তাসরীনা শিখা
‘আমায় গেঁথে দাও না মাগো, একটি পলাশ ফুলের মালা
আমি জনম জনম রাখবো ধরে ভাই হারানোর জ্বালা’
আজ ২১সে ফেব্রুয়ারি।
ফেব্রুয়ারি মাস বাংলা ভাষা রাষ্টীয় করন করার দাবীতে আন্দোলনের মাস। ১৯৫২ সালের ২১ সে ফেব্রুয়ারী বাংলাকে রাষ্টীয় ভাষা করার দাবীতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে মিছিল করা হয়। সে মিছিলে পুলিশ গুলি বর্ষণ করে। সে গুলিতে প্রান দেন সালাম, বরকত ও রফিক।১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২১ সে ফেব্রুয়ারী ভাষা দিবসে পরিনিত হয়।
সেই শহীদদের রক্ত স্রোতের পথ ধরে হেঁটে বাংলা ভাষাকে হৃদয়ে ধারণ করে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছিলাম আমাদের স্বাধীনতা লক্ষ্যে।
১৯৫২ এর পর থেকে শুরু হয় নানা সংগ্রাম নানা প্রতিবাদ বাঙ্গালীর দাবী আদায়ের জন্য । একে একে আসে ৬২ইর শিক্ষা আন্দোলন ,৬৬ইর ছয় দফা আন্দোলন ৬৯এর গণ আন্দোলন তারপর ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ।
আমাদের সংগ্রামের সূত্রপাত করে দিয়েছেন ভাষা সৈনিকেরা । তাঁরা আমাদের তরী ভাসিয়ে দিয়েছেন আর আমরা সে তরীতে পাল তুলে এগিয়ে চলেছিলাম। আমরা পেয়েছি নিজের প্রাণের ভাষা স্বাধীন দেশ বাংলাদেশ । এই মাসটিতে আমরা বিশেষ কোরে স্মরণ করি আমাদের ভাষা সৈনিকদের ।১৯৫২ সালের ভাষা সৈনিকদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।
’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’।
তার ৪৭ বছর পরে ১৯৯৯ সালে ১৭ই নভেম্বর আমরা বাংলা ভাষাকে” আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা” হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করি।
এর পিছনে যে ঘটনা আছে সেটা হয়তো অনেকের জানা নেই। ১৯৯৮ সালে আরেকজন রফিক ( রফিকুল ইসলাম) ক্যানাডায় বসে ভেবেছিলেন বাংলা ভাষাকে কি ভাবে সারা বিশ্বে তুলে ধরা যায় । তিনি কুমিল্লা নিবাসী একজন মুক্তি যুদ্ধা ছিলেন। ১৯৯৮ সালে ২০ সে জানুয়ারী রফিকুল ইসলাম তার সহ যোদ্ধা সালামকে সাথে নিয়ে একটি সংগঠন দাড় করান। যার নাম দেন” Mother language of the world”. এক বছর পরে ১৯৯৯ সালে রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সামাদ ইউনেস্কোর ভাষা বিভাগের জোসেফ কাভের সাথে দেখা করেন। জোসেফের পরামর্শে তাঁরা ইউনেস্কোর আনা মারিয়ার সাথে দেখা করেন। তিনি তাদের কথা মন দিয়ে শোনেন। পরে তার পরামর্শে ভারত, ক্যানাডা , ফিনল্যান্ড , হাঙ্গারি এবং বাংলাদেশ এই ৫টি সদস্য দেশ থেকে ভাষা প্রস্তাবটি আনার ব্যবস্থা করেন। অনেক পরিশ্রমের পরেও ইউনেস্কোর প্রস্তাব উত্থাপনের শেষ দিন ১৯৯৯ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রস্তাবটি পৌঁছায় নি। অবশেষে ১৭ই নভেম্বর ১৯৯৯ সালে এক ঐতিহাসিক দিনের শুভ সুচনা হোল । প্রস্তাবটি উত্থাপন হলে ১৮৮ টি দেশ এতে সমর্থন জানালো ।ইউনেস্কো সভার সর্ব সম্মতি ক্রমে ২১ সে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবস হিসাবে প্রস্তাব গৃহীত হোল । এ ভাবেই আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা দিবসে পরিনত হোল ।
২০ সে নভেম্বার ২০১৩ সালে আমাদের শ্রদ্ধেয় রফিকুল ইসলাম আন্তর্জাতিক মাতৃ ভাষা বাস্তবায়নের সৈনিক ক্যানাডার ভেনকুভারে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন।
ধন্যবাদ।