ইন্ডিয়ান গার্ল!’ পার্ট-১২
শুধাই, কিভাবে!
যখন চেন্নাই ফিরে যাবো। বাসায় আমার কিছু অলংকার আছে, একটা গাভী আছে। ওগুলো বিক্রি করলে অনেক টাকা হবে। সব তোমাকে দিয়ে দেবো। তুমি কিন্তু টাকার জন্য ভেবো না!
আমি হেসে দেই ওর কথা এবং বলার ভঙ্গিতে। হাসতে হাসতে বলি, একটা গাভীও আছে! ওটা বিক্রি করলে তুমি দুধ খাবে কি করে!
লজ্জা পেয়ে যায় আমার এ কথায়। হঠাৎ যেন বুঝতে পারে কথাটা ছেলেমানুষের মতো হয়ে গেছে। একটু চুপ থেকে মুখ তুলে বলে, তুমি কি ইন্ডিয়ান?
না। মাথা নাড়ি।
কিছু ভেবে বলে, পাকিস্তানী!
একটা আপেল ওর দিকে বাড়িয়ে ধরে বলি, আমাকে দেখে কি পাকিস্তানী মনে হয়?
নেয় আপেল। বলে, তা হয় না। তাহলে নেপালী?
হেসে ফেলি ওর বলার ভঙ্গিতে। বলি, এটাও ঠিক হলো না।
এবার একটু চিন্তায় পরে যায় যেন। তারপর শুধায়, তাহলে কোন দেশী?
বাংলাদেশের নাম শুনেছো?
কি যেন চিন্তা করে। তারপর সোৎসাহে বলে ওঠে, ও বাঙ্গালা! হ্যাঁ হ্যাঁ কলকাত্তা। কলকাত্তা কা রসগোল্লা-। শুনেছি। বলে হেসে ওঠে।
আমিও হেসে বলি, কিন্তু কলকাত্তা বাংলাদেশে নয়।
একটু অবাক হয় যেন। বলে, তাহলে কোথায়!
কলকাত্তা ইন্ডিয়াতে। বাংলাদেশ একটা ভিন্ন দেশ।
হ্যাঁ সেটা জানি। কিন্তু কলকাত্তা আর বাংলাদেশ এক নয়!
বুঝলাম এতসব সহজে ওর মাথায় ঢুকবে না। সহজ করতে বলি, আমি বাংলাদেশের কিন্তু কলকাতার নই। কলকাতা পশ্চিম বাংলার রাজধানী যেটা ভারতে।
কি যেন বুঝে একটু মাথা নাড়ে। তারপর বলে, তাই হবে হয়তো!
অদুরে ভিসিআরের ঘড়িতে চোখ যায়। রাত একটার ওপর। ও মাই গড! কোনদিক দিয়ে এত সময় পার হয়ে গেলো! ওর ব্যপারটায় এখনও কোন ডিসিশনে আসা হলো না। রাতটা থাকছে। কাল নিজের রুমে ফিরে যাওয়ার আগে একটা পথ বের করতে হবে।
হঠাৎই বিষম খেয়ে উঠি নিজের মনে। রাতটা থাকছে মানে! এখানে! এই রুমে! ও মাই গড্! একা রুমে একটা মেয়ে আমার সাথে থাকে কি করে! শোবে কোথায়! পাশের বিছানায়! আমি এ বিছানায় মেয়েটা ও বিছানায়! পাশাপাশি! ভাবতেই কান গড়ম হয়ে ওঠে।
সিরিয়াসলি ভাবতে থাকি ব্যপারটা নিয়ে। তা কি করে হয়! আবার একটা সিগারেট ধরাই। এরপর ঠিক করি আগে ওর সমস্যার ব্যপারে একটা সমাধানে আসি। পরেরটা পরে দেখা যাবে। গা ঝাড়া দিয়ে বসি। বলি, তুমি কি ভাবছো ব্যপারটা নিয়ে।
অন্য কিছু হয়তো ভাবছিলো। বলে, কোন ব্যপার?
এই যে তোমার ব্যপারটা, কিভাবে-
আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, আমার ভগবানই সে পথ ঠিক করে ফেলবে। আমি তো আমার সব তার ওপর সঁপে দিয়েছি।
সঁপে দিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না, একটা পথ বের করতে হবে। বলে সিগারেটে টান দেই। আজ একটু বেশী খাওয়া হচ্ছে। সে মূহুর্তে মনে হলো একটু ড্রিংক নিলে ভালো লাগতো। তখনকার তিন বিয়ার তো রুমে আসতে আসতেই উড়ে গেছে। এসেছি থেকে বইলো ঝড়। এতক্ষনে একটু স্বস্তিমতো লাগছে। যদিও মনে হচ্ছে বিরাট একটা দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ফেলেছি, যে কেউ শুনলে বলবে ঝামেলা। কিন্তু কি আর করতে পারতাম। মেয়েটা বড় আশা করে এসেছে আমার কাছে। পারলাম তো না ফিরিয়ে দিতে।
চুংকিংয়ের পান দোকান থেকে কেনা জ্যাক লর্ড প্যাকেট অবস্থায় টেবিলেই পরে আছে। রুমে ঢুকে সেখানে রেখেছি। এরপর তো মেয়েটাকে নিয়ে। খুলে একটু ঢালবো কি গ্লাসে! আড়চোখে তাকাই ওদিকে। ওর সামনে মদের গ্লাস নিয়ে বসবো! কি মনে করবে! দেবতার আসনে বসিয়ে পূজো করছে মনে মনে। এখন সেই দেবতা যদি-! না থাক। ফ্রিজে অবশ্য বিয়ার আছে। বিয়ারটা কি খাওয়া যায়!
আমাকে চুপ থাকতে দেখে শুধায়, আমাকে নিয়ে কি খুব টেনশন করছো?
বলি, না টেনশন না, তবে ভাবছি।
বিয়ার খাওয়ার চিন্তা ঝেড়ে ফেলি। একটু ছড়িয়ে বসি। ওকেও বসতে বলি। ও বসে ওধারের বিছানাটার এক কোনে। বলি সহজ হয়ে বসতে। একটু নড়েচরে বসে। তারপর বেশ সিরিয়াস হয়ে বলি, তুমি চেন্নাই ফিরে যেতে চাও।
বলে, ইয়েস।
এবং তোমার পাসপোর্ট টিকেট এখন ওই মহিলার কাছে।
ইয়েস।
কিন্তু চেন্নাই যেতে ও দু’টোই তোমার দরকার।
ইয়েস।
হাসি পায় ওর বারবার ইয়েস বলার ভঙ্গিতে। একেবারে ইন্নোসেন্টের মতো। একটু হেসে বলি, সবই ইয়েস তাহলে নো কোনটা!
লজ্জা পায় যেন। বলে, তুমি আমার পাশে দাঁড়িয়েছো। আমি বিশ্বাষ করি এখন আর কোন সমস্যা নাই।
একজনের পাসপোর্ট অন্যজনে রাখতে পারেনা। এ আইন সার্বজনীন। হংকংয়েও নিশ্চয়ই তা চালু। তার অর্থ মহিলা যদি জোর করে ওর পাসপোর্ট আটকে রাখতে চায় তা হবে বেআইনী। এই অন্যায়ের জন্য পুলিশের সাহায্য নেয়া যায়। একই সাথে যদি মেয়েটা অভিযোগ করে মহিলা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে দেহব্যবসা করাতে চাইছে সে গ্রেপ্তার হতে পারে। অবশ্য মহিলা যদি অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলে সে পাসপোর্ট রাখেনি, সেই সাথে তা গায়েব করে দেয়, প্রমান করা কঠিন হবে। যদিও এ নিয়ে তাকে কয়েক দিন হাজতবাস করতে হবে। এটা হচ্ছে একটা দিক। এ প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট টিকেট ফেরত পাওয়া অনিশ্চিত। দ্বিতীয় উপায়টা হচ্ছে, ভয় দেখিয়ে বাধ্য করা। থানা পুলিশের ভয় দেখানো যেতে পারে। তাতে সে ওসব দিয়ে দিতে পারে আবার হঠাৎ করে নিজেই গায়েব হয়ে যেতে পারে। গায়েব হয়ে গেলে আশা শেষ। তৃতীয় অপশনটা হচ্ছে তার সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়া। সে যা চায় তা দিয়ে দেওয়া। সে টাকা চায়। কিন্তু সেতো অনেক টাকা। এতগুলো টাকা আমি দিয়ে দেবো ওর জন্য!
না না এটা কোন কাজের কথা হবেনা। আর ও তো চাইছেও না আমি টাকা দিয়ে সাহায্য করি। তাহলে! দেশে ফিরতে হলে পাসপোর্ট টিকেট লাগবেই। তার অর্থ যেভাবেই হোক ডকুমেন্ট দু’টো মহিলার কাছ থেকে উদ্ধার করতে হবে।
কিনার করতে পারছিলাম না। সাত পাঁচ ভেবে চলি। হঠাৎ মনে হয়, মান সম্মানের ভয় দেখালে কি কাজ হতে পারে! মহিলাটির যেহেতু ওদের এলাকায় যাতায়ত আছে এবং যথেস্ট সম্মান নিয়ে চলে, ওখানে সব কিছু ফাঁস করে দেয়ার ভয় সেই সাথে এখানে থানা পুলিশের ভয়, দুইয়ে মিলে কাজ হবে কি!
সিগারেট টানি আর ভেবে চলি। চোখ টিভির ওপর। মাঝে মাঝে দেখি ওকে। ও-ও বোকার মতো তাকিয়ে টিভির দিকে। তবে আমি যখন ফিরি ওর দিকে সেও তাকায় আমার দিকে। চোখাচোখি হয়। কেউ কিছু বলি না। ওর ভাব দেখে মনে হচ্ছে পুরো দায়টা আমার। অপেক্ষা করছে কি সিদ্ধান্ত নেই।
বুদ্ধি বেরুচ্ছে না, উল্টো নতুন এক চিন্তা ঢুকলো মাথায়। সারা রাত যদি ওকে নিয়ে এভাবে জেগে বসে থাকি ঘুমাবো কখন! কাল আমার অনেক কাজ। সকাল দশটায় মহিলাকে ফোন দিতে বলেছি। তার সাথে দেন দরবারে কতক্ষন লাগবে কে জানে। এরপর ওপারে ওয়াংচাই যেতে হবে। কোরিয়ায় হেরিয়েলকে কল দিতে হবে। সে যদি বলে প্রগ্রাম হয়ে গেছে, ট্যাভেল এজেন্সিতে যেতে হবে টিকেট কাটতে। এক ফাঁকে হেলিমের অফিসে যেতে হবে। সেখানে বসতে হবে খানিকক্ষন।
বেশ কিছুক্ষন কেউ কোন কথা বলছি না। শুধু টিভি অনুষ্ঠানের হালকা আওয়াজ। হাতে ধরা সিগারেটটা শেষ হয়ে গেছিলো। ইচ্ছা হচ্ছিলো ওটার আগুন দিয়েই আর একটা ধরাই। ও বুঝতে পারে। শুধায় আস্তে করে, ‘ইউ ষ্মোক টু মাচ?’
একটু সচকিত হয়ে বলি, ‘ও নো। ইউজুয়ালি আই ডোন্ট ষ্মোক সো ফ্রিকোয়েন্ট। সাম টাইম, ইফ ফিল সো-’
‘নাও ইউ ফিলিং এ লট।’ টিভির দিকে চোখ ফিরিয়ে বলে চলে, আমি জানি তোমাকে অনেক টেনশনে ফেলে দিয়েছি।