নিউইয়র্ক: বাংলায় অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের শীর্ষ অনলাইন মিডিয়া খবর ডট কম’র বিশ বছর পর্দাপন উপলক্ষে তিন গুনী ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করেছে। যে তিনজন গুনী ব্যক্তি সম্মাননা পেলেন তারা হলেন বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও শিক্ষায় অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ, ভাষা ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য জার্মনা প্রবাসী সাংবাদিক নাজমুন নেসা পিয়ারি এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী। ২০২০ সালে বাংলা একাডেমি আয়োজিত গ্রন্থমেলায় ড. মুহাম্মদ সামাদ ও ড. নুরুন নবীর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ নেটওয়ার্ক (বিডিঅন) এর প্রতিষ্ঠাতা শিব্বীর আহমেদ এবং খবর ডট কমের পক্ষে নাজমুন নেসা পিয়ারি’র হাতে সম্মাননা তুলে দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকাশনা সংস্থা অনন্যার স্বত্তাধিকারী মনিরুল হক ।
উল্লেখ্য শিক্ষাবীদ কবি ড. মুহাম্মদ সামাদ ১৯৫৬ সালে জামালপুরে জন্মগ্রহন করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৯ সালে সমাজকর্ম শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ওয়াশিংটনস্থ সিএসডব্লিউই পরিচালিত ‘ক্যাথেরিন ক্যান্ডাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন’ এর ফেলো হিসেবে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মের উচ্চশিক্ষার উপর তুলনামূলক গবেষণা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক । ড. মুহাম্মদ সামাদ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মুহাম্মদ সামাদ কবি। তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হচ্ছে: আমার দু’চোখ জলে ভরে যায়, আজ শরতের আকাশে পূর্ণিমা, চলো, তুমুল বৃষ্টিতে ভিজি, পোড়াবে চন্দন কাঠ, আমি নই ইন্দ্রজিৎ মেঘের আড়ালে, একজন রাজনৈতিক নেতার মেনিফেস্টো, প্রেমের কবিতা, কবিতাসংগ্রহ ইত্যাদি। কাব্যক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি সৈয়দ মুজতবা আলী সাহিত্য পুরস্কার, কবি সুকান্ত সাহিত্য পুরস্কার, কবি জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার, কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার, ত্রিভূজ সাহিত্য পুরস্কার, কবি বিষ্ণু দে পুরস্কার সহ অনেক সম্মাননা লাভ করেন। তিনি জাতীয় কবিতা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠকদের অন্যতম এবং তিন মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য, নরওয়ে, সুইডেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনাম সফর করেন।
নাজমুন নেসা পিয়ারি একজন বাংলাদেশি লেখক, সাংবাদিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক। ভাষা ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। ২০১৬ সালে তিনি বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
পিয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করে সিদ্ধেশ্বরী কলেজে শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। পরে ইডেন মহিলা কলেজে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। ১৯৮০ সাল থেকে পত্রিকাতে নিয়মিত লেখালেখি শুরু করেন। পিয়ারী ১৯৭৬ সালে জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের বাংলা বিভাগে সাংবাদিক হিসেবে যোগদান করেন। তিন বছর বাংলা বিভাগে কাজ করার পর জার্মান ও ইংরেজি বিভাগেও কাজ করেন। ১৯৯০ সালে তিনি প্রথম বিদেশী হিসেবে ডয়েচে ভেলের মার্কেটিং এবং গণসংযোগ বিভাগের সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০৩ সাল এ বিভাগে কাজ করার পর বার্লিনে চলে যান। ২০০৫ সালে তার প্রথম অনুবাদ গ্রন্থ ‘পিয়ানো টিচার’ প্রকাশিত হয়। এর মূল রচয়িতা ছিলেন এলফ্রিডে জেলিনেকের লেখা। ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তিনি চারটি গ্রন্থ অনুবাদ করেছেন।
ব্যক্তি জীবনে তিনি ১৯৭১ সালে শহীদ কাদরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭৪ সালে ‘তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা’ কবিতাটি কাদরী তাকে উৎসর্গ করেন। কবিতাটি সে সময় জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পিয়ারী বর্তমানে জার্মানিতে বসবাস করেন।
ড. নুরুন নবী একজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ও লেখক। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির একজন রাজনীতিবীদ এবং নিউ জার্সির প্লেইন্সবোরো শহরের কাউন্সিলর। তিনি কোলগেটের পণ্য ‘কোলগেট টোটাল’-এর সহ-উদ্ভাবক এবং বুলেটস অব ৭১ – অ্য ফ্রিডম ফাইটার’স স্টোরি বইয়ের লেখক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনীর হয়ে নিপুণ সমরকৌশলের জন্য তাকে কাদেরিয়া বাহিনীর ‘দ্য ব্রেইন’ বলা হয়।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি তাকে ২০১৭ সালে সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করে। ভাষা ও সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করে। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
ড. নুরুন নবী ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৭৪ সালের ২৬ মে জিনাত নবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। জিনাতও একজন বিজ্ঞানী। এই দম্পতির দুই ছেলে রয়েছে। ১৯৯৩ সাল থেকে তিনি নিউজার্সি রাজ্যের প্লেইন্সবোরোর প্রিন্সটন ম্যানরে বসবাস করছেন। তিনি দাঁত পরিচর্যায় অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য গ্লোবাল টেকনোলজি অ্যাওয়ার্ড, সিক্স চেয়ারম্যানসের ‘ইউ ক্যান মেক অ্য ডিফারেন্স’ এবং ২০০৭ সালে নিউ জার্সির প্লেইন্সবোরো পৌরসভায় কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য তাকে পুরস্কার দেওয়া হয়।