‘গুড নাইট।’
রাতের মতো আমাদের কথাবার্তা শেষ। মাথাটা একটু ঝিমঝিম করছিলো। বুঝতে পরছিলাম এ নেশা বিয়ারের নেশা নয়, এ নেশা মাত্র দুই হাত দুরে শুয়ে থাকা নিশা। ধীরে ধীরে মেয়েটা আচ্ছন্ন করে চলেছে মন মস্তিষ্ক। বের করতে হবে সেখান থেকে ওকে। নইলে ঘুম আসবে না। চিন্তার ট্র্যাক নিজের দিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। ঢাকার অফিস, কোরিয়ায় মিটিং, কাল জিয়াংশির সাথে দেখা করতে যাওয়া, চুংকিংয়ে হেলিমের অফিস, মহিলার সাথে ফাইনাল বোঝাপরা- এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় চোখ বুজি। এবং কিছুক্ষন পর সত্যিই ঘুম এসে যায়।
ওর খবর বলতে পারবো না। ইচ্ছা করেই মাথা থেকে নামিয়ে রেখেছিলাম ওকে। যদিও বেশ কষ্ট হয়েছে তাতে। থাকলে ঘুমাতে পারতাম না। ভোর ছয়টার দিকে একবার উঠে বাথরুমে গেছি। বাথরুমের আলোর আভায় দেখেছি নিশা শুয়ে আছে লেপটা গলা পর্যন্ত টেনে দিয়ে। ফিরে এসে আবার ঘুমিয়ে গেছি। পরেরবার ঘুম ভাঙ্গে নয়টার পর। চোখ মেলে দেখি ও বিছানায় নেই। রুমের লাইট নেভানো। তবে বাথরুমের লাইটটা জ্বালানো। দরজা একটু ফাঁক করে রাখা। সেই আলোতেই ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে নিশা চুল আচড়াচ্ছে। পড়নে কাল রাতে পরা আমার সেই লুঙ্গি আর শার্টটা। বেশ ভালো লাগলো। একটু হেসে ‘গুড মর্নিং’ বলে রুমের লাইট জ্বালি। মৃদু হেসে ও-ও বলে ‘গুড মর্নিং।’
শুধাই, ক’টায় উঠেছো?
বলে, আধা ঘন্টা আগে।
আড়মোরা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বলি ‘হাও ওয়াজ দ্য শ্লিপ।’
জবাব দেয় না। পাল্টা শুধায় ‘ইউ?’
‘গুড।’
বলে ‘গুড দেন।’
একটু সন্দিগ্ধ চোখে তাকাই। মানে! আমার ভালো ঘুম হয়েছে বলে ওরও ভালো হয়েছে। ব্যপারটা তেমনই বোঝালো। কিন্তু কেন! ধীরে ধীরে মেয়েটা কেমন যেন রহস্যময় উঠছে। কথায় বেশ হেঁয়ালি।
জিজ্ঞেস করি, গোসল করেছো?
মাথা ঝাকায়।
‘দ্যাটস্ এ গুড গার্ল’ বলে আমি উঠি। তাহলে আমি আমারটা সেড়ে আসি বলে বাথরুমে গিয়ে ঢুকি।
মোটামুটি আধা ঘন্টাখানেক লাগে আমার ফিরতে। এসে দেখি রুম বিছানা একেবারে আবার পরিপাটি। মুখ দিয়ে বের হয়ে যায় ‘ওয়াও!’
তাকায় মুখের দিকে চোখ বড় বড় করে। হেসে বলি ‘ইউ উইল বি এ গুড্ ওয়াইফ। দ্য গাই হু ম্যারি ইউ উইল বি এ লাকি পারসন। আই ফিল জেলাস ফর হিম।’
মুচকি হেসে বলে ‘হু ইজ দ্যাট গাই!’
‘আই ডোন্ট নো। বাট হুএভার কনকার্স ইউ।’
‘কংকার্স মি!’ ভুরুদু’টো কোচকানো মতো করে শুধায়।
‘ইয়েস। টু উইনওভার এ বিউটিফুল গার্ল ইজ অলওয়েজ এ কংকার। আই ডোন্ট নো হু দ্য লাকি গাই ইজ দ্যাট।’
এবার হো হো করে হেসে ওঠে। একেবারে প্রানখোলা হাসি। এই প্রথম মেয়েটা এভাবে হাসছে। একটু অবাক লাগলেও পর মূহুর্তে সামলে নেই। বেশ ভালো লাগলো ওকে এভাবে হাসতে দেখে। মনে হলো এ যেন আর এক রূপ ওর। মোহিত হয়ে দেখতে থাকি সে প্রানোচ্ছল মুখটা। হাসি থামিয়ে বলে ‘ইউ আর সো ফানি! টক নাইস!’
আমি হেসে বলি ‘এ্যয়, হাও এবাউট ইওর বয় ফ্রেন্ড?’
থমকে যায় যেন আমার এ আচমকা প্রশ্নে। তারপর চোখ কুচকে শুধায়, বয় ফ্রেন্ড? সেটা আবার কে!
বলি, আমি কি করে বলবো! সেটা তো তুমি জানো।
আমার কোন বয় ফ্রেন্ডট্রেন্ড নেই। বলে গেলো একেবারে সহজ করে। এরপর বলে চলে, আমাদের সমাজটা খুবই রক্ষনশীল। ধর্মীয় গোড়ামী প্রবল। তুমি কিন্ত মনে কোর না আমরা কোন পশ্চিমা ধাঁচের সমাজের-।
আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো। ‘ওকে, আই আন্ডারস্ট্যান্ড’ বলে থামিয়ে দেই।
একটু চুপ থেকে বলে ‘বাট আই গট এ ফ্রেন্ড।’
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.