প্রথমটায় বুঝতে পারেনা কোন কাজের কথা বলছি। বলি, পাসপোর্ট টিকেট পেয়ে গেছো। এখন তোমার ফ্লাইট বুকিং দিতে হবে না!
কথাটা শোনামাত্র এক রাশ অন্ধকার যেন মুখটায় ছেয়ে যায়। একটু অবাকই হই। যাওয়ার কথা শুনে খুশীতে উচ্ছল হওয়ার কথা। এমন মনমরা হয়ে পড়লো কেন! কোন কথা বলেনা। রিমোট হাতে তুলে নিয়ে টিভি অন করে। আমি বলি, পরের ফ্লাইট শুক্রবার।
ধীরে চোখ ফেরায় আমার দিকে। সোজা তাকায়। তারপর চোখদু’টো একটু কুচকানোমতো করে মাথা নেড়ে না বোঝায়। দৃষ্টিতে কেমন কাতরতা। আমার বিষ্ময় আরো বাড়ে। ফ্লাইট বুক করার কথা শুনে অমন করে মাথা নাড়ছে কেন! ব্যপারটা পরিষ্কার বুঝতে বলি, এর আগে আর ফ্লাইট নাই।
এবার মুখ খোলে। বলে, তুমি কি আমাকে তাড়িয়ে দিতে চাইছো?
ভালো অবাক হই এ প্রশ্নে। সামলে নিয়ে বলি, কি বলছো! তুমি চেন্নাই ফিরে যাবে। পাসপোর্ট টিকেট পেয়ে গেছো। এখানে তোমাকে তাড়িয়ে দেয়ার কথা আসবে কেন!
রহস্যমতো করে বলে, যদি বলি আমি যাবো না!
এবার আমার বিষম খাওয়ার পালা। যাবো না মানে! বলি, মাথা ঠিক আছে তো! কি বলছো তুমি!
বলে, কেন, এখানে থাকতে পারি না আমি!
এখানে থাকতে পারি না মানে!
এখানে মানে তোমার এখানে! বলে হেসে ওঠে।
এবার বুঝি ভালো একটা মজা করলো। খেললো আমার নার্ভ নিয়ে। আমিও হেসে উঠি ওর সাথে। তবে বেশ জোড়ে।
বলে, হাসছো কেন! আমি কি তোমার সাথে এখন থাকছি না!
থাকছো।
তো!
কি তো!
সমস্যা কোথায়? বলে সোজা তাকায় চোখের দিকে। তীর্যক দৃষ্টি। তারপর হাসতে হাসতেই বলে, আর কয়েকটা দিন এখানে তোমার সাথে থাকলে তোমার কি খুব অসুবিধা হবে!
বেশ ইন্টেলিজেন্ট মেয়ে! ছেলেদের মাথা খাওয়ার রূপ তো আল্লাহ দিয়েই দিয়েছেন নাচানোর কৌশলটাও মন্দ রপ্ত না। আমিও হেসে বলি, এভাবে কারো নার্ভ নিয়ে খেলা ঠিক না। হার্ট এ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।
ঠোটের কোনে একধরনের রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে, কার হার্ট এটাক হবে! তোমার! তোমার হার্ট কি সহজে আক্রান্ত হবার!
মানে!
মানেটা পড়ে বুঝলেও চলবে। এখন বলছি আর ক’টা দিন কি তোমার সাথে থাকা যাবে!
কত দিন?
মুচকি হেসে বলে, কত দিন রাখতে পারবে!
এবার কেমন যেন মজাই লাগছিলো আমার। ওর মতো করেই গভীর কন্ঠে বলি, যদি বলি যত দিন তুমি থাকতে চাও।
যদি বলি যত দিন তুমি রাখতে চাও।
যদি বলি অনন্তকাল!
থমকে যায় এবার। তাকায় গভীর দৃস্টিতে। তারপর হেসে দেয়। বলে, মেয়ে পটানোর কায়দা কৌশল বেশ ভালোই জানো দেখছি!
আমিও ছাড়ি না। বলি, ছেলেদের মাথা নষ্ট করে দেয়ার আর্ট তুমি কি কম জানো!
এবার হো হো করে হেসে ওঠে। বেশ কিছুক্ষন ধরে হেসে চলে। আমিও যোগ দেই ওর সাথে সে হাসিতে। খানিকক্ষন হেসে মন বেশ হালকা হয়ে যায়। হাসি থামিয়ে বলে, আসলে পাসপোর্ট টিকেট যখন পেয়ে গেছি এক দিন তো ফিরতে পারবোই, তাইনা? কয়েক দিন তোমার সাথে থেকে যদি শহরটা একটু ঘুড়ে দেখতে পারি সে জন্যই বলছিলাম। আর কবে আসা হয় এখানে, আদৌ কখনো হবে কিনা কে জানে!
Disclaimer:
The editorial team is not responsible for the content of the writing.