কৃষি, শুল্ক, প্রতিরক্ষা, আইসিটি, সাইবার নিরাপত্তা, শিল্পোন্নয়ন, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, জাহাজ পুনর্ব্যবহার এবং মেট্রোরেল বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে ৮ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ ও জাপান।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। চুক্তি সইয়ের আগে এখানে দুই প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন।
বৈঠক শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
৮ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক হলো-
১. কৃষি গবেষণা, উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে জাপানের কৃষি, বন এবং মৎস্যবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রণালয়।
২. শুল্ক বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে একটি চুক্তি সই করেছে জাপান সরকার এবং বাংলাদেশ সরকার। এ চুক্তির আওতায় দুই দেশ শুল্ক আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা, শুল্ক অপরাধ প্রতিরোধ, তদন্ত ও দমন করা এবং শুল্ক পদ্ধতির সরলীকরণ ও সমন্বয়ে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে।
৩. ‘বাংলাদেশ-জাপান শিল্পোন্নয়ন অংশীদারিত্ব’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং শিল্প মন্ত্রণালয়। এ চুক্তির আওতায় ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে মসৃণ উত্তরণ এবং ‘ভিশন ২০৪১’ এর আওতায় ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রচেষ্টায় সহায়তা হিসেবে সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের বাণিজ্য কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে এবং যৌথভাবে শিল্পের মানোন্নয়নের সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণ করার জন্য একটি কাঠামো স্থাপন করতে সহযোগিতা হবে।
৪. প্রতিরক্ষা বিষয়ে সহযোগিতা করতে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান সরকার। এই সমঝোতার আওতায় প্রতিরক্ষা সংলাপ, সফর বিনিময়, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, কোর্স, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, প্রযুক্তি হস্তান্তরসহ প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত অন্যান্য কার্যক্রম এবং সহযোগিতা জোরদার করা হবে।
৫. মেট্রোরেল ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এ সমঝোতা স্মারকের আওতায় মেট্রোরেল নীতি, আইন এবং প্রবিধানে সহযোগিতা; অবকাঠামো, রোলিং স্টক এবং সিস্টেমের জন্য প্রযুক্তি; নিরাপত্তা নীতি এবং ব্যবস্থাপনা; দুর্যোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সহযোগিতা হবে।
৬. জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প সেক্টরে একটি সহযোগিতা স্মারক সই করেছে জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ ২০২৩ সালের মধ্যে জাহাজের নিরাপদ ও পরিবেশগতভাবে সঠিক পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। এক্ষেত্রে একটি ট্রিটমেন্ট, সংরক্ষণ ও নিষ্ক্রিয়করণ সুবিধা প্রতিষ্ঠাসহ হংকং ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহায়তা দেবে জাপান।
৭. একটি সহযোগিতা স্মারক সই করেছে জাপান পেটেন্ট অফিস এবং বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির পেটেন্ট, ডিজাইন এবংট্রেডমার্ক বিভাগ। এর আওতায় তথ্য ও চর্চার আদান-প্রদানের মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার (আইপিআর) সিস্টেম এবং আইপিআরের গুরুত্ব বিষয়ে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে করা, শিল্প ও উদ্ভাবনের বিকাশে আইপিআর সিস্টেমের উন্নতি।
৮. সাইবার নিরাপত্তাসহ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে একটি সহযোগিতা স্মারক সই করে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশাদার সঙ্গে বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজপ্রাসাদে (ইমপেরিয়াল প্যালেস) জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার আমন্ত্রণে মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) দ্বিপাক্ষিক সফরে টোকিও আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ যাত্রায় তিন দেশ সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপান সফর শেষে শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টোকিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে যাবেন। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে বৃহস্পতিবার (০৪ মে) যুক্তরাজ্যের লন্ডন যাবেন প্রধানমন্ত্রী। তিন দেশ সফর শেষে ৯ মে সকালে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।