নিজের দেশ থেকে এতো দুরে এসে সেরা আধুনিক দেশটিতে বেড়ে ওঠা আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্যে সত্যিকার অর্থে আমরা কতটুকু করতে পারছি কিংবা আদৌ কি কিছু করতে পারছি? আমরা কি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে পারছি আমাদের কথা।
আমরা এখনও মনে-প্রাণে বাংলাদেশি হিসেবেই নিজেদেরকে দেখি কিন্তু সেটি সীমাবদ্ধ থাকছে কেবল আমাদের প্রথম প্রজন্মের মধ্যেই। আমরা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক গৌরব-গাঁথা বা বাঙালির সাংস্কৃতিক চর্চা-আদর্শকে বুকে ধারণ করে নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচিতে নিজেরাই অংশ গ্রহণ করে চলেছি, সেখানে নেই আমাদের নুতন প্রজন্মের অংশগ্রহন । নিজেরাই নিজেদের শুনিয়ে চলেছি সেইসব গল্প /ইতিহাস , যা আমরা নিজেরা জানি । যাদেরকে জানানো দরকার , তাদের ছিটেফোটা অংশগ্রহনও নেই । বর্তমান নতুন প্রজন্মের অনেকেই দেশের স্বাধীনতা ও মাতৃভাষা রক্ষায় ভাষা দিবসের প্রকৃত ইতিহাসই জানে না। আমরা গড়ে তুলেছি নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশী প্রমান করার চেষ্টায় রত।অথচ এর সবই প্রতিফলিত হচ্ছে শুধু আমাদের প্রথম প্রজন্মের মধ্যেই। আমাদের নতুন প্রজন্মের উৎসাহ, আগ্রহ বা স্বতঃস্ফূর্ততা কোনটিই নেই এতে অংশগ্রহনের । এমনকি যারা বাংলাদেশী সাংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য যারা যারপরনাই চেষ্টা করছেন তাদের নিজেদের ছেলেমেয়েদেরকেও বেশীরভাগ সময় দেখা যায়না এর সাথে সম্পৃক্ত হতে ।স্বদেশের রাজনীতি থেকেও আমরা পিছিয়ে নই। এখানে পালন করে চলেছি রাজনৈতিক দলগুলোর নানা কর্মসূচী, শুধু কি তাই কাঁদা ছোড়াছুডিতেও পিছিয়ে নই । এবং খুঁজে চলেছি একজন আরেক জনের পিছনে লেগে থাকার নিত্যনতুন পন্থা, এখানেও শুধুই আমরা । নুতন প্রজন্মের অনেকেই আমার দেশের রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদদের নামও জানেনা ।আর একপক্ষ রয়েছেন যারা ব্যস্ত রয়েছেন পার্টি বা পারিবারিক গেট টুগেদারে ., আর এখানেও আমরা একা ।আমরা কি দেখতে পাচ্ছি না আমাদের পরের প্রজন্ম সরে যাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে , একটু একটু করে। কিন্তু কেন ?
1. প্রধান কারন হচ্ছে – ভাষা .. আমাদের বেশীর ভাগ অনুষ্ঠানই হচ্ছে বাংলায় আর বেশীর ভাগ নুতন প্রজন্মই বাংলায় কমফোর্টেবল নয় ।
2. আমরা তাদের বোঝার মতো করে , তাদের ভাষায় , তাদের পছন্দের প্রাধান্য দিয়ে কোন অনুষ্ঠান করি না বা তাদের মতামতও জানতে চাই না ।
3. নুতন প্রজন্মকে নিয়ে কোন অনুষ্ঠান হলেও , আমরা বলে দেই তারা কি করবে ..আর নয়তো ছবি আঁকার প্রতিযোগিতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।
4. আমরা কোথাও(কোন কমিটি , কোন সাংস্কৃতিক সংগঠন, কোন ভলেন্টিয়ার সংগঠন, রাজনৈতিক সংগঠন ইত্যাদি ) তাদের জায়গা দিচ্ছি না , তাদের সুযোগ করে দিচ্ছি না আমাদের ইতিহাস জানার বা নেতা হিসেবে গড়ে উঠার । আমরাই নিজেরাই শুধু নেতা হতে চাই ।
কিন্তু সত্যি সময় এসেছে ভাবিবার । আমরা সত্যি যদি আমাদের মাতৃভুমির প্রতি দেশাত্মবোধ ওদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই ,প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে আমাদের ইতিহাস , সংস্কৃতি কাছে পৌছে দিতে চাই , তাহলে কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ভাষায় বলতে হয় —“এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান”