রউফ সাহেব বলেন, সত্যি করে বলেন তো ভাই, প্রেমে ট্রেমে পড়েন নাই তো!
আমি হাতের ক্যানের বাকি অংশ এক চুমুকে শেষ করে বলি, এখনো পড়ি নাই। তবে দুই একদিন সঙ্গে থাকলে না পড়ে উপায় থাকবে না।
হেলিম বলে ওঠে, কইলাম না রে ভাই, আগুন আগুন।
এবার রউফ সাহেবের অনুরোধ, একবার দেখাবেন না!
দেখাইবো না মানে! কাইলকাই দেখবেন।
এরপর ঠিক হলো কাল রাতে একসাথে ডিনার করবো নিশাকে নিয়ে। চার বিয়ার রউফ সাহেবকে দিলদরিয়া করে দিলো। বললেন আমিই হোস্ট।
দশটার ওপরে বেজে যায় আড্ডায়। ঘড়ি দেখি। এবার উঠতে হয়। পথে পাঞ্জাব রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে যেতে হবে। আর একটুপর গেলে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেবে। বিয়ার চারটা না পাঁচটা ক’টা খেয়েছি গুনি নাই। নেশা নেশাভাব বেশ। ভাবি, মাতাল মাতাল ভাব দেখলে কিছু মনে করে কিনা মেয়েটা। অবশ্য ফ্রিজে বিয়ার দেখেছে। টেবিল থেকে হুইষ্কির বোতল তুলেছে। কি করেছে এখনো জানি না। তবে ড্রিংক ট্রিংক যে করি এটা জেনেছে। কাজেই একটু মাতাল হয়ে গেলে অস্বাভাবিক ঠেকবে না। অন্য কিছু মনেও করবে না।
তবে বিয়ারটা খাওয়ায় আমার বেশ সুবিধা হয়ে গেলো। রুমে ফিরে বেশীক্ষন জাগতে হবে না। শুলেই ঘুম এসে যাবে।
আসলে মেয়েটার সাথে আমার কথার স্টক একেবারেই কম। সাবজেক্টই মাত্র একটা। পাসপোর্ট টিকেট উদ্ধার। ওই এক সাবেজেক্টে কতক্ষন চালানো যায়! কয়েক মিনিটে শেষ হয়ে গেলে তারপর চুপ হয়ে থাকতে হয়। অবশ্য ব্যক্তিগত বিষয়াদিতে যাওয়া যায়। তা হয়ে যায় এক ধরনের অনধিকার চর্চা। মনে করে বসতে পারে কিছু। মুখে বলবে না। মনে মনে ফালতু ভাবতে পারে। সে জন্যেই কথা যত কম বলা যায় ভালো। দরকারি না হলে চুপচাপ টিভি দেখা।
উঠে দাঁড়াই। বলি, যেতে হবে ভাই।
হেলিম বলে, যান যান, ঘরে নতুন বউ রাইখা আইছেন। অন্য সময়ে তো রাইত কুন দিক দিয়া পার অইয়্যা যায় ট্যারও পান না।
রউফ সাহেব বিজ্ঞের মতো বলে ওঠেন, বিয়ে করার এই হচ্ছে জ্বালা, ঘরে বউ বসে থাকে অপেক্ষায়। এখানে দ্যাখেন, কি স্বাধীন আমি! কোন বউ নাই, ঘরে যাওয়ার তাড়া নাই। শোনেন, আর যাই করেন, ভুলেও বিয়ে টিয়ে করবেন না। মরবেন।
হাসি ওদের কথায়। এরপর বিদায় নেই। কথা হলো, সকালে মহিলাকে ফোন দিয়ে দেখা করবো। দরকার হলে হেলিমকে কল দেবো ওখান থেকে। সে দশ মিনিটের মধ্যে গিয়ে পৌঁছুতে পারবে। রউফ সাহেবও কোমড় বাধেন। বলেন আমাকে ফোন করবেন। আমিও যাবো। থ্যাংক ইউ বাই বলে বের হয়ে আসি।
চুংকিংয়ে এ সময়টায় লিফট হালকা থাকে। তবে প্রতি তলা ধরে এ পর্যন্ত আসতে সময় নেয়। মিনিট পাঁচসাতেক দাঁড়িয়ে পাওয়া যায়। নীচে নেমে আবার সিঁড়ি বেয়ে দোতালায়। খাবার নিয়ে রুমে ফিরতে ফিরতে প্রায় এগারোটা বেজে যায়।
লবিতে হাঁটার সময় পা টলেছে। কন্ঠ জড়ানো নয় তবে বুঝতে পারছি নেশা বেশ। বেল বাজালে তখনকার মতোই বলতে হয় ‘ইট্স মী।’ দরজা খুলে একটু সড়ে দাঁড়ায় নিশা। ‘হাই’ বলে ঢুকি ভেতরে। তবে লক্ষ্য করি কয়েক পলক তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিলো। ওর দিকে না তাকিয়েই একটু কৈফিয়তের মতো বলি ‘সরি কুডন্ট কাম আর্লি।’
কোন কথা বলেনা। হাত থেকে খাবারের প্যাকেটটা নিয়ে টেবিলের ওপর রাখে। সন্দেহ হয় টের পেলো কি! এবার ভালো করে তাকাতেই থ’ হয়ে যাই। মুখ দিয়ে অষ্ফুটে বের হয় ‘ওয়াও!’
একটু ঘাবড়ে যায় যেন। সভয়ে বলে ওঠে ‘হোয়াট হ্যাপেন্ড! এনি থিং রং!’
সোৎসাহে বলে উঠি, ‘ইউ লুক গ্রেট, বিউটিফুল!’
আমার একটা লুঙ্গি পরেছে। তার ওপরে শার্ট। বেশ ঢোলামতো, ঝুলে আছে। হাতা অর্দ্ধেক গোটানো। অদ্ভূত সুন্দর লাগছে এ বেশে।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.