই না, চেস্টা করতে হবে কাউকে যেন হাসপাতাল পর্যন্ত যেতে না হয়। অর্থাৎ কোন অবস্থাতেই কেউ যেন আক্রান্ত না হই। বাকিটা আল্লাহ ভরষা।
এ তো গেল একটা দিক, পাশাপাশি এই লকডাউনের কারনে মানবিক বিপর্যয়ের আশংকা দেখা দিয়েছে। তিন সপ্তাহ চলছে, তাতেই হাহাকার অবস্থা। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের উপাস শুরু হয়েছে, স্বল্প আয়ের কর্মজীবি পেশাজীবিরা দিশাহারা, নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্তের চোখে শর্ষেফুল। সবাই আশা করে বসে আছে ২৬ তারিখে সবকিছু খুলে যাবে, ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নতুন করে শুরু করবে। এমনিতেই লকডাউন মানছে না, তার ওপর যদি শোনে ছুটি আরও বাড়ছে! কয়জনকে ঘরে আটকে রাখা যাবে!উন্নাসিক হয়ে লাভ নাই বাস্তবতা মানতে হবে। করোনা মহামারী ঠেকাতে মানুষকে ঘরে রাখতে হবে এটা যেমন সত্য তেমনি ঘরে রাখতে হলে তাদেরকে খাদ্য এবং অর্থ সহায়তা দিয়ে যেতে হবে- যতদিন না এই জরুরী অবস্থার অবসান হয়। সরকারের হাতে টাকা আছে খাদ্য সামগ্রী আছে, ইতিমধ্যে নানা প্যাকেজও ঘোষনা করা হয়েছে কিন্তু এগুলো মানুষের কাছে পৌঁছুনোর মত কোন কার্যকর পদ্ধতি এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।
সরকারি চ্যানেলে কিছু চাল বিতরনের চেষ্ট হয়েছিল দেখা গেল চোরের দল তার ওপর পঙ্গপালের মত ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যাহোক ও উদ্যোগ স্থগিত করা হয়েছে। করোনা থেকে বাঁচার মতই মানুষ বাঁচানোও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে না পারলে সামাজিক বিশৃংখলা এবং নৈরাজ্য অনিবার্য্য। একদিকে করোনা সাথে এনার্কি- কোথায় যে নিয়ে যাবে আমাদেরকে! বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। সরবরাহের একটা কার্যকর ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে হবে।
363610 Comments3 Shares