নরওয়ের নোবেল কমিটি শুক্রবার অসলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে ১০১তম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য জাতিসংঘের এ সংস্থার নাম ঘোষণা করে।
নোবেল কমিটির প্রধান বেরিট রেইস-অ্যান্ডারসেন বলেন, আন্তর্জাতিক সংহতি ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি দৃশ্যমান।
“ক্ষুধামুক্তির লড়াই, যুদ্ধ ও সংঘাত কবলিত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা এবং যুদ্ধ ও সংঘাতে অস্ত্র হিসেবে ক্ষুধার ব্যবহার রোধে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করায় নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে শান্তিতে ২০২০ সালের নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
নোবেল জয়ের খবরের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি টুইট করে বলেছে, “বিশ্বজুড়ে ১০ কোটির বেশি শিশু, নারী আর পুরুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে জীবন উৎসর্গ করেছেন ডব্লিউএফপির কর্মীরা। এই পুরস্কারে তাদের কাজ স্বীকৃতি পেল।”
আর সেই মুহূর্তে নাইজার সফরে থাকা ডব্লিউএফপির প্রধান ডেভিড বিয়াসলে সোশাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন, “জীবনে এই প্রথম বোধ হয় আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।… এটা অবিশ্বাস্য।… ওয়াও! ওয়াও! ওয়াও!”
কী করছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি?
১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধা দূরীকরণ ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাহায্য সংস্থা। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৮৮টি দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে এ সংস্থা খাদ্য যুগিয়েছে।
২০১৫ সালে ক্ষুধামুক্তিকে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়। আর সেই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টায় জাতিসংঘের প্রাথমিক হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব পরিস্থিতি খারাপ দিকে মোড় নিয়েছে। গতবছর সাড়ে ১৩ কোটি মানুষ চরম খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। এই সংখ্যা বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর এর মূল কারণ হল যুদ্ধ আর সশস্ত্র সংঘাত।
চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস মহামারী খাদ্য সঙ্কটে ভোগা মানুষের সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে। ইয়েমেন, ডিআর কঙ্গো, নাইজেরিয়া, সাউথ সুদান ও বুরকিনা ফাসোর মত দেশে সংঘাত আর মহামারীর এই যৌথ বিপদ অভুক্ত থাকা মানুষের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে বাড়িয়ে তুলেছে।
নোবেল কমিটি বলছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এই মহামারীর মধ্যেও ক্ষুধার বিরুদ্ধে তাদের লড়াই আরও জোরদার করেছে।
ডব্লিউএফপি নিজেরাই বলে, যতদিন না ভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে, ততদিন সঙ্কট মোচনে ‘খাবারই সবচেয়ে ভালো ভ্যাকসিন’।
কিন্তু ডব্লিউএফপিসহ অন্যান্য সাহায্য সংস্থাগুলো যদি প্রয়োজনীয় আর্থিক সহযোগিতা না পায়, তাহলে খাদ্য সঙ্কট বিশ্বকে বড় ধরনের বিপদের মধ্যে ফেলে দেবে বলে মনে করছে নোবেল কমিটি।
নোবেল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্ষুধা আর সংঘাতের যে যোগাযোগ, তা একটি দুষ্টচক্র। যুদ্ধ আর সংঘাত খাদ্য সঙ্কটের কারণ ঘটায়, ঠিক যেভাবে ক্ষুধা আর খাদ্য নিরাপত্তার অভাব থেকে সংঘাত ও সহিংসতার সূত্রপাত হতে পারে।
“ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ার চেষ্টায় আমরা কখনও সফল হতে পারব না, যদি না আমরা যুদ্ধ আর সশস্ত্র সংঘাতের ইতি টানতে পারি।”
নরোয়েজিয়ান নোবেল কমিটি মনে করে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়তা করা হলে তা কেবল ক্ষুধামুক্তিই ঘটাবে না, শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনেরও পথ তৈরি করবে। সেদিক দিয়ে আমেরিকা, আফ্রিকা আর এশিয়ায় ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইকে শান্তির জন্য প্রচেষ্টার সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েছে ডব্লিউএফপি।