সৌদি আরবের সীমান্ত রক্ষীরা ইথিওপিয়ার অভিবাসীদের উপর ‘বিস্ফোরক অস্ত্র’ ব্যবহার করেছে। এই অভিবাসীরা ইয়েমেন দিয়ে উপসাগরীয় দেশটিতে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। সৌদি সীমান্তরক্ষীদের এই হামলায় গত বছর থেকে শতাধিক অভিবাসী নিহত হয়েছে বলে সোমবার মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ তথ্য জানিয়েছে।
এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে তাৎক্ষনিক কোনো মন্তব্য করেনি সৌদি আরব।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক নাদিয়া হার্ডম্যান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সৌদি কর্মকর্তারা এই দুর্গম সীমান্ত এলাকায় শত শত অভিবাসী এবং আশ্রয়প্রার্থীকে বিশ্বের অন্যন্য অংশের দৃষ্টির আড়ালে হত্যা করছে। সৌদি ভাবমূর্তি উন্নত করার জন্য পেশাদার গল্ফ, ফুটবল ক্লাব এবং প্রধান বিনোদন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের আড়ালে এই ভয়ঙ্কর অপরাধ থেকে দৃষ্টি সরানো উচিত নয়।’
নিউইয়র্ক ভিত্তিক গ্রুপটি প্রায় এক দশক ধরে সৌদি আরব এবং ইয়েমেনে ইথিওপিয়ার অভিবাসীদের নিপীড়নের তথ্য নথিভুক্ত করেছে। তবে সর্বশেষ হত্যাকাণ্ডগুলি ‘বিস্তৃত ও পদ্ধতিগত’ বলে মনে হচ্ছে এবং এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রার হতে পারে।
গত বছর, জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ‘উদ্বেগজনক অভিযোগ’ এর ব্যাপারে প্রতিবেদন দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের প্রথম চার মাসে দক্ষিণ সৌদি আরব এবং উত্তর ইয়েমেনে ‘সৌদি আরবের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আন্তঃসীমান্ত আর্টিলারি গোলা এবং ছোট অস্ত্রের হামলায় প্রায় ৪৩০ জন অভিবাসী নিহত হয়েছে।’
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনটি ইয়েমেন থেকে সৌদি আরবে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা ৩৮ ইথিওপীয় অভিবাসীর সাক্ষাৎকারের পাশাপাশি স্যাটেলাইট ছবি, ভিডিও এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবি ‘অথবা অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা।’
সাক্ষাৎকার প্রদানকারীরা মর্টার আক্রমণসহ ২৮টি ‘বিস্ফোরক অস্ত্রের ঘটনা’ বর্ণনা করেছেন। কিছু জীবিত ব্যক্তি কাছ থেকে দেখা হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। সৌদি সীমান্তরক্ষীরা ইথিওপিয়ানদের জিজ্ঞাসা করেছিল ‘তাদের শরীরের কোন অঙ্গে তারা গুলি করা পছন্দ করবে।’
‘সব সাক্ষাৎকার প্রদানকারী ভয়াবহ দৃশ্য বর্ণনা করেছেন: পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে নারী, পুরুষ ও শিশুরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে-যাদের কেউ আহত, কেউ মৃত।’
ইথিওপিয়ার ওরোমিয়া অঞ্চলের ২০ বছর বয়সী তরুণী জানিয়েছেন, সৌদি সীমান্ত রক্ষীরা একদল অভিবাসীর উপর গুলি চালিয়েছিল যাদের তারা সবেমাত্র হেফাজত থেকে মুক্তি দিয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘তারা বৃষ্টির মতো আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছিল। সেই কথা আমার কথা মনে হলেই আমি কাঁদি।’