দেশীয় শোবিজের আলোকিত একটি নাম সুবর্ণা মুস্তাফা। একাধারে তিনি একজন অভিনেত্রী, প্রযোজক ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য। আশির দশকে নিজেকে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তিনি প্রখ্যাত অভিনেতা গোলাম মুস্তাফার কন্যা এবং ক্যামেলিয়া মুস্তাফার বোন।
তার জীবন থেকে পেরিয়ে গেছে ৬১টি বছর। বুধবার (২ ডিসেম্বর) বাষট্টিতে পা দিলেন এই নন্দিত অভিনেত্রী।
১৯৫৯ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তার পৈত্রিক নিবাস ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নে। পিতা গোলাম মুস্তাফা ছিলেন প্রখ্যাত অভিনেতা ও আবৃত্তিশিল্পী। তার মা পাকিস্তান রেডিওতে প্রযোজনার দায়িত্বে ছিলেন। মায়ের হাত ধরে মাত্র ৫/৬ বছর বয়সে বেতার নাটকে কাজ শুরু করেন তিনি। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথম টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত শিশুশিল্পী হিসেবে নিয়মিত টেলিভিশনে কাজ করেন এই অভিনেত্রী।
সত্তর দশকে ঢাকা থিয়েটারে নাট্যকার সেলিম আল দীনের নাটক ‘জন্ডিস’ ও ‘বিবিধ বেলুন’-এ অভিনয় করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। আশির দশকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ুন ফরীদির সঙ্গে তার জুটি ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। নব্বই দশকে বরেণ্য কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ ও ‘আজ রবিবার’ নামে টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও খ্যাতি অর্জন করেন। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে মুনা চরিত্রে অভিনয় করেন সুবর্ণা। যা এখনো দর্শক মনে গেঁথে আছে।
১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন এই অভিনেত্রী। ১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৮৪ সালে ‘নয়নের আলো’ সিনেমার মাধ্যমে সব শ্রেণির দর্শকের মনে নাড়া দেন সুবর্ণা মুস্তাফা। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র হলো—‘ঘুড্ডি’ (১৯৮০), ‘নয়নের আলো’ (১৯৮৪), ‘পালাবি কোথায়’ (১৯৯৭), ‘গহীন বালুচর’ (২০১৭) প্রভৃতি।
১৯৮৩ সালে ‘নতুন বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন সুবর্ণা মুস্তাফা। অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে।