প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের চতুর্থ রোববার বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে দিবসটি। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‘নদী একটি জীবন্ত সত্তা, এর আইনি অধিকার নিশ্চিত করুন।’ সূত্র: জাগো নিউজ
এদিকে ঢাকাসহ দেশের বেশিরভাগ নদ-নদী এখন দখলদারদের কবলে। ভয়ানক দূষণের শিকার প্রতিটি নদী। নানা কারণে মরতে বসেছে দেশের নদ-নদী। পাথর ও বালু উত্তোলনের কারণে অনেক নদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সরকারি হিসাবে নদী দখলের সঙ্গে প্রায় ৪৭ হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জড়িত। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা লক্ষাধিক।
দখলবাজরা পানি প্রবাহে বাধা দিয়ে করছে মাছ চাষ। তারা দখল করেছে নদীর দুই পাড়। এমনকি প্রবহমান নদীর পানিতে বাঁশ-কাঠের মাচা তুলে বানিয়েছে ঘরবাড়ি-দোকানপাট।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার টঙ্গী থেকে সদরঘাট হয়ে ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজ পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদ দূষণে জড়িত ১২০ প্রতিষ্ঠান। নারায়ণগঞ্জে নদী দূষণের তালিকায় রয়েছে ৭৪টি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে দূষণকারীদের মধ্যে একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা ওয়াসা। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন নদীতে ২২৫ কোটি লিটার পয়ঃবর্জ্য ফেলছে ঢাকা ওয়াসা।
নদী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলেছেন, বাস্তবে ঢাকার চারপাশের চার নদী এবং নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর অবস্থা আরও করুণ। আর সারা দেশে দূষণের চিত্র ভয়ঙ্কর ও চরম উদ্বেগজনক।
১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের হালনাগাদ করা তথ্য অনুযায়ী- ৬২ জেলায় নদী দখলবাজের সংখ্যা ৪৬ হাজার ৮৩৯ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দখলবাজ কুমিল্লা জেলায়। এর সংখ্যা ৫৯০৬ জন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে আছে নোয়াখালী ও কুষ্টিয়া। এর সংখ্যা যথাক্রমে ৪৪৯৯ ও ৩১৩৪ জন। ঢাকায় এ সংখ্যা ৯৫৯ জন।
তালিকা হলেও দখলবাজদের উচ্ছেদ-অভিযান খুব একটা হয় না। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে নদী-দখলবাজ উচ্ছেদে অভিযান নেই বললেই চলে। ঢাকায় মাঝে-মধ্যে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে অভিযান শুরুর পর অদৃশ্য কারণে তা স্থায়ী হয় না। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে দেয়া নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে ধারাবাহিক উচ্ছেদ অভিযান পরিচালানোর কথা জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়- ২০১০ থেকে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের দুই পাশে ১৬ হাজার ২২৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর মধ্যে পাকা ২ হাজার ৫৭৭টি, আধাপাকা ১ হাজার ৬৯৬টি ও অন্যসব স্থাপনা ১১ হাজার ৯৫২টি। উদ্ধার হওয়া তীরভূমি ও জায়গার পরিমাণ ৬০১ দশমিক ৩২ একর। উচ্ছেদ চালানোর সময়ে ঢাকা নদী বন্দরে ৪১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা এবং নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরে ২১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এর মধ্যে চলতি বছরে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে ৩ হাজার ২০০ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও ৯১ একর ভূমি উদ্ধার করা হয়।
নদী দিবস সামনে রেখে গতকাল (শনিবার) রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সেই উদ্যোগ ব্যাহত হয়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের কারণে নদী রক্ষাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়া হয়েছে। সেই চ্যালেঞ্জ প্রতিহত করতে দখলদাররা নানাভাবে চেষ্টা করছে। আইনিভাবে কেউ যাতে এ কাজে বাধা দিতে না পারে, সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। নদী আন্দোলনের সঙ্গে সরকার নিজেই সম্পৃক্ত। সুতরাং এ আন্দোলন সফল হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নদীর সংকটে পড়ার আরেকটি বড় কারণ দূষণ। ঢাকার চারপাশের চার নদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর দূষণ সীমাহীন। মাত্রাতিরিক্ত দূষণে সদরঘাটের বুড়িগঙ্গার পানি কুচকুচে কালো, হাজারীবাগের পানি রক্তের মতো লাল। তুরাগের পানি কোথাও কালো, কোথাও গাঢ় নীল। বালু নদের পানি ধূসর বর্ণ ধারণ করেছে।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, সারা দেশের নদ-নদী দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এ তালিকা ধরে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। এ লক্ষ্যে এক বছর মেয়াদি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম নেয়া হয়েছে। ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মধ্যে রয়েছে- নদীর অবৈধ দখল উচ্ছেদ, নদীর সীমানা চিহ্নিত করা, মরা নদীর জমি চিহ্নিত করতে জরিপ করা ও জমি সংরক্ষণ করা, নদীর জমি লিজ দেয়া হলে এবং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে নদী রেকর্ড হয়ে থাকলে তা বাতিল করা।