হাবিব উল্লা দুলাল
ইতিহাস: প্রাচীনকাল থেকেই সুন্দরবনের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকগণ মনে করেন প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে গাঙ্গেয় বদ্বীপ এলাকায় সুন্দরবনের সৃষ্টি হয়। ‘Nicholas Paimenta’ নামীয় একজন মিশনারীর ভ্রমণ কাহিনীতেও সুন্দরবনের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায়।
মোঘল আমল (১২০৩-১৫৩৮) থেকেই সুন্দরবনকে স্থানীয় রাজাদের নিকট পত্তন/ইজারা দেওয়া হতো।
কালের বিবর্তনে বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ (Mangrove: গরান গাছ) বনকে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়। মুঘল সম্রাট আলমগীর-২ এর নিকট হতে ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি উক্ত সুন্দরবনের স্বত্ব লাভ করে এবং ১৭৬৪ সালে সার্ভেয়ার জেনারেল কর্তৃক জরিপ পূর্বক মানচিত্র তৈরি করে।
বেঙ্গল বন বিভাগ (Forest Department in Bengal) স্থাপনের পর বন আইন-১৮৬৫ অনুযায়ী ১৮৭৫-১৮৭৬ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৮৬৯ সালে সুন্দরবনকে জেলা প্রশাসনের নিকট হতে খুলনা শহরে নবসৃষ্ট বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের নিকট ন্যস্ত করা হয় এবং ৬৯-৭৩ সালে সুন্দরবনে প্রথম জরিপ করা হয়।
বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে “সমুদ্র বন” বা “চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)” (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে।
তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।
সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম।গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় গরান (Mangrove) বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের অন্তর্ভুক্ত।
সুন্দরবনের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য ১৮৬৩ সাল হতে ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত বহু ব্রিটিশ বন কর্মকর্তা সুন্দরবন পরিদর্শন করেন এবং সুন্দরবনকে সংরক্ষণ ও গাছ এবং কাঠ (Lumber) আহরণের বিষয়ে আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেন।
বাংলাদেশের অংশ ৬,০১৭ বর্গ কি.মি. আয়তনের সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম বদ্বীপ, দীর্ঘতম লবণাক্ত জলাভূমি এবং জীব বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র (Eco System)। এখানে ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিদ্যমান, যার মধ্যে আছে ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং সর্বোপরি বিশ্ব বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger Panthera Tigris – Botanical Name), প্রধান সরীসৃপ জাতিগুলোর মধ্যে আছে নোনা পানির কুমির, অজগর, গোখরা, গুইসাপ, সামুদ্রিক সাপ, গিরগিটি, কচ্ছপ এবং অন্যান্য। প্রায় ৩০ এর অধিক প্রজাতির সাপ সুন্দরবনে পাওয়া যায়।
১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে “World Heritage Site” হিসেবে ঘোষণা করে। পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি গরান বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান যথেষ্ট জটিল। কারণ দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং ভারত জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের বৃহত্তর অংশটি (৬২%) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; পূর্বে বলেশ্বর নদী আর উত্তরে বেশি চাষ ঘনত্বের জমি বরাবর সীমানা।
উঁচু এলাকায় নদীর প্রধান শাখাগুলো ছাড়া অন্যান্য জলধারাগুলো সর্বত্রই বেড়িবাঁধ ও নিচু জমি দ্বারা বহুলাংশে বাধাপ্রাপ্ত। প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের আয়তন হওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কি.মি. (২০০ বছর আগের হিসাবে)। কমতে কমতে এর বর্তমান আয়তন হয়েছে পূর্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান। বর্তমানে মোট ভূমির আয়তন ৪,১৪৩ বর্গ কি.মি. (বালুতট ৪২ বর্গ কি.মি.-এর আয়তনসহ) এবং নদী, খাঁড়ি ও খালসহ বাকি জলধারার আয়তন ১,৮৭৪ বর্গ কি.মি.।
সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা জল ও মিঠা জলের মিলন স্থান। সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা জল, বঙ্গোপসাগরের নোনা জল হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হলো এ এলাকাটি।
স্বাদুজলের জলাভূমির বনাঞ্চল
সুন্দরবনের স্বাদুজল জলাভূমির বনাঞ্চল বাংলাদেশের ক্রান্তীয় আদ্র-সপুষ্পক বনের অন্তর্গত। এই ধরণের বন নোনাজলযুক্ত জলাভূমির উদাহরণ। স্বাদুজলের জীবমন্ডলের জলে সামান্য নোনা এবং বর্ষাকালে এই লবণাক্ততা কিছুটা হ্রাস পায়, বিশেষ করে যখন গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদের জলের কারণে নোনাজল দূর হয় এবং পলিমাটির পুরু আস্তরণ জমা হয়।
এটি সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশে। অর্থাৎ বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে সুন্দরবন অবস্থিত।
হাজার বছর ধরে বঙ্গোপসাগর বরাবর আন্তঃস্রোতীয় প্রবাহের দরুণ প্রাকৃতিকভাবে ওপরিস্রোত থেকে পৃথক হওয়া পলি সঞ্চিত হয়ে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন। এর ভৌগোলিক গঠন ব-দ্বীপীয়, যার উপরিতলে রয়েছে অসংখ্য জলধারা এবং জলতলে ছড়িয়ে আছে মাটির দেয়াল ও কাদা চর। এতে আরো রয়েছে সমুদ্র সমতলের গড় উচ্চতার চেয়ে উঁচুতে থাকা প্রান্তীয় তৃণভূমি, বালুতট এবং দ্বীপ, যেগুলো জুড়ে জালের মত জড়িয়ে আছে খাল, জলতলের মাটির দেয়াল, আদি ব-দ্বীপীয় কাদা ও সঞ্চিত পলি। সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার।
জৈবিক উপাদান
জৈবিক উপাদানগুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামুদ্রিক বিষয়ের গঠন প্রক্রিয়া ও প্রাণী বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে। সৈকত, মোহনা, স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, কাদা চর, খাঁড়ি, বালিয়াড়ি, মাটির স্তূপের মত বৈচিত্র্যময় অংশ গঠিত হয়েছে।
সুন্দরবনের প্রাণীজগৎ
সুন্দরবনে ব্যাপক প্রাণীবৈচিত্র বিদ্যমান। প্রাণীবৈচিত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার জন্যে সুন্দরবনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ অভয়ারণ্যের মত, যেখানে শর্তহীনভাবে বনজ সম্পদ সংগ্রহ করা যায় না এবং বন্য প্রাণীর জীবনে সামান্যই ব্যঘাত ঘটে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রাণী সম্পদ হ্রাস পেয়েছে এবং সুন্দরবনও এর বাইরে নয়। তারপরও সুন্দরবন বেশ অনেকগুলো প্রাণী প্রজাতি ও তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতিদের টিকিয়ে রেখেছে।
এদের মধ্যে বাঘ ও শুশুককে প্রাধাণ্য দিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে প্রাণীবৈচিত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন উন্নয়নের। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশে থাকা এই দুইটির অবস্থা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সামগ্রিক প্রাণী বৈচিত্র এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার শক্তিশালী সূচক। ২০০৪ সালের হিসেব মতে সুন্দরবন ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ।
সুন্দরবনে নীল ঘাড় বিশিষ্ট মাছরাঙাও দেখা যায়। সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। বন্য প্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালনক্ষেত্রের ওপর মানুষের সম্পদ সংগ্রহ ও বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক। কচ্ছপ (River terrapin – Betagur baska, Indian flap-shelled turtle – Lissemys punctata এবং Peacock soft-shelled turtle – Trionyx hurum), গিরগিটি Yellow monitor – Varanus flavescens ও Water monitor – Varanus salvator), অজগর (Python molurus) এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera Tigris) সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
সুন্দরবনের কুমির
এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি সংরক্ষিত, বিশেষ করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ দ্বারা। বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ (Hog deer – Axis procinus ও Swamp deer – Cervus duvauceli), মহিষ (Bubalis), গন্ডার (Javan Rhinoceros – Rhiniceros Sondaicus ও Single horned Rhinoceros – Rhinoceros Unicornis) এবং কুমিরের (Mugger Crocodile – Crocodylus Palustris) এর মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে ২১ শতকের শুরু থেকে।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিচিত্র জীব বৈচিত্রের আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল। এই থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান (যেমন – ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী) এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল। সরকারের মতে এই প্রাণী বৈচিত্রের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে। পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখি বিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন একটি স্বর্গ।
সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়। দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায়। শীতকাল হচ্ছে সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
একজন দর্শনার্থীর পক্ষে পুরো সুন্দরবন ঘুরে দেখা সম্ভব না হলেও এই বনের বিশেষ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে । যে স্থানগুলো ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের ভ্রমণ আকাঙ্খা মিটানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হতে পারে। কারণ এসব স্থান গুলো তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্রময়। আর তারই আকর্ষণে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক, গবেষক দর্শনার্থী সুন্দরবনের এই সমস্ত স্থানে ভ্রমণ করতে আসেন।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক সুন্দরবনের এইসব বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলোর নাম ও সংক্ষিপ্ত বিবরণী।
তবে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় খরচের বিষয়ে কিছু ধারণা পেতে পারেন এখান থেকে।
১. কাটকা: সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কাটকা অন্যতম। এটি সুন্দরবনের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত। মঙলা সমুদ্রবন্দর থেকে প্রায় ৯০ কি. মি. দূরে অবস্থিত এবং সু্ন্দরবনের পূর্ব অভয়ারণ্যের মধ্যে প্রধান কেন্দ্র এটি। কাটকায় রয়েছে বনবিভাগের একটি রেস্ট হাউজ। এর আশপাশে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় খাল। যেখানে নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করা যায় এবং সবচেয়ে কাছ থেকে উপভোগ করা যায় সুন্দরবনের আসল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
খালের দুই ধারে দেখা যায় অসংখ্য চিত্রা হরিণ মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এছাড়াও বানর, উদবিড়াল, বনমুরগি ও নানান ধরনের পাখির বিচরণ দেখা যায়। মাঝে মাঝে রাজকীয় ভঙ্গিতে বাঘের চলার দৃশ্য ও গর্জন শোনা যায়। কাটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে দেখা যায় বন্য প্রানীর অপূর্ব সব দৃশ্য এবং বাঘের হরিণ শিকারের দৃশ্য যা পর্যটকদের আকৃষ্ট করে প্রতিনিয়ত।
২. করমজল: কেউ যদি অল্প সময়ের মধ্যে সুন্দরবন ভ্রমণ করে ফিরে আসতে চান তাহলে তার জন্য সুন্দরবনের করমজল স্থানটি সবচেয়ে উপযোগী। কারণ করমজল স্থানটি মঙলা সমুদ্রবন্দর থেকে খুব নিকটবর্তী হওয়ায় মাত্র ৩ ঘন্টার মধ্যে এটি ভ্রমণ করে ফিরে আসা যায়। এখানে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী ভ্রমণ করতে আসেন।
এখানের প্রধান প্রধান আর্কষণ গুলো হলো: হরিণ, বানর, কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পশুর নদী, জেলেদের মাছ শিকারের দৃশ্য ইত্যাদি। এছাড়াও বাংলাদেশের একমাত্র কুমির প্রজনন কেন্দ্রও এই করমজলে অবস্থিত যা পর্যটকদের দারুণ ভাবে আকর্ষণ করে।
৩. কচিখালি: মঙলা থেকে প্রায় ১০০ কি. মি. দূরে অবস্থিত কচিখালি যা অন্যতম দর্শনীয় স্থান এই কচিখালি। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালি সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালি স্টেশন পর্যন্ত পায়ে হাঁটা পথ। এই পথের পাশে ঘন বন যেখানে দেখতে পাওয়া যায় বাঘ, হরিণ, বানর, বিষধর সাপ, শুকর ইত্যাদি। এই পথে হাটার সময় কিছুটা ভয় ভয় মনে হতে পারে তবে সাহসী পর্যটকদের প্রথম পছন্দ এই কচিখালি।
কচিখালির প্রধান আর্কষণ সমূদ্র সৈকত। যে সৈকতের নিরিবিলি পরিবশে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে যে কাউকে। এছাড়াও এই সৈকতে মাঝে মাঝে বাঘের বিচরণও লক্ষ্য করা যায় এবং পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে।
৪. হাড়বাড়িয়া: মঙলা থেকে মাত্র ২০ কি. মি. দূরে হার বাড়িয়া নামক স্থানটি অবস্থিত। যার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই এই স্থানটির প্রধান আর্কষণ। এখানে কাঠের তৈরি দুইটি ট্রেইলসহ গোলাঘর, যার একটি পুকুর সংলগ্ন ও কাঠের তৈরি পুল ইত্যাদি রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে নানান প্রজাতির বন্য পশু পাখি ও উদ্ভিদের সমারোহ।
নীল কমল হিরনপয়েন্ট: মঙলা থেকে প্রায় ১০০ কি.মি. দূরে অবস্থিত নীল কমল নামক স্থানটি। এটি সুন্দরবন দক্ষিণ অভয়ারণ্যের একটি বিখ্যাত প্রশাসনিক কেন্দ্র। এখানে সবচেয়ে বেশি হরিণ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও বাঘ, শুকর, বানর, উদবিড়াল, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, নানা বর্ণের পাখির ঝাঁক ইত্যাদিরও বিচরণ লক্ষ্যনীয়।
নীল কমলের সামনে দিয়ে বয়ে গেছে একটি ছোট খাল। ১৯৯৭ সালে ঘোষিত ৫২২তম সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের ফলক এখানেই উম্মোচন করা হয়। এখানে রয়েছে বন বিভাগ কর্তৃক একটি রেস্ট হাউস যেখানে দর্শণার্থীদের থাকার সু-ব্যবস্থা রয়েছে।
৫. দুবলার চর: সুন্দরবনের সর্ব দক্ষিণে এই স্থানটি অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত এই দ্বীপটি মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাত করণের এক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিবছর বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের জেলেরা অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করে এবং সাগরে মাছ ধরে এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে বাজারে বিক্রি করে।
সুন্দরবনের মৎস সম্পদ সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে এই স্থানটি সর্বোৎকৃষ্ট স্থান। এছাড়াও এখানে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় সমূদ্র সৈকত। এখানে প্রতি বছর নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসের রাস পূর্ণিমায় রাস মেলা বসে, উক্ত রাস মেলায় হাজার হাজার দেশী বিদেশেী পর্যটকের আগমন ঘটে।
৬. মান্দার বাড়িয়া: সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে এ অভয়ারণ্য অবস্থিত। এখানকার গভীর অরণ্যে ছোট ছোট ক্ষুদ্র জীব থেকে শুরু করে রয়েছ বাঘ, হরিণ, বন্যশুকুর, বানর, কুমির, কচ্ছপ, সাপ, কাকড়া ইত্যাদির সমারোহ। এছাড়াও এই স্থানের আরো একটি আর্কষণীয় জিনিস হলো সাগরের বড় বড় ঢেউ। এখানে সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়া বিশাল বিশাল ঢেউগুলো দেখতে সত্যি খুবই মনমুগ্ধকর। এছাড়াও প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য ও জীব বৈচিত্রের ভরপুর দুর্গম এ স্থানটি।
নদী পথে : খুলনা লঞ্চঘাট খেকে লঞ্চযোগে সুন্দর বন যাওয়া যাবে। রাতে ও সকালে লঞ্চ রয়েছে।
সড়ক পথে : খুলনা খেকে বাসযোগে কয়রা হয়ে সুন্দরবন যাওয়া যায়।
হাবিব উল্লা দুলাল