পথে বেশ চিন্তামগ্ন ছিলো নিশা। কথা বলে নাই। হয়তো ভাবছিলো কি অবস্থায় গিয়ে তাকে পড়তে হয়! পরশু রাতের পর মহিলার সাথে আর মুখোমুখি হয় নাই। প্রথম দেখায় কিভাবে নেয় তাকে, আবার কোন ঝামেলা পাকায়! পাশাপাশি হাঁটতে গিয়ে একবার আমার সাথে একটু ঘেষে এসে শুধিয়েছে মহিলা তাকে জোড় করে রেখে দেবে নাতো! হেসে বলেছি, পাগল! তাতেও পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেনি। বলেছে তোমার বন্ধু সাথে থাকবে তো। আমি হেসে বলেছি অত চিন্তা করতে হবে না। মহিলার সামনে যেন নার্ভাসনেস না দেখায়। স্বাভাবিক থাকতে হবে। ঘাড় নেড়ে সায় দিয়েছে।
বেল বাজালে দরজা খুলে দেয় মহিলা। আমি ‘হাই, হাও আর ইউ’ বলে ভেতরে ঢুকি। নিশাও ঢোকে আমার পেছন পেছন। মহিলা তাকিয়ে থাকে হেলিমের দিকে। হেলিমও যেন পরখ করার মতো তাকে দেখতে থাকে। তারপর বলে, আই নো ইউ। আমি তোমাকে আগেও দেখেছি রাস্তায়। মহিলা কিছু বলে না।
হেলিম মহিলাকে শুনিয়ে আমাকে বলে ইংরেজীতে, তাহলে আপনারা কথা বলেন আমি বাইরে অপেক্ষা করছি। দরকার হলে বলবেন, চলে আসবো। আমার অন্য বন্ধুরা বিল্ডিংয়ের নীচে অপেক্ষা করছে। খবর দিলে তারাও চলে আসবে।
মহিলা রাগে ফুসছিলো যেন। হেলিমকে বলে, তুমি কি আমাকে ভয় দেখাচ্ছো?
হেলিম বেশ সহজভাবেই বলে, আমি জানি তুমি খুব স্মার্ট এবং ইন্টেলিজেন্ট। তোমাকে ভয় দেখাতে হবে কেন। তোমরা কথা বলো। বলে বাইরে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। মহিলা দরজা বন্ধ করে দেয়।
আমি আর নিশা দাঁড়িয়ে আছি পাশাপাশি। মহিলা পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিশাকে। কিছু বলে না। তারপর গিয়ে বসে বিছানায়। গম্ভীর মুখে তাকিয়ে থাকে নীচের দিকে। আমিও কোন কথা বলছি না। দেখি কি করে সে।
একটু পর তামিলে কিছু বলে ওঠে নিশার উদ্দেশ্যে। নিশা জবাব দেয়। মহিলা আবার বলে, নিশা তার উত্তর করে। শুরু হয়ে যায় দুইজনের বাদানুবাদ। কেউ কারো চেয়ে কম যায় না। মহিলা কখনো চীৎকার করে ওঠে, কখনো কাঁদে পর মূহুর্তে গর্জে ওঠে। আবার একটু পরেই কন্ঠে মিনতি ঝরে।
আমি শুধু দাঁড়িয়ে দেখতে থাকি দু’জনের এই বাকযুদ্ধ। অবশ্য ওদের এই বাহাসে আমার কিছু করারও নাই। তবে ভয় হচ্ছিলো মহিলা না নিশার গায়ে হাত তুলে বসে। কয়েকবার তেমন অবস্থা হয়েছিলো বলেও মনে হয়। সামলে নিয়েছে। হয়তো আমি সামনে বলে। নইলে মহিলার যে ভাবভঙ্গি বোঝা গেলো মারধোর কোন ব্যপার না তার কাছে। তবে একটু অবাকই হচ্ছিলাম নিশার মনোবল দেখে। আসার পথে যে ভীতি ছিলো একদম নেই এখন। যেভাবে কথার জবাব দিচ্ছে যেন প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে।
ওদের কথাবার্ত্তায় যতটুকু বুঝলাম মহিলা প্রথমে নিশাকে গালমন্দ করেছে, হুমকি ধমকি দিয়েছে, তারপর প্রলোভন, শেষে মিনতি।
মোটামুটি দশ মিনিট ধরে চললো তাদের বাহাস। আমি ঠায় দাঁড়িয়ে। বসার জায়গা নাই রুমে। টুলটার ওপর খাবারের ঠোঙা। হয়তো কালকের সেটাই। দু’জনই দু’জনের উদ্দেশ্যে ধমকের সুরে কিছু বলে চুপ হয়ে যায়। মূহুর্ত কয়েক নীরবতা। আমি একে একে তাকাই উভয়ের মুখের পানে। বোঝার চেষ্টা করি কোথায় গিয়ে দাঁড়ালো। কেউ কোন কথা বলছে না। চোখের ইশারায় শুধাই নিশাকে কি হলো।
এবার সে ইংরেজীতে বলে ‘আই উইল পে ব্যাক হার মানি হোয়েন আই গো ব্যাক। বাট শি ওয়ান্টস্ নাও।
আমি বলি ‘এ্যন্ড শি নোজ ইউ ক্যান্ট পে হিয়ার।’
‘ইয়েস।’
শুধাই ‘সো?’
‘সো আই উইল টেক হার ব্যাক চেন্নাই। শি উইল গো উইথ মি।’ এবার মহিলা বলে ওঠে।
নিশা যেন ফুঁসে ওঠে। বলে, কিন্ত আমি তোমার সাথে যাবো না।
মহিলাও চেঁচিয়ে ওঠে, আমি আমার টাকা ছাড়া তোমাকে ছাড়বো না।
নিশা তার জবাব দেয়। এবার তামিলে। আবার লেগে যায়। আমি ঘড়ি দেখি। বুঝতে পারছিনা কতক্ষন চলবে এই ঝগড়া।
একটুপর মনে হয় নিশা বেশ রেগে গেছে। উচ্চস্বরে কিছু বলতে থাকে মহিলাকে। তারপর আমার দিকে ফিরে বলে ‘ওকে লেটস্ গো।’
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.