কৌশিক মজুমদার শুভ
১
দুপুরে ঝিঁঝিঁদের একঘেয়ে কোরাসের ভিতর যখন অবসর আহ্লাদে বালিশে এলিয়ে থাকে শরীর- কুকুর তার লম্বাটে ছায়ার পাশে বসে দুপুরের ভাপে থলথলে জিভ বের করে ঝিমায়- ট্রাক্টরের মতো(কিঞ্চিৎ কম)শব্দ করা সাইকেলের ক্যারিয়ারে, বাদামী জংধরা, বয়স্ক মেশিন নিয়ে গলিতে গলিতে চেঁচায় জাফর, ‘ধার দেবেন, ধার- কেঁচি, দাও, বটি, লোহার জিনিসে ধার দি’। হয়তো এই বেয়াক্কল চিৎকারে কারো মধ্যাহ্নের হাইবারনেশন প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে, বিছানায় পাশ ফিরতে ফিরতে ঘুমারু গালি দিয়ে পুনরায় বালিশে মুখ গোঁজে। এসব ভালোই জানে জাফর, তবু কিছু যায় আসে না- স্টেইনলেস স্টিলের উন্নত মরিচাহীন শরীরের মতো তার গতরেও লজ্জার রেশ লাগে না। কালো লিকলিকে শরীরে রোদ্দুরের ঝলসানো কায়া ঝিলিক দিয়ে ওঠে, ধার দেয়া যন্ত্র যেমন সদ্য ধারের পরে ঝলসে ওঠে রোদ্দুরে- যখন হাতে নিয়ে বুড়োআঙুলে পরখে দেখতে দেখতে অনেকবার সে কেটে ফেলেছে আঙুলের কড়া পড়া ডগা- কাটা দাগের পাশে বিন্দু বিন্দু খুন জমা হলে জিহ্বায় সরীসৃপের মতো ছিপ করে টেনে নিয়ে টক-নোনতা স্বাদ পেয়েছে আরকে।
প্রযুক্তির দেধারছে বিপ্লবে, উৎপাদন খরচ কমে কমে শ্রমসস্তা পৃথিবীতে রিসাইক্লিং শব্দ বিলুপ্ত হবার সন্ধিক্ষণ এসে গেছে। লোহা, ইস্পাতের সস্তা সব যন্ত্রপাতি এখন আর লোকে ধার দিয়ে ব্যবহারের মতো দূরোচিন্তা করে না। তাই প্রকৃতার্থে অলস এই দুপুরবেলা, স্বরযন্ত্রে উচ্চগ্রাম পেরেশানি তোলা আর বাতাসযোগে লোকের কানে পৌঁছে আহ্লাদি অবসরে ব্যাঘাত করা লাভজনক হয় না। তবু আড়ালে আবডালে গুটিকতেক গ্রাহক থেকে যায়, প্রত্যেক বিলুপ্তপ্রায় কারিগরেরই থাকে- কেউ শখে, কেউ তাগিদে। জাফরেরও তাই। তবু এই গুটিকয়েকের কাজই সে বেশ আমেজে করে। ধার দেবার সময় মোটা কাঁচের চশমার ফ্রেমটা নাকের উপর আঙুল দিয়ে এমনভাবে উর্ধ্বমুখে ঠেলে তাকায় যেভাবে করে পশ্চিমাশিক্ষিত কোনো ডাক্তার রোগীর চোখে রক্তশূন্যতা দেখেন- তারপর প্যাডেল ঘোরাতে ঘোরাতে মেশিনের ঘুর্ণায়মান চাকতিতে ঠেসে ধরে জিনিসটার শরীর- লোহার স্বভাবে পর্দাচেঁরা শব্দ বের হয়ে আসে। অনেকেই কান চাপে, ফুলকিরা শব্দের সাথে উত্তপ্ত খইয়ের মতো সোল্লাসে ছিটকে পড়ে। জাফরের রেটিনার কোষগুলো তেঁতেঁ ওঠে; বলে, ‘এর চেয়ে ভালো কিছু হয় না, জীবনে- আরো দা-বটি, আরো ধার, আরো ফুলকি- এর চেয়ে ভালো হয় না কিছুই’- তাই মজুরি নিয়ে বিশেষ হাঁকাহাঁকি করে না সে।
২
‘বাড়িত চাউল নাই, এইবেলা না আনলে রাইতে চুলায় পাতিল উঠবো না’, দুপুরের ভাত খেতে খেতে বউয়ের জবরদস্ত গলায় ঠ্যালা শোনে জাফর। গোগ্রাসে যতদূর পারে গিলে নিতে থাকে ভাতগুলো। ‘এফির কতা কানে নেও আর ওইফির বাইর করি দেও নি?’,বউ চেঁচায়।। কথা কানে নিলে বের করে দেবার প্রশ্ন আসে, বউয়ের কথা সে কানেই তোলে না, তাই বের করে দেবার দুশ্চিন্তা করতে হয় না। দুনিয়ায় হেসে-খেলে বাঁচতে গেলে সব কথা কানে নিলে চলে না, কিছু কথা বাতাসেই তৈরি হয় বাতাসেই হারিয়ে যাবার জন্য, মানুষের কানে পৌঁছাবার জন্য না। এইমুহূর্তে জাফর লক্ষ্য উচ্চমার্গীয় ফিলোসোফিতে না, যতোখানি গিলে নেয়া যায়- কারন পরিবেশ বেশিক্ষণ উপযুক্ত থাকবে না সে জানে- বউয়ের মেজাজ গরম হয়ে উঠেছে, পরিবেশেও সেই উত্তাপ আঁচ করা যায়- যদিও থার্মাল কন্ডাক্টর হিসাবে বাতাস সুখ্যাত না।
আজকে আর পেট ভর্তি হয় না, পরিবেশের সাথে মারসুপিয়ালদের মতো অভিযোজিত হয়ে যাচ্ছে জাফর- বউয়ের খিস্তি ও চিৎকার ইদানীং তেমন গতরে লাগে না- যতক্ষণে বউ বুঝতে পারে, ততক্ষণে সামনের গামলায় সকালের অবশেষ পান্তাটুকু কেড়ে নিয়ে যায়। ‘থাউক আর গেলা লাগবে না’, বউ হ্যাজায়। সামনের খাবার এইভাবে কেড়ে নেয়ায় গায়ের রক্ত চাড়া দিয়ে ওঠে জাফরের, কিছু বলে না তবুও। আসলে পুরুষ হিসাবে সে নির্ক্যাঁচাল ধরনের, বউয়ের সাথে দুইবেলা কাইজ্জা করার স্বভাব তার না, বরঞ্চ বউকে কতক সমঝে চলে সে- পর পর তিনটা বাচ্চা দিয়ে চেহারার সাথে রুক্ষ হয়ে উঠেছে বউয়ের মেজাজটাও- আগের দুটি গত হয়েছে, এখন একমাত্র কোলেরটাই সম্বল। মাঝেসাজে মেজাজটা বিগড়ে ওঠে জাফরেরও, ইচ্ছা করে দুই ঘা বসিয়ে দিতে, পরক্ষণেই নিজেকে সামলায়- এই হাড্ডিসার গতরে তার লোহার, ধার দেয়া হাতের দুই ঘা নিতে পারবে না শরীর, সব জিনিস তো লোহার জিনিসের মতো টেকসই না, কতক স্টেইনলেস স্টিলও হয়। গামছাখান যেটা লেছে বসেছিলো, ঝাড়া দিয়ে ঘাড়ে ফেলে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে পরে, এক চৌকস লাথিতে সাইকেলের স্ট্যান্ডটা ফেলে দিয়ে এগোতে থাকে, সাইকেলের ঘ্যাড়ঘ্যাড় শব্দের সাথে কানে আসে বউয়ের হুঁশিয়ারি। দুগ্ধপোষ্য বাচ্চার মুখে নিরস মাইটা ধরিয়ে দিয়ে চুপ করিয়ে পেছন থেকে চেঁচায় ‘আইজ বাজার না আইলে রাইতে গেলা হবে না কইলাম’। মোড় ঘুরেই সাইকেল এক হাতে একটু ত্বরিত করে সুপরিচিত কায়দায় প্যাডেলে পা দিয়ে চড়ে বসে জাফর- পেছনে ক্যারিয়ারে তার সাথে চলে বৃদ্ধ, জীর্ণ মেশিন- তবে জীবন্ত; ধারকল- বউয়ের শত খ্যাঁচখ্যাঁচানির পরেও যার মায়া ছাড়েনি; পারেনি।
কৈশোর, যৌবন দুইজীবন সে কাটিয়েছে ধার দিয়ে, অন্য কাজে পারদর্শিতা তার নাম মাত্র। অনেকবার মেশিনটা বেচে দিতে চেয়েছে, অন্য ধান্দায় যাবার- মাসখানেক আগে দোকানে কাজও নিয়েছিলো। বাজারের মুদিখানায়- মাস যেতে না যেতেই ছেড়েছে। মেশিনের চাকতির উপর লোহা ঘষার শব্দ না শুনলে অস্থির লাগে তার, অন্যমনস্ক হয়ে ভাবে চাকতির চারদিকে ফুলকির উত্তপ্ত ছিটকে যাওয়া, ফ্যালফ্যাল করে সে তাকিয়ে থেকেছে কাস্টমারের দিকে, মালিকের কুৎসিত সম্বোধনের পরে সম্বিত ফেরে। এসব কাজ তার জন্যে না, তার দরকার স্বাধীন পেশা- ধাতব ফুলকিরা যেমন উত্তপ্ত স্বাধীন হয়ে উত্তাপে ভুট্টার মতো ছিটকে পড়ে; তাতে দুপুরের বেরসিক রোদ্দুর তার শরীরে ফাল দিয়ে যায়, যাক!
দুপুরের সৌম্য আকাশে অবিরত দুই হাত খুলে হাওয়ার সার্কাসে চরকির মতো পাক দিচ্ছে একটা আয়েশি চিল, দোতলার বারান্দা থেকে মাথার উপর চিলের বিস্তর স্বাধীন জীবনের দিকে চেয়ে আছে কেউ- একটার পর আরেকটা গলিতে ঢুঁ মারে জাফর, প্রায় প্রতিটায় হাঁ করে জিভ নাড়ে চামড়ায় আবৃত কতগুলো রুগ্ন কুকুরের কঙ্কাল, জাফরকে দেখে দুপুরের রোদে খর্বকায় ছায়া নিয়ে উঠে দাঁড়ায়- স্বভাবসিদ্ধ ঢঙে দূর থেকে নাক তাক করে কিছু শোঁকে, তারপর কিছুদুর এগিয়ে দিয়ে পিছু ছাড়ে- স্তব্ধ দুপুরের নিরব পুকুরে শব্দের অনর্থক ঢিল ছুঁড়ে কোলাহল তোলে না তারা, গলিগুলো আজ বড়োই সুনসান, যেন লোকগুলো সব উবে গ্যাছে টার্বাইন বাষ্পের মতো, যেন শহরে চলছে কারফিউ।
সন্ধ্যার কোমল সুর ছিঁড়ে রাত্রির অস্থির চাঁদ আকাশ সফরে অনেকদূর চলেছে। ঝুপড়ির দুয়ার টেনে নিরবে, ভেঙে পড়া বিধ্বস্ত ঢেউয়ের মতো ঢোকে জাফর- চাচের আড় বেড়ার সাথে অসাবধানে আংটা দিয়ে ঝুলছে হারিকেন, যার কালিমাখা কাজল চিমনির গা ছুঁয়ে ছাইছাই ধোঁয়া বের হয়ে আসছে ভেন্টিলেটর দিয়ে; তেল ফুরিয়ে আসছে। সামনের একপায়া ইট দিয়ে খিচ দেয়া টেবিলের উপর একটা কোল্ড ড্রিংকসের বোতলের গলা সমান জলে সেঁটে আছে একটা রুগ্ন ভেঙে পড়া রজনীগন্ধার ডাঁটা- লেপা মাটিতে দুই পা সামনে মেলে দিয়ে টেবিলের ভাঙা পায়ায় ঠেস দিয়ে বসে আছে রহিমা, তার শুকনো স্তন মুখে দিয়ে নধর শিশু তৃপ্তিতে থিতু হয়ে আছে- এমন একটা পরিবেশের সিম্ফোনি ভেঙ্গে ধপ করে মেশিনটা কাঁচা ফ্লোরের উপর রাখে জাফর।
হাতে বাজারের ব্যাগ নেই, শুধু একটা পলিথিনে শুকনো কিছু ফ্যাকাশে চিঁড়া উঁকি দিচ্ছে, শ’দেড়শো গ্রাম হবে- সারাদিনের উপার্জনে এই হয়েছে- বাজারে ধারে পাওয়া যায়নি চাল। ধার জিনিসটা আছে, থাকে; সকলের জন্য নয়, যারা শোধ করতে পারে দুনিয়ায় ধার তাদের জন্যে বরাদ্দ থাকে। ‘আইছে! নবাবের পুত আইছে, হালার ব্যাডা’, বউয়ের গলায় ধার দেয়া ছুরির মতো তীক্ষ্ণ সুর বেজে ওঠে। বউ যে চটবে তা সে জানতো, কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি যে বিক্রিয়া শুরু হবে ভাবেনি। অন্তত সারাদিন ক্লান্তির পরে, অন্তত…। এতো গলার জোর বউ কোথায় পায় ভেবে পায় না জাফর, সারাদিন অনাহারে থাকার পর এতো তেজ! এ সেই ফেলে যাওয়া পান্তা, ঝাল মরিচের ঝাল, অনুচিত হয়েছে! আফসোস হয়। সারাদিন ব্যর্থতা আর সাইকেল প্যাডেল করে শরীর টনটন করে তার, পাশের পাটি লাছা বিছানায় গা এলিয়ে দিতে মন চায়- বউয়ের চিৎকার চ্যাঁচামেচি এড়িয়ে যেতে চায়, এই ব্যাপারে অথোরিটি আছে তার- তবু আজকে কোনো নিঞ্জা টেকনিক কাজ করছে না, বউ ওয়ার্মআপ ছাড়াই সরাসরি জ্বলে উঠেছে- চিঁড়ার পলিব্যাগটা টেবিলির উপর ফেলে বিছানার দিকে যাবে বউয়ের এক আচমকা কিল পড়ে পিঠে- খিস্তি ও চিৎকার কানের সীমানার বাইরে দিয়ে যাচ্ছে বুঝেই হয়তো এমন চড়াও হওয়া। বেশ অনাবশ্যক জোরে পড়েছে কিলটা, সারাদিন না খেয়ে কই পায় এতো জোর! মাংসছাড়া হাত বলেই হয়তো শক্ত মুগুরের মতো লাগে- এক ঝটকায় নাগালের মধ্যে পেয়ে বউকে জোর একটা ঠ্যালা লাগায় জাফর, যেন ইচ্ছা অনিচ্ছার বাইরে, অনাহারী পলকা শরীর টাল সামলাতে না পেরে ঝুলন্ত হ্যারিকেনের উপর পড়ে- তারপর মুহূর্তের উছিলায় কোথায় কি! হ্যারিকেন শরীর, শরীর হ্যারিকেন, লুটোপুটি, আগুন! শুকনো চাচের বেড়ায়, শরীরে! পাশে মেঝেতে শিশুর কান্না- লোকজন ছুটে আসে।
৩
মর্গের পাশের গলি দিয়ে হেঁটে যায় জাফর, রাত্রির নিবিড় নিথর শরীরের ভিতর আরো এক শরীর নিয়ে মর্গের ড্রয়ারে অনেকেই ঘুমিয়ে আছে; শান্তিতে? কোলাহলেও তাদের ঘুম ভাঙে না, অস্থিরতা গ্রাস করে না। এই বেশ ভালো আছে তারা- এইঘুম চেয়েছিলো নাকি! বহুকাল আকাশের লেন্স দিয়ে ফ্ল্যাশকৃত ঝলসানো রোদ্দুরে ভিজে ভিজে গড়ে ওঠা স্টেইনলেস শরীর জং ধরে থিতু হয়ে যাচ্ছে জাফরের, ভেঙে পড়ছে ক্রমশ পৃথিবীর প্রবল অত্যাচারে। আজ সকালে সাইকেলটা বেচে দিয়েছে, তাই দিয়ে চলছে হাসপাতালের খরচ। শরীরে জ্বর, পানিশূণ্যতা হোক অথবা দুইরাত না ঘুমিয়ে চোখ দুটো ভিতরে গর্তে ঢুকে গ্যাছে যেন- তবু বাইরে থেকে তাতে লাল রগড়ানো আভাস বোঝা যায়। ঘাড়ে একটা অস্বস্তি ভর করে আছে য্যানো- চিনচিন একটা ব্যাথা ঘাড় বেয়ে আড়াআড়ি দুই হাতের দিকে নেমে অস্থির করে ফ্যালে- ঘাড়ে মেশিনটা তবু বয়ে নিয়ে চলছে- মর্গের গলি, তারপর কাঁচা বাজার- যুতহীন তাঁবু দিয়ে ঢাকা দেয়া, প্যাক করা বন্ধ সবজির দোকানগুলো, বদ্ধ নালায় মশার লার্ভার কিলবিল উৎসব, ড্রেনে চিকার চুঁইচুঁই শব্দ, ডাস্টবিনে ঢুকে কুকুরের খাবারের তল্লাস- এইসব পাছে ফেলে সেই খোলা জায়গায়, যেখানে একটা বড়োসড়ো ডিবির পাশে একটা প্রাচীন গাছ বসে থাকে; কি দিন, কি রাত্তির পাহারা দেয়- তার পাশের নদীর ছুঁয়ে ওঠা হাওয়া যার পাতা ছুঁয়ে উড়ে যায়- সারস অথবা বকেদের মলে যার অর্ধেক শরীর সাদা হয়ে থাকে সেইখানে এসে ওঠে- কাঁধের মেশিনটা নামিয়ে রাখে- তারপর একটা বিড়ি ধরায়- বিড়ির পাছায় টান দিতে দিতে নির্লিপ্ত ঢঙে মেশিনের বৃদ্ধ শরীরটা সে পিতা বা প্র-পিতামহের শবের মতো হাতে তুলে ধরে, তারপর ছুঁড়ে দেয় নদীর মৃদু শব্দে ভেসে যাওয়া উদোম শরীরের ভিতর- একটা ক্ষণজীবী শব্দ করে সুচ্ছন্দ ঢেউ তুলে দিয়ে তক্ষণে ডুবে যায় মেশিন, এতোদিনের সম্বন্ধের দিকে একবারও ফিরে তাকাবার অবসর নেই যেন- কোন অতল তলে চলে যায়, সেইখানে কে আছে, কি আছে উপর থেকে কিছুই মালুম হয় না। হালকা হাওয়ার শরীর কেটে হাতে আধপোড়া বিড়ি ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে হেঁটে বেরিয়ে যায় জাফর- ঢিবির ঢালু পথে ক্রমশ তার শরীরটা আড়ালে চলে যেতে যেতে চৈত্রের জোছনায় ধার দেয়া ইস্পাতের মতো চকচক করে- কোথাও এক আহত সারস ডেকে ওঠে, হয়তো বৃদ্ধ প্রাচীন গাছটার কোনো ডালে।