যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশের একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও একটি হাই-টেক পার্কে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্বোধনী আয়োজনে পাঠানো এক বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমেরিকান উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোকে শিল্প-কারখানা স্থাপনের সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিচ্ছি। বাংলাদেশ এখন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে আইসিটি শিল্পের জন্য ২৮টি হাই-টেক পার্ক স্থাপন করছে। আমরা মার্কিন কোম্পানিগুলোকে একটি হাই-টেক পার্ক নির্মাণের মাধ্যমে আইসিটি খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিচ্ছি।’
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আরও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উভয় দেশেরই পর্যাপ্ত নীতিগত সমর্থন আছে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দ্রুত বর্ধনশীল অভ্যন্তরীণ বাজার এবং ৪ বিলিয়ন ভোক্তার বিরাট আঞ্চলিক বাজারের সঙ্গে বর্ধনশীল যোগাযোগ ব্যবস্থা এ দেশেকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য প্রতিশ্রুতিশীল গন্তব্যে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য টেকসই ভৌত অবকাঠামো, আইনি ও আর্থিক সুবিধা দিচ্ছি। আমার সরকার বাংলাদেশে দ্রুত শিল্পায়ান ঘটাতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও উন্নয়নের পথযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র সব সময়ই একটি শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে আমাদের পাশে থেকেছে। এটা আমাদের রপ্তানির সর্ববৃহৎ গন্তব্য, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস, আমাদের দীর্ঘদিনের উন্নয়ন অংশীদার এবং প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।’
বাংলাদেশ প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে, যার ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক। এ তথ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিকারকরা গড়ে ১৬ শতাংশ শুল্ক দেয়। আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সুতা, সয়াবিন ও গমের মতো শিল্প-কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য ক্রয় করি। বাংলাদেশে এসব পণ্য বিনা শুল্কে আমদানি হয়।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের রূপকল্প ২০২১ এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সরকারি কাজে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে প্রযুক্তির ব্যবহার সক্ষম একটি আধুনিক বাংলাদেশের রূপকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সহায়তার জন্য আমি আমার আইসিটি উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৬০টি দেশে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের আইসিটি পণ্য রপ্তানি করে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আইসিটি পণ্য রপ্তানি হয়।
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্বোধনী আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে ব্যবসায়ী নেতারা অংশ নেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ব্যাপারে তাদের ক্রমবর্ধমান ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। আমি আশা করছি, এটা আমাদের দুই দেশের মধ্যকার অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে আরও সম্প্রসারিত করতে সহায়ক হবে।’
সরকার আগামী দিনগুলোতে ইউএস-বাংলাদেশে বিজনেস কাউন্সিলের কর্মকাণ্ডকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দেবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্সের দক্ষিণ এশিয়ার সিনিয়র সহ-সভাপতি নিশা দেশাই বিসওয়াল, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ড. শেখ ফজলে ফাহিম, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এবং বাংলাদেশে সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট বক্তব্য রাখেন।
তথ্য: বাসস