হেলিম ‘দোয়া কইরেন ভাই’ বলে ভেতরে যায়। মনে হলো একটু ঘাবড়ে গেছে। আসলে বিদেশের ইমিগ্রেশন সব সময়ই একটা আতংকের বিষয়। এত ক্ষমতা দিয়ে রাখা হয়েছে তাদেরকে, যা ইচ্ছা করতে পারে। কিছু বলা যাবে না। যতই রেসিডেন্ট হোক এসেছে ডিপোর্টের অপেক্ষায় থাকা এক সন্দেহভাজন যাত্রীর জন্য তদ্বিরে। উল্টাপাল্টা কিছু বললে বা দুই জনের কথায় মিল না পেলে সে নিজেও ঝামেলায় পড়ে যেতে পারে। হতে পারে সে জন্যেই আমাকে সাথে এনেছে যেন বিপদে পড়লে সাহায্য করি।
যাই হোক, হেলিম ভেতরে গেলে আমি কিছুক্ষন হাঁঁটাহাটি করি সামনেটায়। পনেরো মিনিটের মতো পার হয়। কেউ আসে না। হয়তো আমাকে দরকার হচ্ছে না। ঠিক আছে। এই ফাঁকে দোতালায় উঠে আসি ড্রাগন এয়ারের কাউন্টােের। এরা হংকংয়ের নিজস্ব এয়ারলাইন। অনেকটা রিজিওনাল এয়ারলাইনের মতো। হংকংয়ের বড় এয়ারলাইন হচ্ছে ক্যাথে প্যাসিফিক। দুনিয়ার সব বড় বড় শহরে এদের যাতায়ত। ড্রাগন ক্যাথের জন্য এ এয়ারপোর্টে রয়েছে নিজস্ব চেক ইন বøক। ড্রাগনের চেক ইন বøকের প্যাসেজের পাশেই পাওয়া গেলো ইনফরমেশন ডেষ্ক। আগে জেনে নিই তাদের চেন্নাই ফ্লাইটের খবর। সপ্তাহে তিনটা। রবি মঙ্গল আর শুক্রবারে। ছাড়ে বিকাল তিনটায়। লস্ট টিকেটের কথা জিজ্ঞেস করলে জানায় রিটার্নিং প্যাসেঞ্জারের টিকেট হারিয়ে গেলে ডুপ্লিকেট ইস্যু করা হয়। তবে এর জন্য অপেক্ষা করতে হয় বেশ ক’দিন। পুলিশ রিপোর্ট লাগবে, ইস্যুয়িং ট্রাভেল এজেন্সির সার্টিফিকেশন, পাসেঞ্জারের পাসপোর্ট সবকিছু সহ আবেদন করতে হবে। ওরা পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে তারপর ইস্যু করবে। সবকিছু শেষ হতে কয় দিন লাগবে বলতে পারে না। তবে সময়টা নির্ভর করছে ইস্যুয়িং ট্রাভেল এজেন্সির কাছ থেকে সেল রিপোর্ট পাওয়ার ওপর।
বুঝলাম। তার মানে মহিলার কাছ থেকে জিনিষগুলো উদ্ধার করা ছাড়া কোন গত্যন্তর নাই। যেভাবেই হোক পেতে হবে তা। মেয়েটাকে থ্যংক ইউ বলে নীচে নেমে আসি। ইমিগ্রেশন অফিসের সামনে গিয়ে দেখি হেলিম তখনো ফেরেনি। আবার একটু হাঁটাহাটি করে এসে বসি পাশের ম্যাকডোনাল্ডে। এখানে এসে মনে হলো ক্ষিধে লেগেছে। আসলে খাবারের দোকানে গেলেই ক্ষিধেটা বোধ হয় বা লেগে যায়। বিগ ম্যাক নাগেট আর সোডা নেই। ভেবেছিলাম হেলিম ফিরে এলে এক সাথে খাবো। কিন্তু এখনো তার খবর নাই। কোন ঝামেলায় পড়েছে ভেতরে কে জানে! যাই হোক, সময় লাগছে। আমি শুরু করি। এলে বসে যাবে। লবিতেই রেস্টুরেন্টের টেবিল পাতা, এক্সটেনশন অংশ। এমনভাবে বসি যাতে অদুরে ইমিগ্রেশন অফিসের সামনেটা দেখা যায়। হেলিম বের হয়ে এলে এখান থেকে হাত তুললে দেখতে পাবে।
সময় নিয়েই খাওয়া শেষ করি। তারপরও হেলিমের দেখা নাই। কিছুক্ষন রেস্টুরেন্টে বসে থেকে আবার এসে অপেক্ষা করতে থাকি অফিসের সামনে। এত দেরী তো হওয়ার কথা না। হেলিমের নিজের কোন সমস্যা হলো কিনা, একটু চিন্তায় পড়ে যাই। না, সে তো রেসিডেন্ট। তার আর কি সমস্যা হবে। যাই হোক আরো প্রায় পনেরো মিনিট পর বের হয়ে আসে হেলিম। সঙ্গে তার সেই প্যাসেঞ্জার। কাঁধে ঝোলানো একটা সাইড ব্যাগ, হাতে মাঝারি আকারের ব্রিফ কেস। স্যুটেড বুটেড। ভাবটা না জানি কত বড় বিজনেসম্যান!
কালো স্যুট গলায় টাই চোখে সানগøাস- একেবারে পেটেন্ট আদম। ঢাকা থেকে থাই ড্রাগন ক্যাথে বা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনের ফ্লাইটে এই ড্রেসের বাঙ্গালী দেখলেই আর বলে দিতে হয় না এদের বিদেশ গমনের উদ্দেশ্য। পথে কোথাও ট্রানজিট। এরপর সেখান থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা। বাকিটা আল্লাহ ভরষা। যেখানে গিয়ে ঠেকে!
বাইরে এসে হেলিম শুরু করলো লোকটাকে ধুম শান্টিং। ‘মিয়া বিদ্যাশে আইতাছো, একটু ইংরাজী শিখা প্লেনে উঠবা না! ইমিগ্রেশনডা পার কইর্যা দিবো তোমার বাপে!
লোকটা স্মার্ট। একটু হেসে বলে, বাফে তো আরো জানে না।
তাইলে এত বিদ্যাশ আসার শখ ক্যা?
লোকটা আমতা আমতা করে বলে, আমি তো কিছু ইংরাজী জানিই। কিন্তু ব্যাডা কি কয় খটোমটো কইর্যা, না বুঝলে কি জবাব দিমু!
শালা বাঙ্গু, আইজ আমারেই তো দিছিলা ফাসাইয়া, বলে রাগে গজরাতে গজরাতে। হাঁটতে হাঁটতে ব্যপারটা খুলে বলে হেলিম। ইমিগ্রেশনে ওকে জিজ্ঞেস করেছিলো তুমি কি এখানে কাজ করতে এসেছো। লোকটা বলেছে ইয়েস! হেলিম বলে, এখন কন এরপর আর ভিসা দ্যায় কাউরে! এখন বন্ড দিয়া ছাড়াইয়া আনতে অইলো। আমার আইডি নম্বর রাখলো। পুনরো দিনের মইধ্যে এ্যারে প্লেনে উঠাইয়া দিয়া হ্যাগোরে জানাইতে অইবো। এখন কন!
শুধাই, আর কোন কাজ আছে এখানে।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.