বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে। লুটেরারা দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতাবলে, ক্ষমতাবানদের যোগসাজশে পৃথিবীর কয়েকটি দেশে পালিয়ে আশ্রয় নিয়ে সেখানকার কমিউনিটির সামাজিক, সাংস্কৃতিক এমনকি রাজনৈতিক অঙ্গনেও প্রভাব বিস্তার করে চলেছে।
ইদানীং বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এদের বিষয়ে বিস্তারিত খবর ছাপা হলে কানাডায় পালিয়ে আসা কতিপয় লুটেরার কথা জেনে প্রবাসী দেশপ্রেমিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা ব্যাপকভাবে এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
মানববন্ধনের মাধ্যমে শুরু হয়ে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে একটি সামাজিক আন্দোলন দানা বেঁধেছে। ক্রমে ক্রমে এই আন্দোলনের রূপরেখা স্থায়ী পরিকল্পনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মহলকে অবহিত করা হয়েছে। টরন্টোর এই আন্দোলনের ঢেউ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদেও আলোচিত হচ্ছে।
এবার ওন্টারিও প্রাদেশিক সংসদেও এই বিষয়ে আলোচনা উত্থাপিত হবে। এবং খতিয়ে দেখা হবে বিভিন্ন দেশ থেকে পালিয়ে লোপাটদের বিরুদ্ধে সুস্থ ও সৎ একটি সমাজ-রাষ্ট্রের করণীয় কি।
টরন্টোয় লুটেরা বিরোধী আন্দোলনের একজন কর্মী হিসেবে আমি সমাজের কিছু মানুষদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কথা শুনেছি। আন্দোলনের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাদের মত ও ভাবনা বিনিময় করেছি।
এ পর্যায়ে আমি আজ অন্টারিও আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব মুস্তাফা কামালের সঙ্গে কথা বলেছি। এখানে আমাদের কথোপকথনটি –
দেলওয়ার এলাহী -কেমন আছেন?
মুস্তাফা কামাল – ভালো আছি। আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে আছি।
দেলওয়ার এলাহী -আমাদের আন্দোলন মানে? এটা সবার আন্দোলন। আপনারও।
মুস্তাফা কামাল – তবু, আপনারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এই আন্দোলন করতে গিয়ে উকিল নোটিশ খেয়েছেন আপনারা।
দেলওয়ার এলাহী – আপনারা আছেন বলেই আমাদের তরুণ ভাইয়েরা, দেশপ্রেমিক বন্ধুরা এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা এগিয়ে এসেছেন। এদের সকলের আমিও একজন। আমরা কয়েকজন উকিল নোটিশ খেয়েছি ঠিক। কিন্তু এর জন্য আমাদের কেউ বাড়তি মনোযোগ আশা করি না, তেমনি অগ্রাধিকার পাবারও যোগ্য বিবেচনা করি না। তবে, উকিল নোটিশের কারণে আমাদের কেউই এই আন্দোলন থেকে এতোটুকুও সরে যাইনি। যাবো না।
মুস্তাফা কামাল – আমরা বিষয়টাকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। আমি এই বিষয়ে অটোয়ায় হাইকমিশনে রাজনৈতিক সচিবের সঙ্গে অফিসিয়ালি কথাও বলেছি।
দেলওয়ার এলাহী – কি বলেছেন, আমাদেরকে কি বলা যায়?
মুস্তাফা কামাল -অবশ্যই বলা যায়। দেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে আমাদের সহযোদ্ধা বন্ধুদের কীভাবে আমরা সাহায্য করতে পারি বা তাদের পাশে থাকতে পারি সেটাকেই আমি প্রাধান্য দিয়েছি। যেমন : এই আন্দোলন করতে আপনি সহ আমাদের অনেকেই উকিল নোটিশ খেয়েছেন। আমার জানামতে এই আন্দোলন ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আক্রমণ বা হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নয়। লুটেরা বা দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিদমন কমিশনের যে সব দলিললপত্র আছে তা আমাদেরকে দাখিল করতে হবে। আমি হাইকমিশনে এই বিষয়টার জন্য তাদের সাহায্য দাবী করেছি। তারা আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকায় এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার জন্য তাদের করণীয়টুকু তারা পালন করবেন। ইতোমধ্যেই ঢাকায় আমাদের প্রতিনিধি দুর্নীতিদমন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মহলে যোগাযোগ করেছেন।
দেলওয়ার এলাহী – আপনি কি মনে করেন না, এইসব লুটেরাদের অর্থ পাচারে সাহায্য করার জন্য আপনার দলের বা সরকারী মহলের রাঘববোয়ালদের যোগসাজশ থাকতে পারে?
মুস্তাফা কামাল -আমি স্বীকার করি বা নাই করি এতে কিছু যায় আসে না। আমাদের নেত্রী বলেছেন – লুটপাট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমাদের শক্তি সেখানেই। লুটেরাদের টাকা পাচারে দলের হোক বা সরকারের হোক আমাদের দাবী এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দল ভিন্ন হতে পারে। রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু দেশটা আমাদের সকলের। সকলে মিলে যুদ্ধ করেই আমরা দেশটা স্বাধীন করেছি।
দেলওয়ার এলাহী -যুদ্ধের কথা উঠলোই যখন- তাহলে বলুন আপনি কোথায় ট্রেনিং নিয়েছিলেন।
মুস্তাফা কামাল -আমি ছিলাম বিএলএফের সদস্য। আমাদের ট্রেনিং হয় দেরাদুনে। আমি যুদ্ধ করেছি যশোর এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলে।
দেলওয়ার এলাহী – টরন্টোর এই সামাজিক আন্দোলনের প্রতিটা বানববন্ধনে আপনাকে আমি দেখেছি। এখন বলুন আমাদের এই আন্দোলনের নেতিবাচক ও ইতিবাচক দিক কোনটি।
মুস্তাফা কামাল – নেতিবাচক দিক হলো – এই আন্দোলনের নামে অনেকেই ব্যক্তিগত ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে ঘোলাজলে মাছ শিকারের মতো পাইকারিভাবে ব্যক্তিবিশেষকে আক্রমণ করছে। কে কার সঙ্গে ছবি তুললো, কে আন্দোলনে সশরীরে উপস্থিত হলো এবং উপস্থিত হলোনা এই নিয়ে কথা বলতে। এরা কমিউনিটিতে বিভাজনের চেষ্টা করছে। এটি কাম্য নয়। এই আন্দোলন দেশের ব্যাংক লুটেরাদের বিরুদ্ধে একটি সর্বজনীন আন্দোলন। আর ইতিবাচক দিক হলো টরন্টোর এই সামাজিক আন্দোলনটা একটা দলমতের উর্ধ্বে উঠতে পেরেছে। কে কোন দল করেন আমরা এটা বিবেচনা না করে সবাই একসাথে দেশের একটি বিষয়ে কাজ করছি। এটা খুব বড় বিষয়। এবং এই বিষয়টা সারা বিশ্বে বাংলাদেশীদের কাছে উদাহরণীয় হয়ে থাকবে বলে আমি মন করি।
দেলওয়ার এলাহী -যদি দেখা যায় এইসব লুটেরাদের অর্থ পাচারে আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা-মন্ত্রীরা জড়িত আছেন, তখনও কি এই আন্দোলনে আপনারা ভূমিকা রাখতে পারবেন?
মুস্তাফা কামাল -দেখুন, দেশটা শুধু আওয়ামী লীগের নেতা বা মন্ত্রীদের নয়। দেশটা সবার। আমরা যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছি। অর্থ পাচারে বা দুর্নীতিতে যে কেউ জড়িত থাকলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবোই। আমাদের নেত্রী বলেছেন – লুটেরা ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমরা এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি আমাদের নেত্রী সেটা প্রমাণ করবেন। আমাদের করণীয় হলো – এই আন্দোলনকে সঠিকভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
দেলওয়ার এলাহী – আমরা এই আন্দোলনের জন্য রাস্তায় নেমেছি।রাস্তায় থাকবো। কোন উকিল নোটিশ বা জেল হাজতের ভয় দেখিয়ে অন্তত আমাকে কেউ দমাতে পারবে না। আশা করি আপনারা পাশে থাকবেন। আজকের মতো এই পর্যন্তই থাক আমাদের কথা জনাব মুস্তাফা কামাল। সময় দিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
মুস্তাফা কামাল – আপনাকেও ধন্যবাদ দেলওয়ার এলাহী। আসুন, সবাই মিলে আমাদের দেশটার পাশে দাঁড়াই।