মিনিট দশেক পড়ে থাকি দু’জন এভাবে। এরপর উঠি। টিভি অন করে লুঙ্গি নেই হাতে। বাথরুমের দিকে পা বাড়ালে নিশা বলে, আমি ওখানে যাই। তুমি এখানে চেঞ্জ করতে পারো। বলে ব্যাগ খুলে একটা ম্যাক্সি বের করে। নিয়ে বাথরুমে গিয়ে ঢোকে। আমি এই ফাঁকে জামা কাপড় পাল্টে নেই।
একটু পর বের হয়ে আসে। সাদা রংয়ে লাল ছাপা ম্যাক্সি। হাত মুখ ধুয়ে এসেছে। তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে বলে ‘ডোন্ট গেট ফ্রেশ?’
‘ইয়েস।’ বলে আমি যাই। দাঁত টাত ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে একেবারে ফ্রেশ হয়ে আসি। দেখি বিছানায় বসে নিশা টিভি চ্যানেল পাল্টে চলেছে। ফিরলে একটু হেসে বলে ‘থ্যাংক ইউ।’
মুখে ক্রিম ঘষতে ঘষতে বলি, থ্যাংক ইউ কিসের জন্য?
সব কিছুর জন্য। তুমি আমার পাসপোর্ট টিকেট ফেরত এনেছো, এখানে আশ্রয় দিয়েছো, আমার এত খেয়াল রাখছো। আসলে আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবি নাই কেউ কোনদিন এভাবে আমার টেক কেয়ার করবে।
আমি কিছু বলিনা। একটু চুপ থেকে বলে নিশা, বলো কিভাবে এর প্রতিদান দিতে পারি।
এবার মুখ খুলি, প্রতিদান! কিসের প্রতিদান!
কিছু একটা ভেবে নিয়ে বলে, আমি কি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি?
বলার ভঙ্গিতে খটকা লাগে। কি জিজ্ঞেস করতে চায়। বলি ‘ইয়েস।’
সত্যি করে বলো তো তুমি আমার জন্য এত কিছু করছো কেন!
চট করে জবাব দিতে পারিনা। একেবারে সরাসরি প্রশ্ন। জিজ্ঞেস করেই উত্তরের জন্য তাকিয়ে থাকে চোখের দিকে। আমি চোখ ফিরিয়ে নেই। কি জবাব দেবো! কেন করছি ওর জন্য এসব আমি নিজেই তো জানি না। মূহুর্ত কয়েক চুপ থেকে ধীর গলায় বলি, আমি জানি না।
হেসে বলে, কিন্তু আমি জানি।
কি জানো!
আমি জানি কেন তুমি এতসব করছো আমার জন্য।
কেন।
কারন তুমি আমাকে পছন্দ করো।
কোন কথা না বলে তাকিয়ে থাকি চোখের দিকে। হেসে চলেছে মিটি মিটি। আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে, কিন্তু তুমি তা বলতে পারো না, তাই না?
এবার সামলে নেই। হেসে বলি, তুমি ঠিকই বলেছো। এমন কোন ছেলে আছে যে তোমাকে পছন্দ করবে না! তুমি সুন্দরী আকর্ষনীয়া। অবশ্যই আমি তোমাকে পছন্দ করি।
কথাটা সবে শেষ করেছি। সঙ্গে সঙ্গে আর একটা আচমকা প্রশ্ন করে ওঠে, আমাকে তোমার পেতে ইচ্ছা করে না?
এবার বিষম খেতে হয়। কি বলতে চাইছে! কি ধরনের পাওয়া! কিসের ইঙ্গিত করতে চাইছে এ কথা বলে! কিছুই বলা হয় না আমার। তাকিয়ে থাকি মুখের দিকে অনেকটা হা হয়ে। সামান্যক্ষন চুপ থেকে বলে, তুমি খুব রিজার্ভ প্রকৃতির অথবা এখনো মনে করছো আমি একটা রাস্তার মেয়ে।
এবার গা ঝাড়া দিয়ে উঠি। বলি, দেখো, আমি রিজার্ভ প্রকৃতির নই বা তোমাকে কোন রাস্তার মেয়েও মনে করি না। যদি তাই হতো তোমাকে সাহায্য করতাম না। আমি বিশ্বাস করি তুমি একটা খুবই ভালো মেয়ে। এবং আমি এটাও জানি একজন ভদ্রলোকের কতটুকু যাওয়া উচিত কোন ইন্নোসেন্ট মেয়ের সাথে। আমি কি তোমাকে বোঝাতে পেরেছি?
অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। সে দৃষ্টিতে এক ধরনের মুগ্ধতা, বিষ্ময়।
কিছুক্ষন নীরবতা। কেউ কোন কথা বলছি না। দু’জনেরই দৃস্টি টিভির পর্দায়। সেদিকে চোখ রেখেই শুধাই, আচ্ছা একটা কথা বলো, সেই প্রথম রাতে মহিলা তোমাকে এখানে রেখে যাওয়ার পর তুমি নিজ থেকে শাড়ি খুলতে গেছিলে কেন।
প্রশ্ন শুনে চুপ হয়ে যায় নিশা। এরপর ধীরে বলে চলে, আসলে সেদিন একটা সিদ্ধান্ত নিতেই এসেছিলাম তোমার এখানে। রুমে আসার পর বকাঝকা করে টাকাটা দিয়ে যখন তুমি আমাদেরকে চলে যেতে বললে ভয় পেয়ে গেছিলাম তাহলে আমার কথাগুলো কি তোমাকে বলতে পারবো না। তোমাকে একা পেতেই জেদ ধরেছিলাম টাকা ফিরিয়ে দিতে। আসলে ওটা ছিলো একটা চাল। আন্টির টাকা দরকার। একবার তা হাতে পেয়ে গেছে, যেভাবেই হোক সে রাখবে। সে কারনেই শর্ত দিয়েছিলাম টাকা নিতে হলে আমাকে এখানে একা রেখে যেতে হবে। তুমি যে কারনেই হোক মহিলাকে টাকাটা দিতে চাইছিলে এবং বুঝলে আমাকে না রাখলে আন্টি টাকা নিতে পারছে না। আমিও সেই সুযোগটাই নিয়েছিলাম।
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.