বহুল জনপ্রিয় এই আধুনিক গানটি তাকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে গেলেও তিনি মূলত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী। পাপিয়া সারোয়ার, যিনি শুদ্ধসুরের কাছে নিজেকে সোপে দিয়েছেন। প্রায় চার দশকের ও অধিক সময়ধরে রেডিও টেলিভিশনে গান করছেন। ছোট বেলায় নাচ গান কবিতায় ঘেরা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বেড়ে উঠেছেন। মা ভালো পিয়ানো বাজাতেন, আট ভাই বোনের সবাই কিছুনা কিছু শিল্প-সাংস্কৃতির সাথে যুক্ত ছিলেন, সেই সুবাধে তিনিও নাচ, গান, ছবি আঁকা শিখতেন, কিন্তু রবীন্দ্র সংগীতে ছোট বেলা থেকেই এতোটা আকৃষ্ট ছিলেন যে কচিকাঁচার মেলায় ছবি আঁকা শিখতে গিয়ে রং-তুলিতেও খুঁজতেন রবীন্দ্রনাথকে ।
সেই থেকে শুরু। নবম শ্রেণী থেকে রেডিও তে গান শুরু করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যখন রবীন্দ্র সংগীত বাইরে গাওয়া নিষিদ্ধ ছিল, এটা তাকে ভীষণ ভাবে ব্যথিত করতো, তাই বলে থেমে থাকেননি নিয়মিত ঘরে গাইতেন, রেওয়াজ করতেন লুকিয়ে। তখন বাধ্য হয়েই নতুন করে আধুনিক গান শিখতে হয়েছিল, রেডিওতে গাইবার জন্য। যুদ্ধের সময়কার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেনÑ আমরা তখন ধানমন্ডি ১৯ নম্বর-এ ছিলাম, কলেজে পড়ি মাত্র। সেই সময়ের দিনগুলো অনেক আতংকে কেটেছে, আমার বড় ও মেজো দুলাভাই তখন এয়ার ফোর্সে ছিল, ওরা সরাসরি যুদ্ধের সাথে যুক্ত ছিলেন, সেই সুবাদে রাইফেল ট্রেনিং নেয়ার সুযোগ হয়েছিল কিন্তু যুদ্ধে যোগ দেয়া হয়নিÑ তবে, হা… রাইফেল একজায়গায় থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করেছি। যদি ও আমার মা বাবা এইসব কিছুই জানতেন না। বেশির ভাগ মানুষই তখন ঢাকা থেকে চলে যাচ্ছিলো কিন্তু আমাদের যাওয়া হয়নি।
১৯৭৩ সালে তিনিই প্রথম বাংলাদেশী যিনি শান্তিনিকেতন থেকে বৃত্তি পেয়ে ভারতে পড়তে যান। গান শিখেছেন কণিকা বন্দোপাধ্যায়, নীলিমা সেন, শান্তিদেব ঘোষ, পন্ডিত ধ্রুব তারা যোশী, সুবিনয় রায়, আরতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিখ্যাত সব শিল্পীদের কাছে থেকে।
নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের প্রসঙ্গ আসতেই বললেন- সুর হচ্ছে সাধনা, সুর বাণিজ্য নয়, অন্তত আমি কখনো বাণিজ্যিকভাবে নেইনি গানটাকে। এখন অনেক সময় দেখা যায় ফিউশন করে আসল গলা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে শিল্পীর নিজস্বতা থাকছে না। এটা ভালো লাগে না। সবাই এখন ট্রাকে গান করে এটা ভালো লাগে আমার কাছে। কারণ যখন ভুল হয় তখন গানটা আবার শুরু থেকে করতে হয় না, যেখানে ভুল হয়েছিল সেখান থেকে শুরু করলেই হয়।
এখনকার অনেকেই ভালো করছে। আমি আশাবাদী নতুনদের নিয়ে। একজন শিল্পীর প্রসারের জন্য তার নিয়মিত রেওয়াজ করাটা যেমনি জরুরি তেমনি তার বাড়ির পরিবেশ ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমার ক্ষেত্রে যেমন, আমি যখন ইচ্ছা তখনই গান নিয়ে বসতাম, আমার স্বামী সারোয়ার সব সময় আমাকে সহযোগিতা করেছেন। এই যে পারিবারিক সহযোগিতা এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ একজন শিল্পীর বিকাশের জন্য ।
পারিবারিক জীবনে পাপিয়া সারোয়ার দুই কন্যা সন্তানের জননী, একজন কানাডা ও অন্যজন আমেরিকাতে স্থায়ী হলেও তিনি কখনো প্রবাসজীবন পছন্দ করেন না। তাছাড়া দেশে একটি গীতসুধা নামে একটি সংগীত প্রতিষ্ঠান আছে।
সম্প্রতি পাপিয়া সারোয়ার কানাডা সফরে এসেছিলেন। তার কন্যা জিসা সারোয়ার-এর বাসায়, এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায় সম্পর্কের সাথে আলাপচারিতারই অংশবিশেষ দেয়া হলো, সম্পর্কের পাঠকদের জন্য।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.