না না, ওকে বোঝাতে হবে আমার সিচুয়েশনটা। আসলে আমার সম্পর্কে কিছুই জানেনা মেয়েটা। কে আমি, এখানে কি করি বা কেন এসেছি কোন ধারনা নাই।
কিছুক্ষন নীরবতা। কেউ কিছু বলছি না। হঠাৎ শুনতে পাই ওর কান্নাভেজা কন্ঠ। নীচু গলায় বলে, তুমি কি চাইছো আমি সেখানে ফিরে যাই আর মহিলার চাপে পরে এক সময় রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে বাধ্য হই!
আঁতকে উঠি এ কথায়। বলি, কি বলছো! তা তুমি কেন করবে!
তুমিই বললে সে আমাকে কিডন্যাপ করাতে পারে, বিক্রি করে দিতে পারে। ওখানে গিয়ে থাকলে সে কাজটা করা কি সহজ হবে না তার জন্য!
তাকাই গভীর দৃষ্টিতে। কথার যুক্তি আছে। বলে চলে, আমি জানি আমাকে এখানে রাখলে তুমি এ্যমবারাসড্ আনকমফরটেবল ফীল করবে। সহজ হতে পারবে না। এরপর গলাটা একটু ধরে আসে। বলে, কিন্তু সে যে আমাকে মেরে ফেলবে। আমি তাকে চিনেছি এই ক’দিনে। স্বার্থের জন্য আমার শরীরকে টুকরো টুকরো করে বিক্রি করতেও দ্বিধা করবে না। তুমি কি চাও আমি মারা যাই!
একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে যাই এ কথায়। কি বলবো। হঠাৎ ফুপিয়ে ওঠে ‘ফর গড্স সেক ডোন্ট সেন্ড মি ব্যাক টু দ্যাট হন্টেড প্লেস। প্লিজ-’ বলে হাত জোড় করে কাতর চোখে তাকিয়ে থাকে।
আমি যেন বিহ্বল হয়ে পরি ওর সে দৃস্টির সামনে। মূহুর্তে উদ্বেলিত হয়ে উঠি। বলি ‘ইটস্ অল রাইট। কাম ডাউন।’
একই কন্ঠে আবার বলে, ‘প্লিজ- আই ওয়ান্ট টু লিভ।’
এলোমেলো হয়ে পরি সে মূহুর্তে। এভাবে কাতরকন্ঠে আমার সামনে দাঁড়িয়ে কাউকে হাতজোড় করে প্লিজ বলতে শুনিনি কখনো। কোন মেয়ে এভাবে কোনদিন আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেনি। বুঝতে পারছি না কি বলবো। মহিলা যদি ওকে ফেরত না পায়, পাগল হয়ে উঠবে সন্দেহ নাই। মনে করতে পারে আমিই ফুসলিয়ে রেখে দিয়েছি। মেয়েটা যতই বলুক সে নিজের ইচ্ছায় রয়ে গেছে মহিলা তা মানবে না। লাগবে আমার পেছনে।
হঠাৎ মনে হয়, আরে এতসব কি ভাবছি! মেয়েটার পক্ষ নিয়ে দাঁড়ালে, তার কাছে ওর টিকেট পাসপোর্ট ফেরত চাইলে আমি তো এমনিই তার শত্রু হয়ে যাবো। তো একে আমার হেফাজতে রাখা না রাখায় কি রকমফের হবে! বরঞ্চ রিষ্ক বেশী ও ওখানে গিয়ে থাকলে। শত্রুতা হয়ে যাওয়ামাত্র ওর ক্ষতি করতে পারে। আসলেই তো কি বোকার মতো ভাবছি আমি! যদি ওকে সাহায্য করবো বলে ঠিক করি তাহলে আর সে ওখানে গিয়ে কি করবে! মেয়েটা তো ঠিকই বলেছে, আমিই কি করে ভাবলাম ওর সেখানে ফিরে যাওয়ার কথা!
সান্তনা দেয়ার মতো করে বলি, ‘ইট্স অল রাইট। লেট মি থিংক।’
দু’চোখের কোল বেয়ে কয়েক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে। হাতদু’টো জোড়বদ্ধ করে তুলে ধরে অষ্ফুটে বলে ‘ইউ আর মাই গড্।’
হঠাৎই যেন আমি সম্বিৎয়ে ফিরে আসি। যদি না যায় থাকবে কোথায়! এই রুমে! আমি একটা ছেলে, এভাবে একটা ছেলের সাথে এক রুমে, বা আমিই একটা মেয়ের সাথে একই কক্ষে কিভাবে থাকতে পারি! কতক্ষন! কতক্ষন কি ভাবছি, কত দিন!
কিন্তু ওর সে করুণ চাহনী, চোখের কোলবেয়ে নেমে আশা অশ্রুধারা, জোড়বদ্ধ হাত আমাকে এলোমেলো করে দিয়ে চললো যেন। ভাবি, আচ্ছা এখন তো আছে। পরেরটা পরে দেখা যাবে। আসলে এমনই করে থাকি আমি। যখন কোন সমস্যার কুল কিনারা দেখিনা, পুরো ব্যপারটা ভবিতব্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে বসে থাকি দেখতে ভাগ্য আমাকে কোথায় নিয়ে যায়। কখনো কখনো রিলাক্সেন খেয়ে লম্বা ঘুম দেই। এবং ঘুম থেকে উঠে দেখি একটা ব্যপার দাঁড়িয়ে গেছে। পছন্দ হোক বা না হোক সেটাকেই মেনে নিয়ে চলা শুরু করি।
মেয়েটা ফিরে যেতে চাইছে না। ঠিক আছে, থাক। এক রুমে থাকতে অসুবিধা হবে, পাশে একটা সিঙ্গেল রুম ঠিক করে দেবো। কত আর ভাড়া। থাকুক সেখানে যে কয়দিন দরকার।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.