আপনি কি মনে করেন এসব ইঙ্গিত ও বুঝবে না!
আরে কি মুশকিল! আমি তো হ্যার বোঝোনের লাইগ্যাই কইলাম। রুমে জায়গা দিছেন খাওয়াইতেছেন এত দৌড় পারতাছেন, সব মাগনা? আপনে তো কিছু মুখ ফুইট্যা কইবেন না, একটু আওয়াজ দিয়া রাখলাম। যদি লাইনের অয় দেখবেন নিজেই আগাইয়া আইছে।
ধমকে উঠি, আপনার সাথে মিয়া এ বিষয়ে আর কোন কথাই বলবো না।
কইয়েন না! বলে চুপ হয়ে যায়। আমরা লবি ধরে এসে দাঁড়াই লিফটের সামনে। আসলে হেলিমের অফিসে কোন কাজ নাই এখন। কিছুক্ষন বসে সময় পার করা। রুমেও থাকতে পারতাম। তাতে করে নিশার সাথে কথা বলতে হতো। কিন্তু কি কথা বলবো ওর সাথে এত। এখনও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত নয়। টিকেট পাসপোর্ট ফেরত পাওয়া, ফিরে যাওয়ার বিষয়টা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত টেনশন থাকবেই। আরো টেনশন, একজন অজানা অচেনা লোকের কাছে এসে উঠেছে। যে কোন মেয়ের জন্য এটা একটা বিরাট রিষ্ক। আমি তার দূর্বলতার সুযোগ নিতে পারি, এ ধরনের আতংকবোধ মনে কাজ করতে পারে। তারপরও এখন পর্যন্ত ওর বিশ্বাষ রেখে আসতে পারছি।
কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে একসাথে পাশাপাশি থাকলে আমার নিজেরই মনের ভাবান্তর আসতে কতক্ষন। আমি তো একটা পুরুষ। তার ওপর মেয়েটা হচ্ছে একটা আগুন। রাত থেকেই মাঝে মাঝেই কেমন উন্মনা হয়ে পড়ছিলাম। অতএব যতটা পারা যায় এর সঙ্গ এড়িয়ে থাকতে হবে, ভালোয় ভালোয় চেন্নাইয়ের ফ্লাইটে তুলে দেয়া পর্যন্ত।
এখন হেলিমের অফিসে যতক্ষন পাড়া যায় সময়টা পার করে ফিরবো রুমে। যাতে ফিরে বেশী দেরী করতে না হয়। খেয়েই শুয়ে পরা যায়। লিফটে হেলিম কোন কথা বলে না। আমিও চুপ। নীচে নেমে এসে মুখ খোলে, আপনে তো একটা কপাইল্যা মানুষ সাহেব!
বলি, কি রকম?
এই রকম একটা জিনিষ আপসে আপ ঘরে আইসা গেছে, একেবারে মাগনা! বলে হাসতে হাসতে।
আমিও হেসে বলি, ওসব রাখেন। এখন বলেন, কেমন বুঝলেন! ঠিক আছে তো?
একটু চুপ থেকে বলে, মনে অয় দুই নম্বর না।
দুই নম্বর না মানে!
রাস্তার না। রাস্তায় দেখি নাই এ মাইয়ারে। হয়তো সত্যই কইছে আপনেরে। এবার সে একটু সিরিয়াস। এবং বেশ গম্ভীর কন্ঠেই বলে, তয় ভাই এই জিনিষ ছাইড়েন না। শ্যাসে সারা জীবন আফসোস কইর্যাও কুল পাইবেন না।
আবার একটা ধমক দেই।
কথা বলতে বলতে চলে আসি চুংকিংয়ে হেলিমের রুমে। জেনি চলে গেছে। হেলিম এখন তার সাম্রাজ্যের রাজা। ফ্রিজ খুলে বিয়ার বের করে। একটুপর ফোন করে চলে আসেন রউফ সাহেব। বাংলা মটরে অটো পার্টসের দোকান আছে ভদ্রলোকের। মাল ইমপোর্ট করে তাইওয়ান থেকে। প্রায়ই যেতে হয় তাকে তাইপে। প্রতিবার হংকং এসে ভিসা নিতে হয়। আবেদন করে বসে থাকতে হয় সপ্তাহখানেক। জানালেন এবার এসে উঠেছেন ডি বøকের একটা ইন্ডিয়ান গেস্ট হাউসে। হেলিমের এখানেই একবার পরিচয় তার সাথে। এবারও দেখা হয়ে গেলো।
বিয়ার সিগারেটে কিছুক্ষনের মধ্যে জমে যাই আমরা। শ্রেফ আড্ডা। তবে মাঝেমাঝেই হেলিম নিশা প্রসঙ্গ টেনে আনছিলো। তার একটাই আফসোস এই রকম একটা মেয়েকে হাতে পেয়েও আমি ছেড়ে দিচ্ছি। তার রায়, আমার চাইতে অপদার্থ লোক দুনিয়াতে নাই। রউফ সাহেব মধ্যবয়ষ্ক ভদ্রলোক। আমার সাথে অতটা অন্তরঙ্গতা নাই। তবে মদের আসরে বসলে ছোট বড় বয়সের ভেদাভেদ বেশীক্ষন থাকে না। কয়েক গ্লাসেই গভীর অন্তরঙ্গতা গড়ে ওঠে। কিছুক্ষনের মধ্যে সেও হেলিমের সাথে তাল দিতে লাগলো। এক পর্যায়ে গড়াতে লাগলো তা স্থুলতার দিকে।
নিশাকে নিয়ে এ ধরনের নোংড়া কথাবার্ত্তা আমার ভালো লাগছিলো না। মনে হচ্ছিলো এ মেয়ে এসব কথাবার্ত্তার পর্যায়ের নয়। আসলে ওরা যতই বলছিলো, ওকে আমি অন্য কিছুতে ভাবতেই পারছিলাম না। শেষে ধমক দিয়ে বলি, এসব এখন রাখেন তো! মেয়ে দেখলেই আপনারা আর অন্য কিছু ভাবতে পারেন না!
তিনটা করে হয়ে গেছে এর মধ্যে। হেলিমের যত বিয়ার চড়ে তত তার গলা চড়ে। এবার প্রায় চেঁচিয়েই বলে ওঠে, আপনের এত লাগে ক্যান হ্যার লাইগ্যা? কি লাগে আপনের! বউ?
হেসে ফেলি, বলি, ধরেন বউ। এখন আল্লার ওয়াস্তে এই আলোচনা বাদ দ্যান।
দু’জনের চোখই যেন কপালে উঠতে থাকে। হেলিম বলে, আঁ-! কেইসটা কি!
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.