- মম কাজী
কন্যা – জায়া – জননী – বঙ্গভাষায় এভাবেই বর্নিত হয়েছে নারী হাজার বছর ধরে। পরিবারের সদস্যরূপে, মায়ায় জড়িয়ে সকলকে ধরে রাখার রূপে, পরম মমতায় ভাত বেড়ে খাওয়ানোর রুপে। নারী বহু গুনের অধিকারিণী, সমস্ত রূপের ওপরে মাতৃরূপ কর্তৃত্ব করে তার মাঝে আর তাই যখনই নারী তার হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে, ভালো কিছুর উদ্দেশ্যে কোনও কাজ করে তখন তাকে ঠেকাতে চেষ্টা করলেও ঠেকিয়ে রাখা যায় না।
দীর্ঘ শীতের হিমেল দিনগুলোকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মত এবছরও শহরের নারী প্রধান সংগঠন “প্রমিনেন্ট প্রত্যয় কানাডা” বাংলাদেশের নতুন ধান এবং একই সাথে কানাডার হারভেস্ট উদযাপন করার জন্য আয়োজন করেন “নতুন ধানের পিঠা- পুলি” উৎসব। সেই সাথে থাকে তাদের সকল প্রজন্মের অংশগ্রহনকারী ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গত ১২ অক্টোবর টরন্টোর ৯ ডজ রোডে ঘটে যাওয়া এই অনুষ্ঠানে ছিল দর্শকদের উপচে পড়া ভীড়। রাত ৮.০০ টার দিকে রয়েল লিজিয়ন হলের নিচ তলায় তিল ধারন করার স্থান ছিল না। দাঁড়ানোর জায়গা করে দিতেও আয়োজকদের হিমশিম খেতে হয়েছে।
“প্রমিনেন্ট প্রত্যয় কানাডার” প্রেসিডেন্ট রফিক পাটোয়ারীর স্নেহতলে, সাধারন সম্পাদক মাসুদা পলির সার্বিক তত্বাবধানে, কার্যকরী কমিটির অসাধারন দলীয় ঐক্যমতে এবং সাধারন সদস্যদের অংশগ্রহনে প্রানবন্ত অনুষ্ঠানটি সফল হয়। স্পন্সর ও উপদেষ্টাগনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সংগঠনটির সাথে জড়িত সকলেই। আখলাক হোসেন ও নাহিদ আক্তার উপদেষ্টা হিসেবে আছেন সংগঠনটির সাথে এবং অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করেছেন রিয়েলটর আব্দুল আওয়াল, রিয়েলটর তাহেরা কবির, মর্টগেজ এজেন্ট আসাবুদ্দিন খান, এ্যাডভোকেড আফিয়া বেগম সহ আরও অনেকে। তবে এরা প্রত্যেকেই কেবল অর্থনৈতিকভাবে নয় বরং সর্বাঙ্গিকরূপে সাহায্য করেছেন। অনুষ্ঠানে রেফেল ড্র এর প্রথম পুরস্কারের স্পন্সর এবং সকল পিঠা- পুলির আয়োজন করেন হ্যাপি কার রেন্টালের সত্বধিকারী মিতা হাসান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কার দেওয়া হয় “রাঁধুনী” রেস্টুরেন্টের সৌজন্যে। চতুর্থ পুরস্কার “শী ফ্যাশন” এবং পন্চম পুরস্কার দেওয়া হয় “শাড়ী হাউজের” সৌজন্যে।
বিশিষ্ট আবৃত্তিকার কামরান করিম ও মম কাজীর উপস্থাপনায় দেশের দলীয় সংগীত দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি দর্শকদের দেন একের পর এক চমক। গান পরিবেশন করেন টরন্টোর অত্যন্ত জনপ্রিয় দুই গায়িকা তাজনিন সোহানা মৌসুমী ও ফারহানা জয়। সুদুর বাংলাদেশ থেকে আসা অতিথী প্লেব্যাক শিল্পী মরিয়ম মারিয়া মাত করেন দর্শকদের। হার্টথ্রব নোবেল আসেন তার দল নিয়ে তরুনীদের হৃদয় হরন করতে। ক্ষুদে গানের পাখি রিদি ও ক্ষুদে নাচিয়ে প্রিয়ন্তী, রাইসা ও মাইশা পরিবেশন করেন প্রানবন্ত নৃত্য। শহরের প্রখ্যাত নাচের স্কুল “ নৃত্যকলা কেন্দ্র” নিয়ে আসে তার ছাত্রদের। “প্রমিনেন্ট প্রত্যয়ের ফ্যাশন শো দেখে উত্তেজনায় ফেটে পরে দর্শক। গুলবাহার, ফারহানা, রোকেয়া পারভীন, শিলু, বিলাস, তাহেরা কবির প্রমুখের উপস্থাপনা ছিল অসাধারন। সবশেষে স্টেজ মাতান সকলের প্রিয় শিল্পী মুক্তা সারোয়ার। অনুষ্ঠানটির শব্দ পরিচালনায় ছিলেন জনাব মামুনুর রশিদ।
অনুষ্ঠানটির পেছনে দিন রাত পরিশ্রম করেছেন কিছু মানুষ । তারা হলেন কোষাধক্ষ্যা জিনাত জাহান তুলি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক তাহমিনা আক্তার, প্রচার সম্পাদক রহিমা মাহমুদ, খাবার সম্পাদক রোকেয়া পারভীন। এছাড়াও রুনা ডি ক্রুজ, শিলু, মিতা রহমান, রানু হাসান, ফেরদৌসী গুলবাহার, ঝর্না পাটোয়ারী সকলেই দায়িত্ব পালন করে গেছেন নিষ্ঠার সাথে।
নারীপ্রধান এই সংগঠনটির নারীগণ কেবল সংগঠনই নন বরং জীবনে পথ চলছেন একসাথে। সুদুর প্রবাসে খুঁজে নিয়েছেন একে অপরকে সুখ দু:খের সাথী হিসেবে। নানা বিপদের মোকাবিলা করছেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর তাদের এই মনের বন্ধনের প্রকাশই হল একসাথে করা এ ধরনের অনুষ্ঠান। তাদের এই প্রয়াস সত্যিই প্রসংসনীয়।