বাংলাদেশের একটা দুগ্ধপোষ্য শিশুও জানতো একমাত্র প্রধানমন্ত্রী চাইলেই বেগম জিয়া মুক্তি পেতে পারেন, বর্তমান রাস্ট্র ব্যবস্থায় আর কোন বিকল্প নাই। অথচ সরকারের কিছু অর্বাচিন মন্ত্রী এতদিন কি করলেন, তারস্বরে চীৎকার করে গেলেন এ ব্যপারে সরকারের কিছু করার নাই। বিষয়টা নাকি আদালতের এখতিয়ার। যা করার তারা করবে। শেষ পর্যন্ত কি প্রমান হলো? প্রধানমন্ত্রী মহোদয়াই সুপ্রিম, একমেবদ্বিতীয়ম, বাকি সব বকোয়াচ! তিনি চাইলেই সব কিছু হয়। বেগম জিয়ার মুক্তির পুরো প্রক্রিয়াটি তার আর একটি প্রমান হয়ে রইলো না কি!
ব্রেকিং নিউজে যখন দেখলাম বেগম জিয়ার বিষয়ে বিকালে আইনমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন তখনই বুঝতে পারছিলাম সরকার আর তাকে হাসপাতালে আটকে রাখার ঝুঁকি নিতে চাইছে না। বয়ষ্কা মানুষ তার ওপর নানা জটীল রোগে ভুগছেন। করোনার এই ডামাডোলে কোন একটা কিছু হয়ে গেলে দায় বর্তাবে প্রধানমন্ত্রীর ওপর। সে জন্য তড়িঘরি তাকে ছেড়ে দিতে চাইছে। ভাল কথা।
বেগম জিয়া জেল খাটছিলেন রাজনৈতিক কারনে। যে প্রতিহিংসার রাজনীতি তিনি ’৯১য়ে চালু করেছিলেন তার অনলেই নিজে পুড়ছিলেন। একটা ঠুনকো অভিযোগে। এক এ্যাকাউন্টের টাকা অন্য এ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন। মরহুম এরশাদকেও অমনি এক হাস্যকর অভিযোগে ছয় বছর জেল খাটিয়েছিলেন তিনি নিজে। উপহারের জিনিষ রাস্ট্রীয় তোষাখানায় জমা না দেয়া। ওই অভিযোগে জেলে পাঠাতে হলে ওবায়দুল কাদের সাহেবকেও পাঠাতে হয় দীর্ঘমেয়াদী সাজা দিয়ে। এসব রাজনৈতিক মামলা, এ সবের কোন বিষয়গত ভিত্তি থাকেনা। যতদিন প্রয়োজন ততদিন থাকে। প্রয়োজন মনে না হলে যখনতখন উঠে যায়, মুক্তিও মিলে যায়।
সরকার মনে করেছে উনাকে আর জেলে রাখা দরকার নাই, ছেড়ে দিয়েছে। খুবই ভাল কথা। কিন্তু এখানে একটা কৌশলগত ভুল করে ফেলেছে। বেকুব হলে যা হয়। বেগম জিয়ার আইনজীবিদেরকে ডেকে নতুন আবেদন করিয়ে একটা নাম কা ওয়াস্তে হিয়ারিং করিয়ে আদালত থেকে জামিন দেয়া যেতো। তাতে অন্তত: দেখানো যেতো দেশে আইন আদালতের ভুমিকা বা মর্যাদা বলে কিছু আছে। আইনমন্ত্রী কি বললেন! ৪০১ বের করলেন। এই ধারা তো আগে থেকেই আছে। দলের লোকেরা যখন মানবিক কারনে মুক্তির আবেদন জানাচ্ছিলেন তখন ওই পথের কথাই বলছিলেন। তাবৎ মন্ত্রীকুল তখন কোরাস গেয়ে উঠেছিলেন- না না না, এ ব্যপারে সরকারের কিছু করার নাই! যা করবে আদালত। এখন এই আইন-আদালত যে হাসিমষ্করার সাবজেক্ট হয়ে গেলো তার কি হবে! আইনমন্ত্রী আরও কি বললেন, প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ার নির্দেশে বা ইচ্ছায় বা বদান্যতায় এই মুক্তি। এক কথায়, অনুগ্রহে। ড্যামেজ কাকে বলে! গতকাল বিকেল থেকে নিউজ ভিউজ টকশো সোস্যাল মিডিয়ায় সরকার দলীয়দের কন্ঠে শুধু প্রধানমন্ত্রীবন্দনা শুনছি। মাদার অব হিউম্যানিটি তিনি মানবিক তিনি মহান।
বেগম জিয়াকে মুক্তি দিয়ে অপার মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন। বুঝলাম, কিন্তু এসব স্তুতি স্তাবকতা করে প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ার ভাবমুর্তি কি উঁচুতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না তাকে একজন ‘ডিক্টেটর’ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে!
একদা ‘গনতন্ত্রের মানসকন্যা’ যদি ইতিহাসে নিজেকে একজন ডিক্টেটর হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান তাহলে ভিন্ন কথা, নইলে এইসব অর্বাচিন অপদার্থদেরকে বের করে দিন, চাটুকার তেলবাজদের সংষ্পর্শ এড়িয়ে চলুন, ছাগলগুলোর মুখে লাগাম লাগান!