আমরা সবাই খুব খারাপ সময় পার করছি।করোনা ভাইরাস সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।আমাদের দেশেও সবাইকে হোম কোয়েরেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে।আপাতত স্কুল কলেজ বন্ধ।করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি আছেন বয়স্ক এবং ডায়বেটিক রোগীরা।তাই ডায়বেটিক নিয়ন্ত্রনে ঘরে বসেই করতে হবে নিয়মিত ব্যায়াম।
ডায়বেটিক রোগীদের করনীয় ব্যায়াম:
জগিং:
ঘরের যেকোনো জায়গায় দাঁড়িয়ে ত্রিশ মিনিট জগিং করতে পারেন।প্রথম পাঁচ মিনিট ধীরে ধীরে, পরের বিশ মিনিট দ্রুত এবং শেষের পাঁচ মিনিট ধীরে ধীরে করতে হবে।জগিং করা শেষে আরাম দায়ক পজিসনে আরো পাঁচ মিনিট শুয়ে থাকবেন।জগিং করার সময় আরাম দায়ক জুতা বা জগিং সু পরা জরুরী।
দড়ির লাফ:
ত্রিশ মিনিট দড়ির লাফ হতে পারে ভালো ব্যায়াম।এতে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায় এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি ক্ষয় হয়।যেমন দশ মিনিট দড়ির লাফে প্রায় ১০০ ক্যালোরি ক্ষয় হতে পারে।
এরোবিক ব্যায়াম:
শারিরীক যে ব্যায়ামের ফলে শরীরের ঘাম হয় এবং অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায় এরকম ব্যায়ামকে এরোবিক ব্যায়াম বলে। ঘরে বসেই করা যেতে পারে ড্যান্সিং,জুম্বা,ইনডোর সাইক্লিনিং বা ট্রেড মিলে ২০- ৩০ মিনিটের এরোবিক ব্যায়াম।
বয়স্কদের জন্য ব্যায়াম:
করোনা ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের উপরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।তাই নিয়মিত গরম পানি দিয়ে গার্গেল করার সাথে সাথে ব্রিদিং ব্যায়াম করতে হবে।
ব্রিদিং ব্যায়াম:
প্রথমে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ুন।একটি হাত পেটের উপর রাখুন। নাক দিয়ে শ্বাস নিন,লক্ষ্য করুন পেট উপরের দিকে ফুলে উঠেছে।দশ সেকেন্ড ধরে রাখুন।এবার ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে দশবার রিপিট করুন, দিনে দুই বেলা।
কপালভাতি:
এটিও ব্রিদিং ব্যায়ামের একটি ধরন।বসে ছোট ছোট শ্বাস নিন,কিন্তু জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ুন।এবার নাকের এক পাশ বন্ধ করে, অন্য পাশ থেকে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়ুন।একই ভাবে অন্য পাশের নাকের ছিদ্র বন্ধ করে আরেক পাশ দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস ছাড়তে হবে।দশ থেকে বিশ বার রিপিট করুন দিনে দুবেলা।
স্ট্রেচিং:
সকাল বিকাল দুবেলা স্ট্রেচিং করতে পারেন।শরীরের যেকোনো ধরনের টানকে স্ট্রেচিং বলে।যেমন,বসে ডান হাত দিয়ে মাথার উপর থেকে বাম দিকের কান পর্যন্ত ধরুন।এবার ঘাড় কান করুন,দেখবেন বাম দিকের ঘাড়ে টান পড়ছে।এটাই স্ট্রেচিং, দশ সেকেন্ড ধরে রেখে ছেড়ে দিন।একই ভাবে বাম হাত দিয়ে ডান দিকে করুন।(চিত্র)এভাবে শরীরের সমস্হ অংশে স্ট্রেচিং করা যায়।সহজ কথায়,স্কুলে করা পিটি গুলো দিনে দুবেলা করতে পারেন।
শিশুদের জন্য ব্যায়াম:
এই সময়টা শিশুদের ব্যায়াম করা খুবই দরকার।কারন লম্বা একটা ছুটিতে খাওয়া,পড়া আর বসে সিনেমা বা গ্যাজেটে থাকার কারনে বাচ্চাদের মুটিয়ে যাবার প্রবনতা দেখা যাবে।বাইরে খেলতে না পারার কারনে অস্হিরতা বাড়বে এবং কাজে মনোযোগ ব্যহত হবে।তাই শিশুদের জন্য খেলার ছলে ক্যালোরি ক্ষয় করতে হবে।
যেমন বারান্দায় খেলতে পারে টেবিল টেনিস।এতে এক ঘন্টা খেললে প্রায় ২০৪ ক্যালোরি খরচ হয়।একই ভাবে ঘরের মেঝেতে দাগ টেনে কুতকুত বা হসপস খেলতে পারে।প্রায় পনের মিনিট কুতকুত খেলায় ৬৮ক্যালোরি ক্ষয় হয়।মাত্র পনের মিনিট দড়ির লাফে প্রায় ১১৯ক্যালোরি ক্ষয় হতে পারে।শিশুদের জন্য মিউজিক ছেড়ে ড্যান্স বা নাচও হতে পারে আনন্দদায়ক ব্যায়াম।
হৃদরোগীদের জন্য ব্যায়াম:
আজকাল ৩৫ থেকে ৫৫বছরের লোকজনের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে কার্ডিয়াক ব্যায়াম বা এরোবিক ব্যায়াম করা জরুরী।গবেষনায় প্রমানিত দিনে ৩০থেকে ৫০মিনিট নিয়মিত কার্ডিয়াক ব্যায়াম করলে রক্তচাপ,রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়,এবং এইচ ডিএল যাকে ভালো কোলেস্ট্রল বলে তার মাত্রা বেড়ে যায়।
পাঁচ রকমের এরোবিক ব্যায়াম মূলত কার্ডিয়াক বা হৃদ মাংশপেশিকে শক্তিশালী করে। যেমন,হাঁটা,সাইক্লিং,সিঁড়ি ওঠানামা,সাঁতার কাটা এবং এরোবিক নাচ বা জগিং।এই সময় বাড়িতে বেছে নিকে পারেন জগিং বা ইনডোর সাইক্লিং
যে কোনো একটি ব্যায়ামকে বেছে নিতে পারেন,তবে সপ্তাহে পাঁচদিন ত্রিশ মিনিট করে পাঁচ ধরনের ব্যায়াম বেশি কার্যকর এবং এক ঘেয়েমি দূর করে।
কার্ডিয়াক ব্যায়াম শুরু করার আগে শরীর উষ্নকরন বা ওর্য়ামআপ এবং ব্যাযাম শেষে শীতলীকরণ বা কুল ডাউন করতে হবে।উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যদি জগিং করতে চান,তাহলে প্রথম পাঁচ মিনিট ধীরে ধীরে ডান বাম দিয়ে শুরু করুন।তারপর খুব দ্রুত বিশ মিনিট জগিং করুন।এরপর পাঁচ মিনিট শুয়ে রিলাক্স করুন।ব্যায়াম করার সময় অবশ্যই আরামদায়ক কাপড় পরতে হবে,জগিং জুতা ব্যবহার করা দরকার।যাদের হৃদরোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্র ব্যায়ামের পূর্বে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া দরকার।হৃদরোগীরা বাড়িতে কম মাত্রার কার্ডিয়াক ব্যায়াম করতে পারে।
যাদের শারিরীক ব্যথা আছে তাদের যেকোনো ব্যায়াম করার আগে বিশেষজ্ঞের মতামত নেয়া উচিত।শরীরের কথা শুনতে হবে,অর্থাৎ নিজ নিজ শরীরের সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যায়াম করা উচিত।
লেখক: ফিজিক্যাল থেরাপিষ্টপিটিআরসি