চার মাস আগে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে পাঁচ মাস বয়সী এক শিশুকে নিয়ে আসে তার বাবা-মা। শিশুটি ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি’ (এসএমএ) নামক রোগে আক্রান্ত।
চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগটি বিরল, ব্যয়বহুল এবং এই রোগে চিকিৎসা না পেলে দুই বছরের মধ্যে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। শিশু হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাওলী সরকার বর্তমানে শিশুটির চিকিৎসা করছেন।
জানা যায়, জেনেটিক টেস্টের মাধ্যমে শিশুটির এই রোগ ধরা পড়ে আজ থেকে চার মাস আগে। শাওলী সরকার জানান, বর্তমানে শিশুটি ভালো আছে। যদিও শিশুটিকে সুস্থ থাকার জন্য আজীবন ওষুধ খেতে হবে। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল বলেও জানান তিনি। চিকিৎসকের দাবি, বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই রোগের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
শিশুটির বড় বোনও একই রোগের লক্ষণ নিয়ে ৪ মাস ২৭ দিন বয়সে শিশু হাসপাতালেই মারা যায় বলে জানান ডা. শাওলী সরকার। সেসময় ৪ মাস বয়সী শিশুটির নিউমোনিয়া হলে তাকে এই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। আইসিইউতে থাকাবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। তখনও দেশে জেনেটিক টেস্টের মাধ্যমে এই রোগ শনাক্ত করার কোনো উপায় ছিল না।
এই রোগের লক্ষণ কী বা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়? এমন প্রশ্নে ডা. শাওলী সরকার বলেন, ‘এ রোগে সাধারণত শিশুদের স্পাইনাল কর্ডের নার্ভগুলো ক্রমান্বয়ে শুকিয়ে বা মারা যেতে থাকে। যেসব নার্ভ মাংসপেশী নিয়ন্ত্রণ করে, সেসব নার্ভ শুকিয়ে যেতে শুরু করলে স্নায়ুকোষ ধ্বংস হতে থাকে। এর চারটা টাইপ আছে বলেও জানান এই চিকিৎসক। এর মধ্যে টাইপ ‘ওয়ান’ সবচেয়ে মারাত্মক। এ অবস্থায় রোগী বসতে পারে না, হাত-পা নাড়াতে পারে না। এদের শরীর হয়ে পড়ে তুলার মতো নরম। যদিও এসব রোগীর চোখে-মুখে অত্যন্ত ব্রাইটনেস লক্ষ্য করা যায়। জন্মের এক থেকে দুই মাসের মধ্যে শিশুর শরীরে এর লক্ষণ ফুটে ওঠে।’
‘রিসদিপ্লাম’ খাবারের ওষুধ ছাড়াও দুটি উপায়ে এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা হয়। তার একটি হলো জিন থেরাপি। এটি এখনও আমাদের দেশে শুরু হয়নি। তবে দেশে দু’তিনটি প্রতিষ্ঠান জিন থেরাপি চালু করার ব্যাপারে কাজ করছে বলে জানান ডা. শাওলী।
স্মৃতি থেকে শাওলী বলেন, এর আগে তার এক নারী রোগী ছিলেন। যাদের পরপর চারটি সন্তান ‘স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি’ রোগে মারা যান। উপসর্গ দেখে রোগটি আন্দাজ করা গেলেও এর চিকিৎসা করা তখন সম্ভব হয়নি। খুব সহসাই বাংলাদেশে জিন থেরাপি শুরু হলে এই রোগে মৃত্যহার কমে যাবে বলেও আশাবাদী এই চিকিৎসক। পাশাপাশি তিনি বলেন, সন্তান ধারণের আগে বাবা-মা দুজনের জিন থেরাপি করা হলে তাদের দেহে এই রোগের লক্ষণ আছে কিনা জানা যাবে। বাবা-মায়ের বা যে কোনো একজনের দেহে উপসর্গ পাওয়া গেলে তাদের সন্তানও এতে আক্রান্ত হবেন- এটা নিশ্চিত। তাই, তারা পজিটিভ হলে তখন সিদ্ধান্ত নেবেন- সন্তান নেবেন কিনা!
দেশের দুটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিকে বর্তমানে জেনেটিক ডায়াগনসিস হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে অধ্যাপক শাওলী আশাবাদী সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে আরও কয়েকটি হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জেনেটিক ডায়াগনসিস চালু হবে। তখন বাবা-মা নিজেদের পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেবেন। তাহলেই আগামীতে এই রোগ থেকে শিশুরা মুক্ত থাকবে।