বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরের দেশে জন্ম নেয়া এবং সেখানে বেড়ে ওঠা বাঙালী মা-বাবার সন্তান-
সন্ততিদের মাঝে বাংলাকে জিইয়ে রাখার আর বিদেশে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য্য ও মাধুর্য্য ছড়িয়ে এর
সাহিত্য ও সংস্কৃতির খবর প্রচারের উদ্দেশ্যে কানাডার প্রথম বাংলা বইয়ের দোকানের কর্ণধার
সাদী আহমেদ এর উদ্যোগে যে টরন্টো বাংলা বইমেলার শুরু হয়েছিলো তার ১৩তম বছরের মেলা
অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জুলাই মাসের ৬ ও ৭ তারিখে। টরন্টোর বাঙালী পাড়ার এটি পরিচিত ভেন্যু ৯ ডজের
লিজিয়ন হলে অনুষ্ঠিত ২ দিনের এই মেলায় ঢাকা থেকে আসা প্রকাশকরা টেবিল পেতে তাদের নতুন
বইয়ের নমুনা দেখিয়েছেন। মেলা উদ্বোধন করেছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবুল্লাহ
সিরাজী, প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.
মোহাম্মদ আবু হেনা মোস্তফা কামাল, বিশেষ অতিথি কবি আসাদ চৌধুরী। মেলায় অতিথি হিসেবে
এসেছিলেন কানাডার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জয়দেব সরকার ও অন্টারিও প্রদেশের
পার্লামেন্ট সদস্য বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ডলি বেগম।
নতুন বই এসেছিলো অনন্যা প্রকাশনীর, কথা প্রকাশের, সন্দেশ প্রকাশনীর, ও অন্বয় প্রকাশনীর ।
নিজেদের নতুন বই সাথে নিয়ে নিজেরাই বইমেলায় সশরীরে যোগ দিতে ঢাকা থেকে কোহিনুর কল্পনা
খান ও জাহানারা বুলা। নিজের নতুন প্রকাশিত বই নিয়ে বসেছিলেন কানাডাবাসী লেখক জসিম মল্লিক।
পাশের দেশ আমেরিকা থেকে এসেছিলেন প্রথম আলোর প্রতিনিধি ও লেখিকা শেলী জামান খান।
টরন্টো থেকে মেলায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন সারিয়া ও ইসলাম বিষয়ক গবেষক হাসান
মাহমুদ ও সংগঠক দেলোয়ার এলাহী, কবি ও সংগঠক মৌ মধুবন্তী, কবি ফেরদৌস নাহার ও কবি
মেহরাব রহমান।
উপরে উল্লেখিত অতিথিরা ছাড়াও মেলা জুড়ে, মঞ্চ জুড়ে বিভিন্ন আলোচলায় ও আবৃতিতে সরবে
উপস্থিত ছিলেন অনন্যা প্রকাশনীর মনিরুল হক, সন্দেশ প্রকাশনীর লুৎফর রহমান চৌধুরী, কবি
দিলারা হাফিজ, কবি হাসানাল আব্দুল্লাহ, লেখক শেলী জামান খান, লেখক হুমায়ুন কবীর ঢালী, অর্পি
আহমেদ ও কবি হাসানাত আব্দুল্লাহ।
বইমেলার প্রথমক্ষণে গলায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে অংশগ্রহণকারীরা ড্যানফোর্থ এভিন্যুর পেভমেন্ট
ধরে হেঁটে বইমেলা প্রাঙ্গনে পৌঁছান। ফিতা কেটে বইমেলার উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির
মহাপরিচালক কবি হাবুল্লাহ সিরাজী। এর পর দেখানো হয় রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী ও রবীন্দ্র গবেষক
ড. চঞ্চল খাঁন এর তৈরী প্রামাণ্য চিত্র “বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ”। দু’দিনের বইমেলায় সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেছেন কানাডা নিবাসী জনপ্রিয় শিল্পী রনি প্রেন্টিস রায়, শহিদ
খন্দকার টুকু, ফারহানা শান্তা ও শিখা রউফ। দু’দিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তবলায় সঙ্গত
করেছেন উজ্জ্বল সিনহা-রয় ও রনি পালমার, হারমোনিয়ামে ও কিবোর্ডে সহযোগিতা করেছেন সনাতন
গোস্বামী ও জাহিদ হোসেন। আরো গান গেয়েছেন নিশীথ জোনাকি প্রশান্তি, নার্গিস চৌধুরী, শিরিন
চৌধুরী, মুক্তি প্রসাদ ও মিথুন আহমেদ। নৃত্য পরিবেশন করেছেন সুকন্যা নৃত্যাঙ্গনের অরুণা
হায়দার ও তার স্কুল। একক নৃত্য পরিবেশন করেছেন নিলাদ্রী নিরঝরিণী কলতান, ডালিয়া আহমেদ ও
এলিনা মিতা।
এবারের এই বইমেলা তেরো বছর ধরে একনিষ্ঠভাবে চালিয়ে যাওয়া একটি প্রচেষ্টা। এবং এবারের
বইমেলায় একটা বিষয় অত্যন্ত স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়েছে – সেটা হলো বাংলাদেশ ও বাঙালী
সংস্কৃতির প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ ও তাদের অনন্য পরিবেশনা। সুকন্যা নৃত্যাঙ্গনের নাচের
দলের চমৎকার পরিবেশনা, বিপ্লব করে নৃত্যকলা কেন্দ্রের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশনা, এবং
মার্জিয়া হক এর পরিচালনায় ও মৌ মধুবন্তীর সঞ্চালনায় “যেমন খুশী সাজো’ পর্বে অংশগ্রহণকারী
ছোট ছোট সবাইয়ের মধ্যে যে নিপুণতা ও বাংলা সংস্কৃতির মাধুর্য্যের পরিস্ফুটন তা বইমেলার পেছনে
দেয়া সমস্ত শ্রমকে সার্থক করেছে।
এ বছরের বইমেলায় সবাইকে বাংলা বর্ণমালার ওপর সম্প্রতি নেয়া এক নতুন উদ্যোগের কথা জানান
হাসান মাহমুদ। তিনি রাসেল আহমেদ রচিত “বর্ণে বর্ণে বাঙালী” নামের বাংলা বর্ণমালা শিক্ষার
নতুন ধারার পুস্তিকা সম্মন্ধে আলোচনা করেন। এই পর্য্যায়ে হাসান মাহমুদকে সাহায্য করেন
মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সেলিম এস এইচ চোধুরী।
বরাবরের মত এবারেও ছিল “উত্তর আমেরিকা কবিতা উৎসব ” পরিচালনা করেছেন কবি মেহরাব
রহমান।
“প্রবাসে সাংবাদিকতা” প্রসঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন সংগঠক দেলোয়ার এলাহী, মাসিক “সম্পর্ক”
পত্রিকার সম্পাদক সোনিয়া হক, সেলিম এস এইচ চোধুরী, আশরাফ আলী ও নূর কাজী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সহ অন্যান্য পর্বে দেয়া বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক উল্লেখ
করেন যে আগামী বছর বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ও টরন্টো সহ পৃথিবীর
বিভিন্ন দেশে অত্যন্ত আড়ম্বরের সাথে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে পরের বছর উদযাপিত
হবে স্বাধীনতার ৫০ বর্ষপূর্তি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ আবু হেনা
মোস্তফা কামাল শেষের বাইরে অনুষ্ঠিত বইমেলা সহ অন্যান্য সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে বাংলাদেশ
সরকারের সহযোগীতা থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
বইমেলার আহব্বায়ক সাদী আহমেদের নেতৃত্বে বইমেলার সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সাঈদা বারী ও
জামান হাসিনা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এর সপ্রতিভ সঞ্চালনায় ছিলেন প্রিয় কণ্ঠ দিলারা নাহার বাবু।
১৩তম টরন্টো বাংলা বইমেলা ২০১৯ এর নিটোল স্মরণিকা সম্পাদনা করেছেন জামানা হাসিনা।
প্রচ্ছদ ও অলংকার : সিস্টেমস মিডিয়া হাউস। এবারের বইমেলার মিডিয়া পার্টনার ছিল নন্দন টিভি
ও সিস্টেমস মিডিয়া হাউজ।
বইমেলার সমস্ত অনুষ্ঠানের শব্দ নিয়ন্ত্রণ ও আলো প্রক্ষেপনে নিবেদিত প্রাণ ডাক্তার আনিসুর
রহমান রানার দক্ষতা মেলার সফলতার পেছনে একটি বড় ভূমিকা রেখেছে।