জমকালো আতশবাজি আর আলোকসজ্জার মধ্য দিয়ে দেশে দেশে বরণ করে নেওয়া হয়েছে খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২০। নানা সংকট, সংঘাত, পীড়নের মধ্যেও বেঁচে থাকার নতুন স্বপ্ন, লড়াই করার নতুন উদ্দীপনা আর সংকট পেরোনোর নতুন প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ বরণ করেছে নতুন বছরকে। দ্য টেলিগ্রাফ ও বার্তা সংস্থা এএফপি থেকে তুলে ধরা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার নববর্ষের ক্ষণে বর্ষবরণের টুকরো খবর।
যুক্তরাজ্য
নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের টেমস নদীর পাশে হাজারো মানুষের ঢল নামে। বিগ বেনের ঘণ্টা ১২ বার বাজার পর আতশবাজি আর হর্ষধ্বনির মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় ইংরেজি নতুন বছর ২০২০ সাল। লন্ডনবাসী এ বছর অনুষ্ঠেয় ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের থিম সং গেয়ে নববর্ষ উদ্যাপন শুরু করে। এবার ইউরো ফুটবল টুর্নামেন্ট এ বছরের ১২ জুন শুরু হয়ে ১২ জুলাই পর্যন্ত চলবে। ইউরোপের ১২টি দেশের ১২টি শহরে টুর্নামেন্ট হবে। এর মধ্যে লন্ডনও রয়েছে। এ কারণে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের উত্তেজনা উদ্দীপনাকে নতুন বছর উদ্যাপনের অনুষঙ্গ হিসেবে টেনে আনা হয়। সড়কে দাঁড়িয়ে আতশবাজি প্রদর্শন উপভোগ করে লাখখানেক মানুষ। লন্ডন আই থেকে প্রায় দুই হাজার আতশবাজি পোড়ানো হয়।
নববর্ষ উদ্যাপনের আগে গতকাল রাতে লন্ডনের মেয়র সাদিক খান বলেন, এই আতশবাজি উৎসব বিশ্ব অবলোকন করবে। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়তে যাচ্ছে, কিন্তু এই প্রদর্শনের মাধ্যমে লন্ডন বিশ্ববাসীর সামনে ইউরোপীয় বৈশ্বিক শহর হিসেবেই থাকবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আকাশ কমপক্ষে ১০ মিনিট বর্ণিল আতশবাজিতে ছেয়ে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভবন ২ হাজার ৭১৬ ফুট দীর্ঘ বুর্জ খলিফার ওপর এই আতশবাজি প্রদর্শিত হয়। প্রদর্শনী দেখতে বহু লোক ভিড় জমায়। পর্যটকদের আকর্ষণেরও কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই প্রদর্শনী। বছরের এই সময়ে প্রচণ্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচতে দুবাইয়ের রৌদ্রোজ্জ্বল সৈকতে ভিড় জমান ইউরোপ, রাশিয়ার পর্যটকেরা।
বিপুলসংখ্যক লোকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পরিবার ও নারীদের দল থেকে আলাদা করে শুধু পুরুষদের দলের আলাদা চলার জন্য বুর্জ খলিফা টাওয়ার ঘিরে বেশ কয়েকটি হাঁটাপথ তৈরি করে পুলিশ।
রাশিয়া
বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আতশবাজির মাধ্যমে নববর্ষ উদ্যাপন শুরু করে রাশিয়া। নববর্ষ উপলক্ষে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নতুন বছরে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। রাশিয়ার ১১টি টাইম জোনের প্রতিটি মধ্যরাত স্পর্শ করার ঠিক আগে আগে তাঁর রেকর্ড করা বার্তাটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। ওই বার্তার সঙ্গে প্রেসিডেন্টের ভবন ক্রেমলিনের ঘড়ি দেখানো হয় ও শব্দ শোনানো হয়। টেলিভিশনে বিভিন্ন শহরের আতশবাজিও প্রদর্শন করা হয়।
ইন্দোনেশিয়া
বৃষ্টি থামাতে পারেনি ইন্দোনেশিয়ার নববর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানকে। রাজধানী জাকার্তায় লাখ লাখ মানুষ বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে জড়ো হয়েছিল আতশবাজি দেখতে।
হংকং
গণতন্ত্রের পক্ষে বিক্ষোভকারী এবং উৎসবপ্রিয় মানুষে সরগরম ছিল আধা স্বায়ত্তশাসিত চায়নিজ শহর হংকং। তবে মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকা বিক্ষোভের মধ্যেও নববর্ষ উপলক্ষে এদিন সরকারের অবস্থান ছিল নমনীয়। ভিক্টোরিয়া হারবারে আতশবাজির চিরায়ত প্রথা এবার নিরাপত্তাজনিত কারণে বাতিল করা হয়। আতশবাজির জায়গা নেয় ‘সিম্ফোনি অব লাইটস’। শহরের আকাশছোঁয়া ভবনগুলোতে বিভিন্ন প্রজেকশন হয়।
জাপান
নববর্ষকে ঘিরে জাপানে বিভিন্ন মন্দিরে মানুষ সমবেত হয়। ইংরেজি নতুন বছর এবং জাপানের রেইয়া যুগের প্রার্থনা করে তারা। জাপানের নিজস্ব প্রাচীন ক্যালেন্ডারের সঙ্গে সম্রাটদের শাসনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিদায়ী বছরে বয়সজনিত কারণে জাপানের সম্রাট আকিহিতো সিংহাসন ত্যাগ করলে তাঁর ছেলে নারুহিতো হন নতুন সম্রাট। নতুন সম্রাটের সঙ্গে বিদায়ী বছরের মে মাসে শুরু হয়েছে রেইয়া যুগ। যদিও ২০২০ সালে রেইয়া দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করবে, এরপরও ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি রেইয়ার নতুন বছর হিসেবে ধরা হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছুটি হিসেবে দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হারবার নববর্ষ উদ্যাপনে বিশ্বব্যাপী আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তবে এবার দাবানলের কারণে নববর্ষ উদ্যাপন বন্ধ করে সেই অর্থ খরাপীড়িত কৃষক ও ফায়ার সার্ভিসকে দান করার দাবি উঠেছিল। এ দাবি উপেক্ষা করেই নববর্ষের আতশবাজি প্রদর্শনের আয়োজনের ঘোষণা দেন শহরের মেয়র ক্লোভার মুর। এর পক্ষে তিনি যুক্তি তুলে ধরেন, এই উদ্যাপন মানুষের মধ্যে আশা জাগাতে পারে। তবে দাবানল পরিস্থিতির কারণে দেশটির অনেক এলাকায় আতশবাজি প্রদর্শন বন্ধ রাখা হয়।
গত সোমবার দেশটির বেশ কয়েকটি উপকূলীয় শহর ও পর্যটন স্থানে দাবানল ছড়িয়ে পড়লে শহর ছেড়ে সরে যেতে বাধ্য হন বাসিন্দারা। নতুন বছরের শুরুতেই নিউ সাউথ ওয়েলসে ১১২টি আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ভিক্টোরিয়ায় একটি জরুরি অবস্থাসহ ৪৫টি এলাকায় দাবানল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দাবানলের কারণে এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এক সংবাদ সম্মেলনে আতশবাজি প্রদর্শনের পক্ষে সিডনির মেয়র বলেন, এই সংকটের সময়ে মানুষের মধ্যে আশা জাগাবে এই উদ্যাপন। তিনি বলেন, নতুন দশক ২০২০ বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয় ১৫ মাস আগে। সারা বিশ্ব থেকে অনেক মানুষ ইতিমধ্যে এই উৎসবে যোগ দিতে চলে এসেছে। তারা হোটেল বুক করেছে। এই উদ্যাপনকে ঘিরে ১৩০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে, যা নিউ সাউথ ওয়েলসের অর্থনীতি, পর্যটনশিল্পের বিকাশ, নতুন চাকরি সৃষ্টি এবং অগণিত ছোট ছোট ব্যবসায় ভূমিকা রাখতে সহায়ক হবে।