বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গত তিন দিন পদ্মার ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে হু হু করে লেগেছে। তারপরেও আপনারা এখান থেকে এক বিন্দু সরেননি। কীসের ভালোবাসায়, কীসের তাগিদে আপনারা তিন ধরে এখানে কাটালেন? কারণ একটাই, আপনারা মুক্তি চান। ভয়াবহ দানবের হাত থেকে মুক্তি চান। কিন্তু বন্দুক-পিস্তল নিয়ে ক্ষমতায় থাকাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য।’
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে আয়োজিত বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘ফেসবুকে কেউ যদি প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা হবে। সেই মামলার আবার জামিন নাই। এটা কোন দেশ? দাবি করেন, গণতান্ত্রিক দেশ অথচ প্রধানমন্ত্রী খারাপ কাজ করলেও সমালোচনা করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো এই দেশের জন্য যুদ্ধ করিনি। সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবো বলে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা চায় না। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য, বন্দুক-পিস্তল নিয়ে ক্ষমতায় বসে থাকা। এই দেশ কি তাদের? এই দেশ জনগণের।’
সরকারের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০০ নেতা-কর্মী গুম হয়েছে। এভাবে তারা বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায়। কিন্তু নির্মূল কী হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেয়েছে? পায়নি। আরও উত্তালে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আর কোনও রাজনৈতিক দল নেই। এটা এখন লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে করে সম্পদের পাহাড় করেছে অথচ সাধারণ মানুষকে গরীব করছে। সম্প্রতি ২৫ হাজার টাকা ঋণের জন্য ২৫ জন কৃষককে জেলে নেওয়া হয়েছে। আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংক খালি করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯টা গায়েবি কোম্পানিকে টাকা দিয়ে ব্যাংক খালি করে দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। ওই সময় গানপাউডার দিয়ে একটা বাসের ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৫টা নির্বাচন হয়ে গেল। এরা ক্ষমতায় আসার পরে কী করল? ওই ব্যবস্থা পাল্টে দিল। তারা বুঝতে পেরেছে, জনগণ তাদের পছন্দ করে না। তাই সেটা পাল্টে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে গেল।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে আসতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান চাই। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অন্যথা এই দেশে কোন নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কী যেন নাম তার? ওবায়দুল কাদের। তিনি বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধানে তোমাদের ক্ষমতায় রাখার জন্য বারবার কাটাছেঁড়া করেছো, সেই সংবিধান? সেই সংবিধান চলতে পারে না।’
ঢাকার সমাবেশ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বর পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশ করতে চাই। এতে আওয়ামী লীগের ঘুম নাই। ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এই বুঝি বিএনপি এলো, ভাবতে থাকে। আমরা নয়াপল্টনে অনেক সমাবেশ করেছি। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়েছে। তখন তো কোনো সমস্যা হয় নায়।’
বিএনপি অগ্নি সন্ত্রাস করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা নিজেরা বাস পোড়ায়, আর বলে বিএনপি করছে। বিএনপির ইতিহাসে এসব নেই।’
পুলিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘ভাই পুলিশ? আপনারা কি এই দেশের মানুষের সন্তান না? অত্যাচার নির্যাতন চালাবেন না। এই দেশের মানুষ কোনদিন অন্যায় সহ্য করেনি। পরিষ্কার করে বলছি, আপনাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই। আপনারা রাষ্ট্রের কর্মচারী, আমরা রাষ্ট্রের মালিক।’
বিএনপির ভবিষ্যৎ কর্মসূচী নিয়ে ফখরুল বলেন, ‘খবরের কাগজ খুললেই খুন, ধর্ষণ, মারামারি ছাড়া খবর নাই। আওয়ামী লীগের পাতি নেতাদের অত্যাচারে টেকা যায় না। বাড়ি দখল করে নেয়, দোকান দখল করে নেয়। আর কতকাল মানুষ এভাবে কষ্ট করবে? দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। তাই রুখে দাঁড়াতে হবে। না হয় একাত্তরের স্বাধীনতা টিকবে না। সব ধ্বংস হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়। খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর জন্য নয়। তারেক রহমানের জন্য নয়। আমাদের মন্ত্রী হবার জন্য নয়। এই আন্দোলন অধিকার ফিরে পাবার আন্দোলন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নির্বাচন হবে। সমস্ত দল অংশগ্রহণ করবে। একটা পার্লামেন্ট গঠন হবে, জাতীয় সরকার হবে। সে সরকার নতুন করে অর্থনীতিকে সজীব করে তুলবে।’
সমাবেশে আসা সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘তরুণ-যুবকদের প্রতি আহ্বান রাখতে চাই, আপনারা জেগে উঠুন। দুর্বার গতিতে আসুন। এই ভয়াবহ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।’