ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলার পর দেশটিতে দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে ২০০৮ সালে সাংবাদিক মুনতাজার আল-জাইদি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মেরেছিলেন। ওই ঘটনার পরপর দেশে ও বিদেশে সংবাদ শিরোণাম হন মুনতাজার।
ওই ঘটনার পর প্রায় ১৫ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মার্কিনিদের প্রতি মুনতাজারের ক্ষোভ এখনও রয়ে গেছে।
২০০৮ সালে তার কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘যারা ২০ বছর আগে দখলদারের সাথে প্রবেশ করেছিল তারা ব্যর্থতা ও দুর্নীতি সত্ত্বেও এখনও শাসন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব ভালো করেই জানে যে, তারা ছদ্মবেশী রাজনীতিবিদদের নিয়ে এসেছে।’
বাগদাদে ২০০৮ সালে সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন ইরাকি প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বুশ জুনিয়র। এক পর্যায়ে একটি জুতা তার দিকে উড়ে আসলে কোনোরকমে পাশ কাটিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছিলেন বুশ। কারো দিকে জুতা নিক্ষেপ আরব বিশ্বে অত্যন্ত অপমানজনক হিসেবে দেখা হয়।
জুতা নিক্ষেপের পরপর মুনতাজার চিৎকার দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটি ইরাকি জনগণের কাছ থেকে একটি বিদায়ী চুম্বন, তুমি কুকুর!’
এসময় নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মুনতাজারকে ধরে ফেলেন এবং তাকে দ্রুত বের করে নিয়ে যান।
ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেইন গণবিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন এমন ভুয়া অভিযোগের ভিত্তিতে বাগদাদ আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন বুশ। মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনী শেষ পর্যন্ত সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং সাজানো বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেয়।
বুশকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপের অভিযোগে ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছিল মুনতাজারের। কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি লেবাননে চলে যান। ২০১৮ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ইরাকি পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেশে ফিরে আসেন তিনি। তবে নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
অবশ্য হাল ছাড়েননি মুনতাজার। এখনও তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। আজও পর্যন্ত বুশকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করার জন্য তিনি কখনও অনুশোচনা করেননি বলে জানিয়েছেন সাবেক এই সাংবাদিক।
তিনি বলেছেন, ‘এই দৃশ্যটি প্রমাণ হিসাবে দাঁড়িয়েছে যে, একদিন একজন সাধারণ মানুষ তার সব শক্তি দিয়ে অত্যাচার, অস্ত্র, মিডিয়া, অর্থ ও কর্তৃত্ব থাকা সেই অহংকারী ব্যক্তিকে না বলতে সক্ষম হয়েছিল এবং বলতে পেরেছিল যে, আপনি (বুশ) ভুল ছিলেন।’