সাঈদ তারেক
ওয়াকিবহাল এবং বিশেষজ্ঞ মহলের কথাবার্তায় বোঝা গেল প্রণোদনার নামে যা দেয়া হচ্ছে এটা আসলে কোন দান অনুদান নয়। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য শিল্পপতি পুঁজিপতি ব্যবসায়ীদেরকে ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হবে। এই ঋণের যে সুদ তার একটা অংশ সরকার দেবে। এটাই হচ্ছে প্রণোদনা!কি আর বলবো, করোনার চিন্তায় ঘুম নাই পাবলিকের, লকডাউনে বসে না খেয়ে থাকছে, কাজকাম হারিয়ে সব বেকার আর প্যাকেজ পায় সেই শিল্পপতি ব্যবসায়ীরা। কপালই বটে! প্রধানমন্ত্রী মহোদয়াকে বুঝিয়ে আরও একটা দান মেরে দিল!আমি বুঝিনা তেলা মাথায় তেল দিতে হবে কেন! ওদের কি কম আছে? ছয়মাস কর্মচারিদের বেতন অফিস খরচা চালাবার টাকা নাই! কাঁচামাল কেনার টাকা নাই? এলসি খোলার ডলার নাই! বারবার প্রমানিত দেশের বড় বড় যত শিল্প কারখানা কর্পোরেট হাউজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান- সবাই এক একটা নাম্বার ওয়ান ধড়িবাজ। এরাই ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটী টাকা নিয়ে মেরে দিয়েছে। লাপাত্তা হয়ে গেছে। কোন প্রতিষ্ঠানটা লোন ছাড়া আছে! ডিফল্টারের তালিকায় কার নাম নাই! শুনতে পাই প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ার এক উপদেষ্টাই নাকি দেশের একজন অন্যতম শীর্ষ ঋণখেলাফি। তারপরও এদের জন্যই প্রণোদনা। বিশাল অংক।
প্রধানমন্ত্রী মহোদয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এই টাকার নয়ছয় করা যাবে না। এই চক্র কবে তার কোন হুঁশিয়ারিটায় গা করেছে? তারপরও অপেক্ষায় থাকতে পারি দেখতে, কি গতিটা আনেন তারা অর্থনীতিতে! না আবার শুনতে হয় বেগম পাড়ায় কে কয়টা বাড়ি কেনার বুকিং দিয়েছেন!এই প্রণোদনা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নাই। সরকার মনে করেছে ওদেরকে টাকা দিলে ভাল হবে, দেবে। কিন্তু প্রণোদনা বলতে আমি বুঝেছিলাম সাধারন জনগন বিশেষ বরে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের জন্য কিছু বিশেষ সুবিধা। ট্রাম্প দুই ট্রিলিয়ন ডলার স্যাঙ্কশন করিয়েছেন তার দেশের সাধারন মানুষের জন্য। নাগরিকরা মাসে বার শ’ ডলার করে অনুদান পাবে। কোথাও যেতে হবেনা কোন তদ্বির করতে হবেনা নেতা ধরতে হবেনা- ঘরে বসেই চেক পেয়ে যাবে। এ ছাড়াও বেকার ভাতা তো আছেই। এটাই হচ্ছে স্টিমুলাস প্যাকেজ, প্রণোদনা।
কল্যানমুলক রাস্ট্রে সরকারগুলো জনগনের জন্য এভাবেই এগিয়ে আসে। হ্যাঁ আমাদের প্রণোদনায়ও পাবলিকের জন্য ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। দু:স্থ সহায়তা, ১০ টাকা কেজি চাল, এমনি আরও কিছু। বুঝলাম হতদরিদ্র বস্তিবাসী প্রান্তিক আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য এটা একটা ভাল উদ্যোগ, ওদের জন্য ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থা খাদ্য সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের মত মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের জন্য কি ব্যবস্থা? ছোটখাট কোম্পানী বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারি, দোকান মালিক- কর্মচারি, ফুটপাথের হকার, সিএনজিচালক-মালিক, পাঠাও উবারের ড্রাইভার, বাস মিনিবাস লেগুনার ড্রাইভার হেল্পার, ছোটখাট পরিবহনের মালিক, ফ্লেক্সিলোড বিকাশের এজেন্ট, টাইপিং ফটোকপিয়ার, টিউশন মাষ্টার, অটোমোবাইল মেকানিক, লেদ ওয়ার্কার, লন্ড্রি সেলুনের মালিক কর্মচারি, নির্মান সামগ্রী ব্যবসায়ী, এসি ফ্রিজ এয়ারকুলার মিস্ত্রী, ফার্ণিচার ব্যবসায়ী হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী, জুনিয়র উকিল, আদালত পাড়ার টাইপিস্ট ভেন্ডার, ছোটখাট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারি, তিন চার মাস বকেয়া বেতনের সাংবাদিক- এমনি আরও অসংখ্য পেশার মানুষ আজ দীর্ঘদিন ঘরবন্দি। কাজ নাই। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কাজ করতে পারবে- নিশ্চয়তা নাই। কিভাবে এরা বাসাভাড়া দেবে, বাজার সদাই করবে, মুদির দোকানের বকেয়া দেবে, ধারদেনা শোধ করবে!আমি নিজে যে সেক্টরটায় কাজ করি এখানে হাজার হাজার শিল্পী কলাকুশলী আছেন রোজ ভিত্তিতে কাজ করেন। এক থেকে তিন হাজার টাকা রোজ হিসাবে মাসে বড়জোর ১০/১২ দিন কাজ করতে পারেন। এভাবে ২৫/৩০ হাজার টাকা সংগ্রহ করে তাই দিয়ে কোনমতে সংসার চালান।
অনেক গানের শিল্পী নাচের শিল্পী বাদ্যযন্ত্রী আছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পারফর্মেন্স করে চলেন। আজ প্রায় দুই সপ্তাহ সব বন্ধ।এরা কিভাবে চলবে? থালা নিয়ে লঙ্গরখানায় যাবে! সন্ধ্য্যার পর মুখ ঢেকে শাহবাগ কমলাপুরে গিয়ে বসবে! ব্যাগ নিয়ে টিসিবির গাড়ীর সামনে লাইন দেবে! সে গাড়ীই বা কয়টা? সারা শহর টিসিবির গাড়ী খুঁজে বেড়াবে? অনেক বাসাওয়ালারও চলার অবলম্বন এই ভাড়ার টাকা। মাস শেষ হয়েছে। ভাড়া দেয়া-নেয়ার সপ্তাহ। আসছে ইলেক্ট্রিক বিল গ্যাসের বিল ডিশের বিল নেটের বিল। আছে ফোনের ব্যালেন্স রিচার্জ। কাজের লোকের বেতন সার্ভিস চার্জ। ছেলেমেয়েদের স্কুলের বেতন। যারা পেনশন পান এফডিআর সঞ্চয়পত্রের সুদ দিয়ে কোনমতে চালান- তারা নাহয় কিছুটা সামাল দিলেন কিন্তু যাদের সঞ্চয় নাই, মাস শেষের বেতন বা দিন শেষের আয় জমিয়ে এ ব্যয় নির্বাহ করেন তারা কি করবে?প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ার কাছ থেকে আমি এদের ব্যপারেও কিছু শুনতে চেয়েছিলাম। খিচুরির প্যাকেট না চালডাল নুন তেলের পুটলিও না, পোড়াকপাল এই মধ্যবিত্তের দরকার কিছু নগদ টাকা। আশা করি এরা নিরাশ হবে না।
97Ibrahim Khalil Khokon and 96 others69 Comments15 Shares
LikeComment
Share