রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার নাশকতা ও পিস্তল ছিনতাই মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং দলটির শীর্ষ নেতা মির্জা আব্বাসের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মামলার শুনানি চলাকালে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, দেশ থেকে বিএনপিকে শেষ করার একটা চেষ্টা চলছে। শুধু বিএনপিকে নয়, পুরো বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা চলছে।
বুধবার (১ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ মির্জা আব্বাসকে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
বিকেল ৩টার দিকে রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি শুরু হয়। প্রথমে মির্জা আব্বাসের আইনজীবীরা তার বসার অনুমতি চান। আদালত তা মঞ্জুর করেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, সমাবেশের নামে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে জানমালের ক্ষতি করেছে। কর্মীরা নেতাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। নেতাদের নির্দেশেই তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। আন্দোলন হতে হবে অসহিংস। বিশ্ব দেখেছে তারা কী করেছে। আন্দোলনের নামে তারা নৈরাজ্য চালিয়েছে, যা মেনে নেওয়া যায় না। রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থনা করছি।
মির্জা আব্বাসের আইনজীবী মহিউদ্দিন বলেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এমন কোনও কাজ তিনি করবেন, তা কেউ বিশ্বাস করবে না। আর মহাসমাবেশের সুষ্ঠু পরিবেশে কীভাবে সাউন্ড গ্রেনেড মেরেছে, তা বিশ্ব দেখেছে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। তার জামিনের প্রার্থনা করছি।
মোসলেহ উদ্দিন জসিম বলেন, প্ল্যান করে ঘটনা ঘটিয়ে মামলা করা হয়েছে। বাদী আসামিদের মা-বাবার নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে। আসামিকে জিজ্ঞাসা না করে বাদীকে জিজ্ঞাসা করলেও তো হয়। তাকে রিমান্ডে নেওয়ার কিছু নেই।
ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, তিনি একজন জাতীয় নেতা। দেশের ১০ জন রাজনীতিবিদের মধ্যে তিনি একজন। ওয়ার্ড কমিশনার থেকে রাজনীতি শুরু করে মেয়র, মন্ত্রী হয়েছেন। মির্জা আব্বাস একটা নাম। কারণ তিনি সারাজীবন ফেয়ার রাজনীতি করেছেন। আর মামলায় যে সময় দেখানো হয়েছে, তখন কোনও লোক সেখানে ছিল না। জীবন বাঁচাতে মির্জা আব্বাস সেখান থেকে চলে যান। আটক করতে মামলা দিতে হবে। তাই মামলা দিয়ে তাকে আটক করেছে। তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। সবকিছু খেতে পারেন না। রিমান্ডে নেওয়ার দরকার নেই। জামিন দিন। না হলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করুন। জামিন চাচ্ছি, দিলে ধন্যবাদ, না দিলে রিমান্ড বাতিল চাচ্ছি।
গোলাম মোস্তফা খান বলেন, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মত বিএনপি নেতাকর্মীদের নাম রেডি থাকে। কোনও ঘটনা ঘটলেই মামলা। আর ওই দিন তিনি পল্টন থানা এলাকায় ছিলেন। পল্টন থেকে দৌড়ে শাহজাহানপুর গিয়ে গাড়িতে আগুন দেওয়া সম্ভব না।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান মির্জা আব্বাস। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। পরে আদালত তাকে অনুমতি দেন। বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, আমি আগে কখনোই আদালতে কথা বলিনি। কথাবার্তা এলোমেলো হতে পারে। ছোট্ট একটা গল্প দিয়ে কথা শুরু করতে চাই। এক এলাকায় এক রাতে প্রাইমারি একজন শিক্ষক পুলিশের ভুলে গ্রেপ্তার হয়। সকালে পুলিশ ছেড়ে দেয়। এলাকার লোকজন তাকে জিজ্ঞাসা করে, কেন ছেড়ে দিল। তখন ওই শিক্ষক জানান, জেলখানায় একদিকে ছিল লোহা চোর, আরেকদিকে পাতিল চোর।
মির্জা আব্বাস বলেন, ৫০ বছর রাজনীতি করি। বিএনপি থেকে আমি তৈরি হয়েছি, না হয় বিএনপি আমার থেকে তৈরি। ৫০ বছর বহু মিছিল-মিটিং করেছি। অনেক সরকারের পতন ঘটিয়েছি। এত বছরে এমন মামলা হয়েছে কি না, আপনি জানেন কি না? এমন কোনও কাজ করিনি। এমন কোনও ঘটনা ঘটাইনি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিএনপিকে শেষ করার একটা চেষ্টা চলছে। শুধু বিএনপিকে নয়, পুরো বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করার চেষ্টা চলছে। একদিন বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করা হবে, অন্যদিন আওয়ামী লীগকেও নেতৃত্বশূন্য করা হবে। আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন, সিদ্ধান্ত আপনার।
এরপর আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এ আদেশের পর বিচারকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। পরে তাকে এজলাস থেকে নামিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।