আমরা এমটিআর নেই। সিম শা সুই থেকে সোয়ান ভ্যান লাইনে এক স্টপেজ এ্যডমিরালটি, এরপর ট্রেন বদলে আইল্যান্ড লাইনে আর এক স্টেশন ওয়াংচাই। এসে নামতে আধা ঘন্টাখানেক লাগলো। ওপরে উঠে হাটতে হয় বেশ খানিকটা। জিয়াংশির অফিসে পৌঁছতে আরো বিশ মিনিট। অপেক্ষা করছিলো সে আমাদের। লাঞ্চ টাইম হয়ে গেছে। চায়নীজরা লাঞ্চ আর ডিনার এই দুই টাইমের ব্যপারে খুবই পাংচুয়াল। খাওয়ার সময় হলে সব কাজ ফেলে আগে খেয়ে নেয়। জিয়াংশি আমাদেরকে নিয়ে যায় নীচে একটা চায়নীজে। লাঞ্চ সেড়ে অফিসে গিয়ে বসি।
গতবার হংকং ঘুড়ে যাওয়ার পর থেকে জিয়াংশির সাথে ই-মেইল টেলিফোনে কথাবার্ত্তা হয়েছে। এবার এসে স্যাম্পল দেখার কথা। নানা ব্র্যান্ড মডেলের কম্পিউটার স্পেয়ার্স। চীন হংকং তাইপেতে তৈরী হয় এগুলো। কিন্তু ব্র্যান্ড নেমেরগুলোয় মেড ইন লেখা থাকে না। সোজা বাংলায় নকল মাল। কোম্পানীর চেয়ে অর্দ্ধেক দাম। ঢাকার বাজারে দেদারছে চলছে। চালান কম লাভ বেশী।
কথাবার্ত্তা বলছি, হঠাৎ খেয়াল হয় আচ্ছা মহিলা আবার পালালো টালালো নাতো! চেন্নাইয়ের ফ্লাইট তিনটায়। ঘড়ি দেখি। দুইটার ওপর। যদি পালিয়ে থাকে, এতক্ষন এয়ারপোর্টে। মোবাইলে ফোন করলে ধরতে পারে, নাও পারে। ধরলেও তো বুঝতে পারবো না কোত্থেকে বলছে। তাহলে কি করে বুঝবো পালালো কিনা। ভালোই টেনশনে পরে যাই। আমাকে উসখুশ করতে দেখে হেলিম বলে, কোন সমস্যা?
বলি ব্যাপারটা। মহিলাকে যেভাবেই হোক আটকাতে হবে। কিন্তু বুঝতে পারছি না সে পালালো কিনা।
হেলিম একটু ভেবে নিয়ে বলে, আরে এইটা কুনো সমস্যা হইলো? গেষ্ট হাউজের নাম কন।
বলি। সে জিয়াংশিকে বলে টেলিফোন এনকোয়ারিতে ফোন করে এই গেস্ট হাউসের নম্বরটা নিয়ে দিতে। কয়েক মিনিটেই পেয়ে যাই লিবার্টি গেস্ট হাউজের নম্বর। হেলিম নিজেই তার সেল থেকে লাগিয়ে বলে, রুম নম্বর কন। একটু ভাবতেই মনে পড়ে যায়। সিক্স। ওপাশে ধরে কোন এক চায়নীজ। হেলিম জানতে চায় তাদের ছয় নম্বর রুমের ইন্ডিয়ান গেস্টটা আছে না চলে গেছে। মহিলা বলে কিছু। ওকে, থ্যাংক ইউ বলে ফোন রাখে হেলিম। আমার দিকে ফিরে বলে, যায় নাই। রুমেই আছে।
যেন একটা বোঝা নেমে যায় মাথা থেকে। রুমেই যখন আছে তার মানে আমাদের সাথে একটা বোঝাপড়া ফাইনাল না করে যাচ্ছেনা। ভালো। চেন্নাইয়ের পরের ফ্লাইট শুক্রবার। তার মানে সে পর্যন্ত আছে হংকং। না, এর মধ্যে কাজ উদ্ধার করতেই হবে।
ঘন্টা দু’য়েক কাটাই আমরা জিয়াংশির অফিসে। কিছু ক্যাটালগ ব্রæশিয়ার নেই সাথে। প্রাইস লিস্ট দিয়ে দেয়। কথা হয় ঢাকায় ফিরে জানাবো।
ফেরার পথে আবার এমটিআর। হেলিমের অফিসে এসে পৌঁছুতে পৌঁছুতে পাঁচটা বেজে যায়।
আজ বেশ গড়ম পরেছে। এতক্ষন ট্রেনে ছিলাম এসির ভেতর। নেমে রাস্তায় গড়ম। লিফটের গাদাগাদিতে একেবারে ঘেমে নেয়ে উঠি। হেলিম এসি ছেড়ে দিয়ে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসে। জেনি আসে নাই। জিয়াংশির অফিসে থাকতেই হেলিম ফোন পেয়েছে তার। জানিয়েছে আজ আসবে না। আমার সাথেও কথা বলেছে। বলেছে সে অপেক্ষায় থাকবে। বলেছি আশা করছি কোন সমস্যা হবেনা। হলে অবশ্যই তার সাহায্য নেবো।
পানিটািন খেয়ে ধাতস্থ হই। ছয়টার দিকে নিশাকে নিয়ে যেতে হবে মহিলার ওখানে। এর মধ্যে নিশার সাথে কথা হয় নাই আর। একটু খোঁজ নেয়া দরকার দুপুরে খেলো কিনা। নাকি কালকের মতো কেক বিষ্কুট খেয়ে আছে। কল দেই রুমের নম্বরে। একটু পর ধরে।
বলি ‘এ্যয়, আই এ্যম ব্যাক।’
বেশ উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধায় ‘হয়্যার আর ইউ নাও?’
একটু ভড়কে যাই ওর কন্ঠে। কোন সমস্যা হলো কিনা! বলি, আমি এখানে, আমার বন্ধুর অফিসে। কোন সমস্যা?
সহজ হয়ে বলে, না না সব ঠিক আছে। তুমি কখন আসছো রুমে?
এই তো একটু পরেই। তুমি রেডি হয়ে থাকো। এসেই মহিলার ওখানে যাবো।
একটু চুপ থেকে বলে, আমাকে সেখানে যেতেই হবে?
তুমি না গেলে ডকুমেন্টগুলো সে কাকে দেবে। তোমাকেই তো তা বুঝে নিতে হবে।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.