-হোসাইন সুমন
ভোর চারটায় ঘুম থেকে উঠে সারে চারটার মধ্যেই বের হয়ে সায়েদাবাদ বাসস্ন্যান্ডে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সারে পাঁচটা। সূর্য্য মামা তখনো পূবের আকাশে উঁকি দেয়নি।
দীর্ঘ লাইন, ঘণ্টাখানেকের ধাক্কাধাক্কির পর কোন রকমে এশিয়া লাইন কিংবা তিশা পরিবহনের বাসে উঠা।
তারপর চোখে মুখে প্রশান্তির ছাপ। ফাইনালি বাড়ি যাচ্ছি শব্দটা এখন বলা যায়। ইতোমধ্যেই গ্রামে থাকা আব্বা ফোন করতে শুরু করেছে। তাঁকে আশ্বস্ত করে বলা সব ঠিক আছে। বাসের মাঝামাঝি সিট পাইছি (আসলেতো পাইছি শেষ সিটটা)।
সকাল আটটা অথচ বাস এখনো কাঁচপুর ব্রীজ পার হয়নি। আবার আব্বার ফোন, এখন কই কখন আইবি। বলি এই তো একটু জ্যাম তবে ঠিক চলে আসবো।
কুমিল্লা পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুপুর দুইটা। তাও ক্লান্তি নাই। দের ঘণ্টার রাস্তা অথচ লাগলো আট ঘণ্টা। এর মধ্যে আব্বা অন্ততঃ পনেরো বার কল করেছে। আম্মা আজ ছোট মুরগি ঝাল করে গুটি আলু দিয়ে রান্না করবে বলেই দেয়া যায়। এটা যে আমার পছন্দের তরকারি।
কুমিল্লা থেকে অটোতে উঠে এবার নিজেই কল দেই। বলি আব্বা আর এক ঘন্টা লাগবে। কন্ঠেই বুঝতে পারি আব্বার ভিতরের আনন্দটা। আব্বার জন্য পাঞ্জাবিটা আমিই কিনতাম। কখনো অপছন্দ করেননি।
বাড়ির কাছাকাছি আমি। আবার ফোন আর কতকহ্মন লাগবে, বলি এই তো পৌঁছে গেছি। ঘরে ঢুকে আব্বা আম্মার মুখমন্ডলের হাসি রেখা বলে দিতো তাঁরা যেনো আকাশের চাঁদটা হাতে পেয়েছে।
নিজেকে সামলে নিয়ে আব্বা আম্মার জন্য কেনা জামাকাপড় আর জমানো টাকাটা আব্বার হাতে দিয়ে অপেক্ষা করি পরের দিন সকালের। ঈদের দিনের সকালের।
আজ আব্বা নেই। আম্মা আর ছোটভাই দেশে। বোনেরা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ঈদ আসে বছর ঘুরে। আমার, আমাদের ঈদ আনন্দ কোথায়? ¤øান মুখে বসে থাকা আর নিরিবিলিতে নিজেকে চোখের জলে আবিষ্কার করার নামই প্রবাসী জীবন, প্রবাসী ঈদ!!!
টরোন্টো, কানাডা