যুদ্ধসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরতে সরকার মাঠে নেমেছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জনগণকে ধৈর্য্য ধরে আস্থা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসে পুরো টিম নিয়ে নেমেছেন জনগণের সঙ্কট লাঘব করতে। তিনি গোটা মন্ত্রিসভাকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে ডাক দিয়েছেন।’
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘বিএনপি-জামায়াতের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শান্তি ও গণতন্ত্র সমাবেশ’-এ এসব কথা বলেন তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এ সমাবেশের আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে ভালোবাসে। তার মতো জনবান্ধব প্রধানমন্ত্রী আর আসেনি। আপনারা আস্থা হারাবেন না। আজকে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা, এমনকি লোহিত সাগরেও যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধের প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আমাদের বেশি টাকা দিয়ে আমদানি করতে হয়, বিক্রি করতে হয় কম দামে। ধৈর্য্যহারা হবেন না। শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখুন।’
‘দ্রব্যমূল্য কমে যাবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় বসে পুরো টিম নিয়ে নেমে গেছেন জনগণের সঙ্কট লাঘব করতে। তিনি গোটা মন্ত্রিসভাকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে ডাক দিয়েছেন। তার মন্ত্রিসভার কেউ বসে নেই। সবাই কাজে নেমেছে। ইনশাআল্লাহ, এভাবে চললে আমরা অচিরেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রমজানে মানুষের কষ্ট জানি। আমরা জনগণের সরকার। শেখ হাসিনা জনগণের প্রধানমন্ত্রী। আপনাদের সঙ্কট তার হৃদয়ে লাগে। তিনি আঘাত পান। রাত ৩টায় ফোন করে পাওয়া যায়। এমন প্রধানমন্ত্রী পাবেন আর কোথাও? কোন দেশে আছে? দুপুরের খাবার রাতে খান। কোনো কোনো দিন খানও না। আমি এটা বাড়িয়ে বলছি না, সত্য কথা বলছি। এমন প্রধানমন্ত্রীয় পাওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভাগ্যবান। আস্থা রাখুন, আস্থা হারাবেন না। বিএনপির কথায় কান দেবেন না। এরা ভুয়া, এদের সকল কথা আজকে ভুয়ায় পরিণত হয়েছে।’
‘বিএনপি বিদেশিদের ডাকে, এদের দেশপ্রেম নেই’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে বিদেশিদের ডেকে আনে। এদের কোনো দেশপ্রেমে নেই। যদি ভালোবাসা থাকত, তাহলে দেশের জনগণ তাদেরকে নিয়ে সমাধান করত।’
‘এরা আটলান্টিকের ওপার থেকে নিষেধাজ্ঞা আনতে চায়, ভিসানীতি আনতে চায়। শেখ হাসিনা আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না। তিনি এ দেশের মানুষ ছাড়া কাউকে পরোয়া করেন না।‘
বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিদেশিদের ভয় দেখান? ৪১.৮ শতাংশ ভোটারের ভোটে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়েছে। এই সরকার জনগণের সরকার, নির্বাচিত সরকার। যেখানে ২৮ দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। চীন বা রাশিয়া আমাদের বন্ধু হতে পারে। আমাদের সরকার কোনো বিদেশি শক্তি বসায়নি। বাংলাদেশের জনগণের ভোটে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়েছে।’
‘কালো পতাকা মানে, শোক মিছিল’
বিএনপির কালো পতাকা মিছিলকে শোক মিছিল অভিহিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মাঠে নেমেছেন। কালো পতাকা মিছিল। কালো পতাকা মানে হচ্ছে, শোক মিছিল। এ আরেক ভুয়া। আন্দোলনের নামে ভুয়া। ৩০ তারিখে (জানুয়ারি) আবার ডাকছে। সেটাও ভুয়া। লোকজন নেই, জনগণ নেই, নেতাকর্মীরা হতাশ।’
‘নেতাকর্মীদের লন্ডনের তারেক জিয়ার প্রতি কোনো আস্থা নেই। নেতাকর্মীরা এখন আর তারেকের ফরমায়েশে কান দেয় না।’
‘এখন খেলা হবে রাজনীতির’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খেলা একটা হয়ে গেছে। নির্বাচনের খেলা শেষ পাঁচ বছরের জন্য। এখন খেলা হবে রাজনীতির। এখন খেলা হবে দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, হরতাল, আগুনসন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ৩০ তারিখ আবার কালো পতাকা মিছিল। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহানগর, জেলা, সকল উপজেলায় লাল-সবুজ পতাকা হাতে গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবেন।’
সারা দেশে দলীয় নেতাকর্মীদের পাহারায় থাকার আহ্বার জানিয়ে তিনি বলেন, এই অপশক্তিকে আমরা আর বাড়তে দিতে পারি না। তাদের রুখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিএনপি আন্দোলন করে ভুয়া হয়ে গেছে, মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা আবার মাঠে নেমেছে। ভুয়া তো তারা চিরজীবন। আন্দোলন করে ভুয়া হয়ে গেছে। এই আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেয় না। অবরোধ ডাকে, কেউ শুনে না; হরতাল ডাকে, রাস্তায় যানজট। বিএনপির আন্দোলন-অবরোধ-হরতাল, এক দফা ভুয়া। বিএনপি মানেই হচ্ছে ভুয়া।
‘কোথায় ছিলেন, এতদিন কোথায় ছিলেন গয়েশ্বর বাবু? তিনি আজ (শনিবার) পল্টনে হাজির হয়েছেন। বলেছিলেন, অলিগলি খুঁজে পাব না, আমরা পালিয়ে যাব। কে পালিয়েছে? ডিবি অফিসে কোরাল মাছ খেয়ে পালিয়েছিল কারা? গয়েশ্বর বাবু অলিগলি খুঁজে পাননি।’
তিনি বলেন, ‘দেখতে দেখতে ১৫ বছর। সামনে আরও পাঁচ বছর। মানুষ বাঁচে কয় বছর! কবে হবে আন্দোলন? এই বছর না ওই বছর? রোজার পর না কোরবানের পর? কবে হবে আন্দোলন? কোন বছর?’
এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অতীতের ভুল সংশোধন করে মানুষের কাছে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান দলের সাধারণ সম্পাদক।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপত্বিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সধারণ মো. হুমায়ুন কবির।
এছাড়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইসহাক আলী খান পান্না, সাইফুজ্জামান শিখর, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল, কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি, যুব মহিলা লীগ সভাপতি ডেইজী সারোয়ার, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলি, মৎসজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান প্রমুখও বক্তব রাখেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাইফুন্নবী চৌধুরী সাগর।