ভ্যাজাল মানে? এবার হেলিমকে ইংরেজী বলতে হয়। বউ সামনে। জেনি উপস্থিত থাকলে আমরা ইংরেজীই বলি। সে শুনতে চায় কি বলাবলি করি। হয়তো কিছুটা হেলিমের ওপর সন্দেহ থেকে। না কোন বুদ্ধি পাকাই তার অজান্তে! হেলিম তার এই বাতিকের কথা আমাকে আগেই জানিয়েছে।
গতবার হংকং এসে এক ভ্যাজাল সামাল দিতে হয়েছিলো। বাঙ্গালী এক ছেলে বিয়ার খেয়ে বিল্ডিংয়ের সামনের রাস্তায় মারামারি করে এক পাকিস্তানীর মাথা ফাটিয়েছিলো। পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায়। ছেলেটা থাকতো হেলিমের ডরমিটরিতে। অতএব দায়িত্ব এসে পরে তার ঘাড়ে। উকিল ধরো, তিন চার দিন দৌড়াদৌড়ি, শেষে ছাড়িয়ে আনা হয় ছেলেটাকে। আমি ছিলাম এখানে। হেলিমের সাথে সেই দৌড়ঝাপে আমাকেও শামিল হতে হয়েছিলো।
এবার আসতে না আসতেই আর এক ভ্যাজালে জড়িয়ে গেছি। খুলে বলি পুরো বৃত্তান্ত সেই কাল সন্ধ্যা থেকে একটু আগে মহিলার ওখান পর্যন্ত। শোনে দু’জনই মন দিয়ে। হেলিমের চোখ কখনো ছোট কখনো বড় হয়। শেষ হলে বলে, আপনে তো একটা বিরাট ঝামেলা ঘাড়ে নিয়ে ফেলেছেন। জেনি বলে ‘বাট ইউ আর ডুয়িং এ গ্রেট জব।’
জেনির কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে এবার হেলিম বলে ওঠে ‘অফ কোর্স। উই আর উইথ ইউ। জাস্ট টেল মি হোয়াট উই টু ডু।’ সেই সাথে যোগ করে, একটা ভালো মেয়েকে নষ্ট করে দেবে এটা কিছুতেই হতে পারে না।
জেনি বলে, তার এক কাজিন পুলিশ। যদি চাই তার সাহায্যও নিতে পারি।
একটু ভেবে বলি, মনে হয় না থানা পুলিশ পর্যন্ত যেতে চাইবে। মহিলাকে স্মার্টই মনে হলো। ঝামেলায় যাবে না।
দরকার হলে বলো, বলে জেনি ও পাশের রুমে ফোন রিসিভ করতে যায়। এই ফাঁকে হেলিম আমার একটা হাত চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে, মাইয়াটা এখন কই?
আমিও ফিসফিস করে বলি, আমার রুমে।
চোখ কপালে তুলে বলে, কাইল রাইত থিকা! খাইছেন?
ধমকে উঠি, খাইছেন মানে?
না মানে-
কি বলেন! একটা মেয়ে বিপদে পরে আমার কাছে আশ্রয় নিয়েছে আর আমিই তার ভক্ষক হবো!
ওর বিষ্ময় আরো বাড়ে। বলে, চাইখ্যাও দ্যাখেন নাই!
বলি, বাজে কথা বাদ দ্যান তো! এ সময় জেনি ফেরে। আমাদের ফিসফিসানি বন্ধ হয়ে যায়। হেলিম ইংরেজীতে বলে বেশ জোড়ে, কালকের মধ্যে যদি টিকিট পাসপোর্ট না দ্যায় খালি বলবেন, তারপর দ্যাখেন কিভাবে আদায় করি।
আমি বলি, আশা করি বড় কোন ঝামেলা হবে না। নিশ্চয়ই এর মধ্যে মহিলা তার লোকজনের সাথে বুদ্ধি পরামর্শ করবে। দেখা যাক।
কিছুক্ষনের মধ্যে নিশা প্রসঙ্গ যায়। আমরা আমাদের কাজের কথা শুরু করি। ওপারে হংকং সাইডে ওয়াংচাই যেতে হবে জিয়াংশির অফিসে। কাল ফোনে কথা হয়েছে আজ কম্পিউটার স্পেয়ার্সের স্যাম্পল নিয়ে বসবো। কতক্ষন লাগবে জানি না। এদিকে দেরী হয়ে গেলো এখানেই। হেলিমকে নিয়েই যাওয়ার কথা সেখানে। এখন সে বলে যেতে পারবে না। সকালে ড্রাগনের ফ্লাইটে তার এক লোক এসেছে ঢাকা থেকে। ইমিগ্রেশনে প্রশ্নের ঠিকমতো জবাব দিতে পারে নাই। আটকে রেখেছে এয়ারপোর্টে। হেলিমকে ফোন করেছিলো ইমিগ্রেশন থেকে। বলেছে সে গিয়ে তার ব্যবসার কাগজপত্র দেখালে ছেড়ে দেবে। অতএব এখন তাকে এয়ারপোর্টে যেতে হচ্ছে। এতক্ষন আমার আসার অপেক্ষায় ছিলো। কারন সে চাইছে আমি যেন যাই তার সাথে। জিয়াংশির সাথে এ্যপয়েন্টমেন্টের কথা বলি। হেলিম বলে তার ওখানে কাল গেলেও চলবে, এমন জরুরী কিছু না।
এয়ারপোর্ট কম দুর না। যেতে আসতে মোটামুটি তিন চার ঘন্টার ব্যপার। তারপর ওখানেও সময় লাগবে। তার মানে বিকালের আগে ফেরা যাবে না। হেলিম পীড়াপিরি শুরু করে। এক পর্যায়ে জেনিও একটু হেসে বলে তুমি সাথে গেলে কিছু সুবিধা হতে পারে ওর।
শুধাই, সেটা কি রকম!
ধরো, ওর কথায় ইমিগ্রেশন সন্তুষ্ট হলো না। তুমি সে সময় তাকে একটু সাহায্য করবে।
বুঝতে পারছিলাম না ওখানে আমি হেলিমের কোন সাহায্যে লাগতে পারি। তবে এটা বুঝলাম ও চাইছে আমি তাকে সঙ্গ দেই। এত দুরের পথ, আসতে যেতে লম্বা সময়। সঙ্গে একজন থাকলে বোর হবে না। যাহোক, জেনির অনুরোধ ফেলতে পারি না। বলি, চলেন তাহলে। জিয়াংশিকে ফোন দেই। সে অপেক্ষা করছে আমার। বলি, একটা জরুরী ব্যপারে আটকে গেছি। কাল আসলে কি চলে?
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.