প্রতিদিন ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীসহ দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫০টিতে ডেঙ্গুরোগীর দেখা মিলেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু এখন আশঙ্কাজনক হারে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, এর চিকিৎসারও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালে সিটের অভাব হবে না। কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না।
বুধবার (২ নভেম্বর) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্টানিং এবং প্রতিরোধ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।
সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগীদের জন্য পর্যাপ্ত সিটের ব্যবস্থা রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রয়োজন হলে আরও সিট বাড়ানো হবে। তবে হাসপাতালে সিট বাড়িয়ে বা কেবল চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব নয়। এজন্য সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আরও জোরালোভাবে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও আরও বেশি সচেতন ও দায়িত্ববান হতে হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থা ও সচেতনতার অভাবে দুরারোগ্য ব্যাধি বাড়ছে। ক্যান্সারের বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেক বেশি সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
দেশে নারীদের স্তন ক্যান্সারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রায় ১৩ হাজার নারী প্রতিবছর স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার নারী মারা যাচ্ছেন। জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন ৮ হাজার নারী এবং মারা যাচ্ছেন ৫ হাজার। এ ছাড়াও পরীক্ষা না করার কারণে শনাক্তের বাইরে থেকে যাচ্ছেন অনেক নারী।
দেশে প্রতি বছর ক্যান্সারে এক লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যদিকে প্রতিবছর দেড় লাখ মানুষ নতুন করে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বাংলাদেশে ১৫ থেকে ১৮ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গত তিন বছরে করোনায় যে পরিমাণ মৃত্যু হয়নি, এক বছরে ক্যান্সারে তার চেয়ে তিনগুণ বেশি মানুষ মারা গেছেন। সুতরাং ক্যান্সারের বিষয়ে আমাদের সবাইকে আরও বেশি মনোযোগী এবং সতর্ক হতে হবে।
জাহিদ মালিক আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ আমরা স্বাস্থ্যখাতের সকলে ক্যান্সারের স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে জোর দিয়েছি। স্ক্রিনিংয়ের জন্য সারাদেশে ৫৭০টি সেন্টার করা হয়েছে। যার মাধ্যমে ক্যান্সারের প্রাথমিক স্ক্রিনিং করা হয়। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে পজিটিভ রোগীদের জন্য ৪৩টি কল কলোসকপি সেন্টার করা হয়েছে। আমাদের পরিকল্পনা এবং নির্দেশনা রয়েছে ৫০০টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ডাটা ট্র্যাকিং সেন্টার করার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্কিনিংয়ের পরের ধাপ হলো চিকিৎসা। দেশে এখনও ক্যান্সারের চিকিৎসা ব্যবস্থা সেভাবে উন্নত হয়নি। যার কারণে অনেকে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি, ৮টি বিভাগীয় হাসপাতালে আটটি ক্যান্সার সেন্টার করার। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে, এই রোগ থেকে শতভাগ সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং পর্যায়ক্রমে প্রতিটি জেলায় মেমোগ্রাফির মেশিন দেবো। সেখানে স্কিনিংয়ের ব্যবস্থা আরও ভালো হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অতিরিক্ত সচিব রাশেদা আকতার, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ কে এম আমিরুল মোরশেদ প্রমুখ।