‘ইন্ডিয়ান গার্ল!’ পার্ট-৭
তাকাই ওর দিকে। এবার বেশ ভালো করে দেখতে থাকি মেয়েটাকে। নীতিবোধ! ভালোই তো! এ ব্যবসায় চাই শুধু টাকা সে যেভাবেই পাওয়া যাক। ওকে আমি চাইছি না, অথচ টাকা দিয়ে দিলাম ব্যপারটা সে মানতে পারছে না! বা বা! বেশ তো!
এবার মেয়েটার দিকে ফিরে বলি, দ্যাখো আমি টাকাটা দিয়েছি কারন তোমরা আমার জন্য কাষ্টমার হারিয়েছো।
মেয়েটা এক ঝলক আমার দিকে তাকিয়ে তারপর মহিলার দিকে ফিরে আবার শক্ত কন্ঠে বলে কিছু তামিলে। মহিলা কোন কথা বলেনা। শুনে চুপ হয়ে থাকে। আমি ব্যপারটা কিছু বুঝতে না পেরে তাকাই মহিলার দিকে। বলি, কি বললো সে?
সে বলছে আমি যেন তোমার টাকা ফেরত দেই। বলে মাথা নীচু করে কিছু ভাবতে থাকে।
ব্যপারটা অস্বাভাবিক নি:সন্দেহে। সন্ধ্যা থেকে কথা হচ্ছে যদিও জানা হয় নাই এদের পরষ্পরের সম্পর্কটা। মহিলাটি যে একজন মাসী বা খদ্দের জোগাড় করা দালাল সন্দেহ নাই। মেয়েটাকে দিয়েই তার আয়। কিন্তু মেয়েটার ভাবভঙ্গি কথাবার্ত্তা তো ব্যবসায়ীসুলভ মনে হচ্ছে না! ব্যবসায় যখন নেমেছে, তার কিছু নিয়ম নীতি আছে। তা মানবে না কেন! টাকার জন্যেই পথে নামা। টাকা পেয়ে গেছে। এখন বাড়ীর পথ ধরবে। এর মধ্যে আবার ন্যায় নীতির কথা কেন!
কয়েক মিনিট হয়ে গেলো কেউ কোন কথা বলছি না। বুঝতে পারছি মহিলাটি দোটানায় পড়ে গেছে কি করবে এখন। মেয়েটা বেঁকে বসেছে। তার কথা মেনে টাকাটা ফেরত দেবে না এমনিই চলে যাবে! তবে বোঝা গেলো কোন দিক দিয়ে সে দূর্বল মেয়েটার কাছে। নইলে শক্তভাবে ধমক দিতে পারতো। হিড় হিড় করে টেনে নিয়ে যেতে পারতো।
কেমন অসহায় চোখে তাকায় আমার দিকে মহিলা। হাসি আসে আবার একটু মায়াও হয় তার ওপর। টাকাটা হাতছাড়া করতে চাইছে না আবার মেয়েটার ওপর হুকুমও চালাতে পারছে না। মেয়েটার দিকে ফিরি। মনে হলো সে অনড় তার সিদ্ধান্তে।
পুরো ব্যপারটা ঝুলে আছে। একটা সমাধানে আসতে হবে। এবার মুখ খুলি আমি। মহিলাকে বলি, কি চাও তুমি?
আমি চাই তুমি ওকে রাখো।
আমি ওকে এখানে রাখলে তুমি টাকাটা নিতে পারো, তাই তো!
বেশ আগ্রহের সাথে বলে, হ্যাঁ।
তোমার এই টাকাটা খুব দরকার?
মাথা নাড়ে। তারপর একটু ইতস্তত: করে বলে, তোমাকে মনে হচ্ছে তুমি একটা ভালো লোক। তোমাকে বলতে অসুবিধা নাই এটাই আমাদের প্রথম ইনকাম। বিলিভ মি।
এবার বেশ ভালো অবাক হতে হয়। প্রথম ইনকাম মানে! ও: হয়তো আজ কোন কাষ্টমার পায় নাই। একদম ফাঁকা যাচ্ছে। একটা কিছু না নিয়ে ঘরে ফেরে কিভাবে। এবার একটু মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে হয়। কিছুক্ষন কি রেখে দেবো মেয়েটিকে! কি করবে ও এখানে থেকে! আচ্ছা একটু কথাবার্ত্তা বলে দেখা যায় ব্যপারটা কি ওর। এমন নীতিবোধের হেতুটা কি। মেয়েটাকে আমার ভালো লেগেছে সন্দেহ নাই। সেই সন্ধ্যায় যখন প্রথম দেখেছি তখনই। এমন অদ্ভূত সুন্দর একটা মেয়ে এ পথে কেন এলো ভেবে অবাক হয়েছি। যদি এ লাইনের না হতো এ মেয়ের সাথে কোন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দাঁড় করাতে পারলে অনেকের জন্য তা ঈর্ষনীয় হতো। কথা হচ্ছেনা, কিন্তু একটু পর পরই ঘুড়ে ফিরে চোখ গিয়ে পরছিলো ওর ওপর। আড়চোখে বারবার তাকাচ্ছিলামও। একটুক্ষন যদি থাকে এখানে মন্দ কি। হঠাৎই কেমন যেন এক ধরনের সাহস অনুভব করলাম ভেতরে।
বলি মহিলাকে, ঠিক আছে। তুমি টাকাটা রাখো এবং কিছুক্ষন পর ফিরে এসে ওকে নিয়ে যাও।
আমার প্রস্তাবে চোখ দু’টো জ্বলজ্বল করে ওঠে মহিলার। লক্ষ্য করি মেয়েটা চকিতে তাকায় আমার দিকে। মহিলা কি যেন বলে। সে কোন জবাব দেয় না। তারপর আমাকে শুধায়, কতক্ষন পর আসবো?
একটু ভাবতে হয়। কতক্ষন ওকে রাখা ঠিক হবে এখানে। কত আর, দশ পনেরো মিনিট! কি আর অত কথা তার সাথে। বলি, ‘টেন ফিফটিন মিনিটস্-।’
মহিলাটি একটু মুচকি হেসে বলে, ‘ওনলি টেন ফিপটিন মিনিটস! টেক সাম মোর টাইম।’
বুঝলাম ঈঙ্গিতটা অন্য দিকে করেছে। যেন বুঝি নাই এমন করে বললাম, ‘ওকে, কাম ব্যাক আফটার ওয়ান আওয়ার।’
মহিলা একই রকম মুচকি হেসে বলে,‘ওকে ওকে।’ বলে পা বাড়ায়।
আমি বলি যাবার পথে যেন রিসেপশনের লোকটাকে বলে যায় সে আবার ফিরবে। গেটে বেল বাজালে খুলে দেবে। তারপরও আমার সেল নম্বরটা দিয়ে বলি কোন সমস্যা হলে যেন কল দেয়।
আমার এই হঠাৎ ভালো মানুষি আচড়ন দেখে সে যেন গদ গদ হয়ে যায়। বলে ‘ওকে ওকে, নো প্রবেøম। থ্যাংক ইউ।’ তারপর মেয়েটার উদ্দেশ্যে তামিলে কিছু বলে বের হয়ে যায় রুম থেকে।
হঠাৎই বুকের মধ্যে ধপ করে উঠলো যেন। একটা মেয়ে আমার রুমে! রেখে দিলাম ওকে! চারিদিকে ঠা ঠা নিরবতা। একদম পিন পতন নিস্তব্ধতা। কোন শব্দ নাই। আমি বসে আমার বিছানার এক পাশে। একটু দুরে ও পাশের বিছানার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে মেয়েটি। মাথা নীচু করে আছে। এমন হীম শীতল নীরবতা পুরো রুমজুড়ে, যেন নিঃশ্বাষের শব্দও শোনা যায়।
বুঝতে পারছিনা এরপর কি বলবো। এ পর্যন্ত মেয়েটার সাথে কোন কথাই হয় নাই আমার। যা কথাবার্ত্তা মহিলার সাথেই। তিন মিগুয়েলের কোন লেশমাত্র নাই মাথায়। ঝোঁকের মাথায় রেখে দিলাম। এখন কি করবো! মহিলা আসবে এক ঘন্টা পর। এখন মনে হচ্ছে এক ঘন্টা অনেক লম্বা সময়। পার করবো কিভাবে!
যাওয়ার সময় মহিলা দরজা আটকিয়ে দিয়ে গেছে। এ দরজা টেনে দিলে আপনিতেই লক হয়ে যায়। বাইরে থেকে চাবি ছাড়া খোলা যায় না। মাথায় তখন আমার নেশা তো নাই-ই বদলে এক ধরনের উত্তেজনা। একটা সুন্দরী মেয়ে আমার সাথে একা। এবং সে প্রস্তুত আমি যাই করি তার সাথে মেনে নিতে। রীতিমতো থ্রিলিং! তিন শ’ ডলার দিয়ে আমি তাকে কিনে নিয়েছি! ভেবে বেশ অবাকই হচ্ছিলাম এভাবে কোন মানুষকে কেনা যায়! এ মূহুর্তে মেয়েটা একটা পন্য আমার কাছে! আহা, টাকা এমনই জিনিষ, মানুষ তার জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেয়। কত অসহায় মেয়েরা!
পরিবেশটা কেমন একটু অস্বস্তিকর হয়ে উঠছিলো। আমরা দু’টি মানুষ রুমে। কেউ কোন কথা বলছি না। একবার তাকাই ওর দিকে। একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে মাথা নীচু করে। যেন কিনে আনা একটা দাসী। একটা পুরুষ এক ঘন্টার জন্য কেনা তার দেহটাকে খুবলে খুবলে খেলেও সে কিছু বলবে না! একটা একটা করে পরিধেয় খুলে ফেললে চুপ করে থাকবে। শরীরটা নিয়ে খোলামকুচির মতো খেললে মুখ বুজে থাকবে। টাকার এতই শক্তি, মানুষের পশুত্বও গিলতে হয়!
কিন্তু আমি তো সে উদ্দেশ্যে ওকে রাখি নাই এখানে। রাস্তা থেকে কাউকে ধরে এনে তার সাথে শুতে হবে ভাবতেও গা রি রি করে ওঠে আমার। এ মেয়েটা কে জানি না। তবে রাস্তা থেকেই তো এসেছে। যাই হোক, ভাবি, যা হবার হয়ে গেছে, এখন সময়টা কোনমতে পার করে বিদায় করলেই হলো। আসলে টাকাটা ওদের দরকার। মহিলার ভাব দেখে মনে হলো ভীষনই দরকার। একে যদি না রেখে দিতাম মহিলা টাকা নিতে পারছিলো না। কিছুক্ষনের জন্য রেখে মহিলাকে সাহায্য করা হলো। ব্যপারটাকে এভাবেই নিয়ে মাথা থেকে সব টেনশন দুর করে দেই। চেষ্টা করি স্বাভাবিক হতে। তারপরও ভাবনায় রয়ে যায়, মেয়েটা এমনিতেই টাকা নিয়ে চলে যেতে রাজী হলো না কেন! একটা কিছু রহস্যমতো মনে হচ্ছে।
রিমোট টিপে টিভি অন করি। কোন বাংলা হিন্দী চ্যানেল নাই। সবই চায়নীজ। তবে সিএনএন বিবিসি হিস্ট্রি চ্যানেল আছে। একটা ইংরেজী চ্যানেলে ডেভিড লেটারম্যানের শো পাওয়া গেলো। অগত্যা ওটাতেই রেখে ভলিউম কমিয়ে দিলাম।
একটুপর খেয়াল হলো মেয়েটা এসেছে থেকে এক ঠায় দাঁড়িয়ে। বসতে বলা হয়নি। ছি: কেমন অভদ্রতা হয়ে গেলো। হোক না রাস্তা থেকে আসা, এ মূহুর্তে সে আমার অতিথি। মেহমানকে বসতে না বলা, দাঁড় করিয়ে রাখা এক ধরনের অভদ্রতা। তাকাই ওর দিকে। যেভাবে মাটির দিকে তাকিয়ে ছিলো সেভাবেই মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভালো করে দেখা যাচ্ছে না মুখটা। আগে তেমন খুটিয়ে লক্ষ্য করি নাই। এবার বেশ নিরীক্ষার চোখে তাকাই। হ্যাঁ রং শ্যামলা নয় বলা যায় উজ্জল শ্যামলা। মুখটা গোল বা লম্বামতো নয় এক ধরনের আনকমন কাটিং। ¯িøম। এক কথায় চমৎকার ফিগার। শাড়ী পরেছে সাউথের ঢংয়ে। একটু লম্বামতো লাগছিলো। সাউথের মেয়েরা এমনিতেই লম্বা। এ মেয়েটা পাঁচ ফুট ছ’য়ের কাছাকাছি হবে। চেহারাটা কেমন মায়াভরা।
‘সীট ডাউন।’ বসতে বলি। এই প্রথম কিছু বললাম ওকে।
একটুক্ষন চুপ থেকে দু’পা সড়ে গিয়ে বসে ও পাশের বিছানার এক কোনে। তারপরও মাথা তোলেনা। বুঝতে পারছি না এ কি সংকোচ না অভিনয়।
এরপর কি বলবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ খেয়াল হয় আচ্ছা ও কি তামিল ছাড়া অন্য কোন ভাষা জানে। এখন যদিও ‘সীট ডাউন’ কথাটা বুঝলো কিন্তু এর মধ্যে যতবার মহিলার সাথে কথা, তামিলে বলেছে। অবশ্য নিজেদের মধ্যে তো নিজেদের ভাষাই বলবে! যদি ইংরেজী বলতে না পারে তাহলে তো এর সাথে কোন কথাবার্ত্তাই চলবে না। হিন্দী জানলেও চলবে। কিন্তু তামিলরা হিন্দী বলেনা। দু’ একটা টুকটাক কথা তো বলতে হবে। এভাবে মুখ বুজে এক ঘন্টা পার করা যাবে না। সেটা ভালোও দেখাবে না।
চলবে…