ইন্ডিয়ান গার্ল!’ পার্ট-১৪
এ সময় চোখ যায় বিছানার ওপর। পাশাপাশি দু’টো বিছানা। মাঝখানে ব্যবধান দুই ফুটের মতো। সিঙ্গেল বেড। হঠাৎই ভাবনাটা আবার আসে মাথায়। ঘুমাবো না রাতে! না ঘুমালে কাল কোন কাজই তো করতে পারবো না! একে ফেরত পাঠিয়ে তারপর ঘুমাতে গেলে সারা দিনই ঘুমিয়ে কাটাতে হবে।
আমাকে কিছু ভাবতে দেখে শুধায় মেয়েটি, তোমাকে খুব টেনশনে ফেলে দিয়েছি। আই এ্যাম সরি।
বলি, কিসের টেনশন?
এই যে কিভাবে আমাকে সাহায্য করবে।
হেসে বলে উঠি, আরে না। ও সমস্যার সমাধান তো হয়েই যাবে। ভাবছি এখন সারা রাত জেগে বসে থাকলে কাল কাজটাজগুলো কিভাবে সাড়বো!
এবার বেশ অবাক দৃস্টিতে তাকায়। বলে, এখন সারা রাত জেগে বসে থাকলে মানে! তুমি ঘুমাবে না রাতে!
ঘুমাবো তো। কিন্তু-। বলে ইতস্তত করতে থাকি।
বলে, বুঝেছি। আমি এখানে থাকছি বলে তোমার ঘুম আসবে না।
সামলে নিয়ে বলি, কথা সেটা নয়। বলছি আমি যদি শুই তুমি তো আর জেগে বসে থাকবে না।
একটু অবাক হয়। বলে, তা কেন! আমিও শোবো।
একটা ঢোক গিলি। তুমিও শোবে!
এখানে দু’টো বেড আছে। দুইজন শোয়া যাবে না!
তার মানে তুমি বলছো এই দুই বেডে আমরা শোবো পাশাপাশি!
তাতে তোমার কি খুব অসুবিধা হবে!
না অসুবিধা না, তবে ব্যপারটা-।
আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, আমি কিন্তু ওই সোফায় বসেও পার করে দিতে পারবো রাতটা। প্লিজ আমার জন্যে তুমি কোন কষ্ট স্বীকার কোর না।
বলে উঠি, না না তুমি ওই বেডেই শুতে পারবে।
থ্যাংক ইউ। বলে একটু সহজ হলো যেন।
শোয়ার ব্যপারে একটা ব্যবস্থা হলো। ভাবতেই যেন আড়স্ট হয়ে আসতে চায় শরীর। এক অদ্ভূত সিচুয়েশন। হঠাৎ করে একটা অজানা অচেনা মেয়ে, যে কিনা সুন্দরী এবং আকর্ষনীয়া, এসে হাজির আমার রুমে! এখন থাকছে আমার সাথে! শোবে আমারই পাশে। যদিও ভিন্ন বেড, মাঝখানে ব্যবধান মন্দ না, তারপরও ব্যপারটা কেমন রোমাঞ্চকর!
একটু আমতা আমতা করে বলি, অবশ্য জানি না এরকম কোন অভিজ্ঞতা তোমার আছে কিনা, তবে আমার কিন্তু এই প্রথম এ ধরনের সিচুয়েশন।
একটু চুপ থেকে বলে, ঠিক বুঝতে পারলাম না কি বোঝালে।
হেসে বলি, বলছি এভাবে কোন সুন্দরী মেয়েকে এক রুমে নিয়ে কখনো রাত কাটাইনি আমি। তোমার যদি এমন কোন অভিজ্ঞতা থেকে থাকে হয়তো বিব্রত হবেনা। তবে আমি হয়তো চট করে সহজ হতে পারবো না। কিছু মনে কোর না তার জন্য।
লজ্জামতো পায় যেন। মাথা নীচু করে বলে, এমন অভিজ্ঞতা আমারও নেই। তবে কেন যেন এখানে এখন কোন ভয় করছে না আমার। আমাকে নিয়ে তুমিও চিন্তা কোর না। আমি খুবই কৃতজ্ঞ তুমি ঠাঁই দিয়েছো তোমার এখানে। আমার কারনে নিজের কোন অসুবিধা মেনে নিও না। তাহলে নিজেকে অপরাধী মনে হবে।
কথাগুলো বলে গেলো সুন্দর করে ইংরেজীতে। আসলে বোঝা গেলো ইংরেজীটা ভালোই জানে। আমি বলি, আমি ঠিক আছি। তুমিও নির্ভয় নিশ্চিন্ত থাকতে পারো।
মৃদু হেসে বলে, থ্যাংক ইউ মাই গড্।
এবার হেসে বলি, শোন, গড্ মনে করো আর যাই, আমি কিন্তু একজন মানুষ।
চোখ তুলে তাকায়। বোঝার চেষ্টা করে কি বোঝাচ্ছি। পরিবেশটা হালকা করতে একটু হেসে বলি, বলছি সারা রাত যদি এভাবে বসে থাকো ভগবান কিন্তু বলবে না এখন বিছানায় যাও এবং ঘুমাও। কিন্তু আমি জানতে চাইছি, ইচ্ছাটা কি? ইরাদা ক্যায়া হায়! এভাবেই রাত পার করে দেয়া!
লজ্জা পায় যেন কিছুটা। তারপরই শশব্যস্ত হয়ে ওঠে। বলে ‘ও: আই এ্যাম সরি। ইউ নীড টু গো শ্লিপ। ইট্স কোয়াইট নাইট।’
‘নো মোর নাইট, অলরেডি মনির্ং। সো হোয়াট এ্যবাউট ইউ! ডোন্ট ফিল শ্লিপ?’
সলাজ হাসিতে মুখটা ভরিয়ে তুলে মাথা নাড়ে।
বলি, তাহলে আর দেরী করছো কেন। জামা কাপড় পাল্টে নাও-। বলেই থমকে যেতে হয়। ওতো কোন কাপড় চোপর আনেনি! চেঞ্জ করে পরবে কি!
বলে ‘ইটস্ অল রাইট। আই এ্যম ফাইন। আমাকে নিয়ে ভেবো না।
আসলে উপায়ও কিছু নাই। পরনের শাড়ী পরেই শুতে হবে। আমি প্যান্ট শার্ট পরে ঘুমাই না। লুঙ্গি পরি। ভাবি মেয়েটার সামনে তা পরা ঠিক হবে কিনা। নাকি রাতটা প্যান্ট শার্ট পড়েই পার করে দেবো। আজকের রাতটাই তো।
হঠাৎ বলে ওঠে ‘ইউ ক্যান চেঞ্জ।’
‘হোয়াট!’
‘ক্লোদস্। শিওরলি ইউ ডোন্ট শ্লিপ লাইক দিস। মিনস- ইন শার্টস এ্যন্ড ট্রাউজার!’
‘নো’ বলি আমি।
তাহলে পাল্টে নাও। কি পড়ো তুমি?
লুঙ্গি। তুমি জানো, কি সেটা?
বুঝতে পারে। বলে, ও হ্যাঁ হ্যাঁ, লুঙ্গি! ওটা আমাদের কমন পোষাক। বলতে পারো জাতীয় পোষাক।
হেসে বলি, হ্যাঁ, যদি চাও ও রকম একটা তোমাকেও দিতে পারি। আমার কাছে এক্সট্রা আছে।
একটু লজ্জা পেয়ে যায়। বলে, না না ঠিক আছে। আমি এভাবেই শুতে পারবো। তুমি পাল্টে নাও।
‘ওকে’ বলে লুঙ্গিটা নিয়ে বাথরুমে যাই। চেঞ্জ করে একেবারে ব্রাশট্রাশ করে মুখ হাত ধুয়ে বের হই। তাকিয়েছিলো টিভির দিকে। ফেরে। একটু হেসে বলে, তোমাকে আমাদের দেশের ছেলেদের মতো লাগছে তো!
আমিও পাল্টা বলি, আমি কি কোন বিদেশের ছেলে নাকি! এখন যাও। ফ্রেশ হয়ে আসো।
‘ইয়েস’ বলে ওঠে। বাথরুমে যায়। আমি শার্ট পাল্টে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যাই। একটু পর বের হয়ে আসে। মনে হলো মুখ হাত ধোয়নি। শুধাই, কি ব্যপার, ধোও নি!
‘নো প্রবেøম’ বলে এসে বসে ও ধারের বিছানার এক কোনে।
একটুক্ষন আবার নীরবতা। বিছানায় পাতলামতো লেপ আছে। এসি চলে চব্বিশ ঘন্টা। অটো। টেম্পারেচারটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা। লেপ না গায়ে দিলেও চলে। ভাবি, সিঙ্গেল রুম না পেয়ে এ রুমটা নেওয়ার সময় কি জানতাম কে থাকবে ও বিছানাটায়! ওটা রাখাই আছে আজ রাতে এ মেয়েটার জন্য!
আর দেরী করা ঠিক না। বলি, সব কিছু স্বাভাবিকভাবে নেবে। নিজের ঘরের মতোই মনে করতে পারো। আর টেনশন সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। মাথা নাড়ে। শুধাই, সকালে ক’টায় ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস।
বলে, ক’টায় উঠতে হবে?
ন’টার মধ্যে পারলে ভালো হয়। মহিলা ফোন দেবে দশটায়। তার আগে রেডী হয়ে যেতে হবে। ঘন্টা খানেক তো লাগবেই তাতে, নাকি!
সায় দেয় মাথা নেড়ে। তারপরও বসে থাকে দেখে তাগাদা দেই, ‘হোয়াট হ্যাপেন্ড! গেট অন দ্য বেড-!
‘ও ইয়েস’ বলে উঠে যায় বিছানায়। লেপটা খুলে গায়ের ওপর দিয়ে শুয়ে পরে। আমিও শুয়ে পরি। রিমোট টিপে টিভি অফ করি। বলি, বাতিটা নিভিয়ে দেবো কি?
বলে ‘ইয়েস।’
‘গুড নাইট দেন’ বলে বেড সুইচ তুলে নেই। আবার বলি ‘হ্যাভ এ নাইস শ্লিপ।’
অষ্ফুটে বলে ‘ইউ টু।’
লাইট অফ করে দেই। মূহুর্তে নিকষ কালো অন্ধকারে ঢেকে যায় পুরো কক্ষ। এখন আর কোন শব্দ নেই। কান পাতলে শুধু এসির হালকা ঝিম আওয়াজটা। চোখ বন্ধ করি। ভেসে ওঠে ওর মুখটা। আহা কি সারল্য! এই সরল মেয়েটাই কপালের ফেরে আজ কোথায় এসে পড়েছে। আর আমারই বা কপালের কি লিখন, পরশু রাত ঢাকায়, কাল রাত প্লেনে!