রেজাউল ইসলাম
ইদানীং মনের মধ্যে ভাবনা এসেছে, বাংলাদেশী-ক্যানাডিয়ান কমিউনিটিকে বিনির্মাণ এবং ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কারা ভূমিকা রাখতে পারে। সব বাংলাদেশী-ক্যানাডিয়ানদের মধ্যে এই ভাবনাটা আসা জরুরী। আসলে কারা এই ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে? খুব দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে, টরন্টোতে অসংখ্য বাংলাদেশীদের বসবাস হলেও বাংলাদেশীদের মধ্য থেকে আজ পর্যন্ত কেউ ফেডারেল সরকারে প্রতিনিধিত্বকারী হতে পারেন নি। কানাডার পার্লামেন্টে অংশগ্রহণকারী কোন বাংলাদেশী এমপি আজো আমাদের ভাগ্যে জোটে নি। এই ব্যর্থতা আমাদের।
কানাডার পার্লামেন্টে ভারতীয় আছে,পাকিস্তানী আছে, সোমালি আছে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোন বাংলাদেশী নেই। কানাডাতে বসবাসরত আমাদের ফার্স্ট জেনারেশনের মধ্যে খুব বেশি বাংলাদেশকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা দেখা যায়। বাংলাদেশের যে সব নেতিবাচক ভাবধারা রয়েছে তার থেকে তারা বেরিয়ে আসতে পারেন নি। ফলে বাংলাদেশী-ক্যানাডিয়ান কমিউনিটির মধ্যে তাদের সেই সব নেতিবাচক ভাবনাগুলি প্রকাশ পায় প্রতিনিয়ত। দৃষ্টিভঙ্গির অস্বচ্ছতা এবং সংকীর্ণতার রূপটি সব সময় সামনে চলে আসে। ফার্স্ট জেনারেশনের মধ্যে এমন কি কেউ আছেন যিনি একাধারে বাংলাদেশের সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কানাডার মেইনস্ট্রিম দৃষ্টিভঙ্গিকে ধারন করেন? ফার্স্ট জেনারেশনের বাংলাদেশী হয়েও বাংলাদেশের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বাদ দিয়ে একই সাথে কানাডার চার্টার অফ রাইটস এন্ড ফ্রিডমকে ধারন করেন? এমন কি কেউ আছেন যিনি বাংলাদেশী হয়েও কানাডাকে ধারন করেন? কানাডার মূল ফান্ডামেন্টাল বিষয়গুলিকে ধারন করেন? কানাডার মিনিস্টার অফ ফ্যামেলিস,চিড্রেন এন্ড ডেভেলপমেন্ট আহমেদ হোসেন একজন ফার্স্ট জেনারেশনের সোমালি। জন্ম ১৯৭৬ সালে সোমালিয়ার মোগাদিসুতে। আহমেদ হোসেন সিভিল ওয়ার অধ্যুষিত সোমালিয়া থেকে কেনিয়ার মোম্বাসাতে এসে ক্যাম্পে থেকেছেন, কিছুকাল নাইরোবিতে বিভিন্ন এপার্টমেন্টে থেকেছেন। আহমেদ হোসেনের দুই ভাই অনেক আগেই কানাডাতে মুভ করেছিলেন। তাদের সহায়তায় আহমেদ ১৯৯৪ সালে কানাডায় চলে আসেন। প্রথমে তিনি হ্যামিল্টনে তার এক চাচাত ভাইয়ের সাথে থাকতেন। পরে ১৯৯৬ সাল থেকে টরন্টোর রিজেন্ট পার্ক এলাকায় সেটেল্ড হন। ইয়োর্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ২০০২ সালে অনার্স সহ বিএ ডিগ্রি আর্জন করেন। ২০১২ সালে ইউনিভার্সিটি অফ অটোয়া থেকে ইমিগ্রেশন এবং ক্রিমিনাল ল’ তে পাস করে প্র্যাক্টিস শুরু করেন।
আহমেদের বিশাল জীবনবৃত্তান্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে
“He founded the Regent Park Community Council. The representative body facilitated a $500 million revitalization and redevelopment project in Regent Park, the largest such initiative in the country. During the project’s implementation, he was tasked with consulting with and protecting the interests of over 15,000 residents.”
এরপর লিবারেল পার্টিতে যোগদান, রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বিশদ আলোচনায় আর গেলাম না। আহমেদ হোসেনের উদাহরণকে সামনে নিয়ে আসলাম, কারন, তিনি সোমালি ফার্স্ট জেনারেশন থেকে তার দীর্ঘ কমিউনিটি ওয়ার্ক এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কানাডার মেইন স্ট্রিমে চলে আসতে পেরেছিলেন। তিনি নিজ দেশ এবং কানাডা উভয় দেশকেই সফলভাবে ধারন করেন। নিজ সোমালি কমিউনিটিকে বিনির্মানে কার্যকরী ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন। পাকিস্তানি ফার্স্ট জেনারেশন থেকে উঠে আসা সালমা জাহিদ স্কারবরো সেন্টার থেকে নির্বাচিত এমপি। ভারতীয় ফার্স্ট জেনারেশন থেকে উঠে আসা সোনিয়া সিধু ব্র্যামন্টনের এমপি। যাদের কথা উল্লেখ করলাম তাদের সবার আছে কানাডার মাটিতে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস এবং নিজ নিজ কমিউনিটিকে বিনির্মাণের খুব স্বচ্ছ/সুন্দর কর্মকান্ডের দীর্ঘ বর্নাঢ্য পদচারনা। বাংলাদেশী-ক্যানাডিয়ান কমিউনিটিতে ফার্স্ট জেনারেশনের এমন কি কেউ আছেন? আমি হয়ত প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টে এমপিপি হিসাবে নির্বাচিত হয়ে আসা ডলি বেগমের উদাহরণ দিতে পারি। ডলি বেগমেরও রয়েছে দীর্ঘ কমিউনিটি ওয়ার্কের সাফল্যমন্ডিত পদচারনা। “কিপ হাইড্র পাবলিক” এর মত পপুলার মুভমেন্টের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন।
তার জীবনবৃত্তান্তের সামান্য কিছু অংশ তুলে ধরছিঃ “She was co-chair of the Scarborough Health Coalition, vice-chair of Warden Woods Community Centre, a research analyst at the Society of Energy Professionals, and was the chief coordinator of the province-wide Keep Hydro Public campaign.”
সুতরাং দেখাই যাচ্ছে যে, কানাডার জাতীয় পর্যায়ে উঠে আসার জন্য যোগ্যতা এবং অতীত কর্মকান্ডের প্রয়োজনীয়তা অনোস্বীকার্য। আমরা প্রভেন্সিয়াল পার্লামেন্টে একজন বাংলাদেশী-ক্যানাডিয়ানের উঠে আসার ইতিহাস জানি কিন্তু এখনো ফেডারেল সরকারের পার্লামেন্টে কোন বাংলাদেশী-ক্যানাডিয়ানের উঠে আসার ইতিহাস জানি না। অনেকগুলি সীমাবদ্ধতার কারনে আমাদের সেই প্রত্যাশিত ইতিহাস রচিত হচ্ছে না। সেই সীমাবদ্ধতা গুলিকে চিহ্নিত করে আমাদেরকে পথ করে নিতে হবে। বিভক্তি নয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হবে, সংকীর্ণতা নয় উদারতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এবং কানাডাকে ধারন করতে হবে।