ওয়াশিংটন ডিসি: শীতের নানা রকম পিঠা পুলী বাংলাদেশের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলাদেশের উৎসব-আনন্দের সাথে মিশে আছে রকমারি পিঠার স্বাদ। আর সুদূর প্রবাসে এসেও দেশিয় ঐতিহ্যের হরেক রকম স্বাধের পিঠা নিয়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৮ জানুয়ারি শনিবার অনুষ্ঠিত হল ডিসি মেরিল্যান্ড ভার্জিনিয়ার জনপ্রিয় সংগঠন ফ্রেন্ডস এ্যান্ড ফ্যামেলী ডিএমভির জমজমাট পিঠা উৎসব।
দূর্যোগপূর্ণ বৈরী আবহাওয়ার কারনে হঠাৎ করেই অনুষ্ঠানের একদিন পুর্বে ফেয়ারফ্যাক্স কাউন্টি স্কুলবোর্ড পিঠা উৎসব অনুষ্ঠানের মুল স্থান বাতিল করে দেয়ার ফলে আয়োজকদের তড়িৎ সিদ্ধান্তে স্থান পরিবর্তন করে ভার্জিনিয়ার দূর্গা টেম্পলে পিঠা উৎসবের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানের আকস্মিক স্থান পরিবর্তন এবং বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই বৃহত্তর ওয়াশিংটন প্রবাসীদের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত হয় ফ্রেন্ডস এ্যান্ড ফ্যামেলী ডিএমভির জমজমাট পিঠা উৎসব।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী রিচি সোলাইমান ও ওয়াশিংটনের জনপ্রিয় সংগঠক বিসিসিডিআই বাংলাস্কুলে প্রিন্সিপাল শামীম চৌধুরীর জমজমাট এবং প্রানবন্ত উপস্থপনায় প্রতিবারের মত এবারের পিঠা উৎসবের মঞ্চ মাতিয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ব্যান্ড “চাইম” এর ভোকাল খালিদ সাইফুল্লাহ। এছাড়াও অনুষ্ঠানের মঞ্চ মাতিয়েছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাউল শিল্পী সায়রা রেজা, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা রাজিব, নিউইয়র্কের জনপ্রিয় শিল্পী কামরুজ্জামান বকুল, জহির টিপু ও সুজন।
এছাড়াও ছিল স্থানীয় শিল্পীদের জমজমাট নাচ গান পরিবেশনা। স্থানীয় শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কালাচাঁন সরকার, শেখ এম মিলন, মোহাম্মদ স্বপন, ক্লেমেন্ট গোমেজ, রোকেয়া হাসি ও তার দল মাহদিয়া জাহান ইশাল, মাহিবা হাসান নিয়ন্তি, রবি আলম, বনানী চৌধুরী ও তার দল, তাথৈ শিল্পগোষ্ঠী এবং দলীয় সংগীতে বৃহত্তর ওয়াশিংটনের একঝাঁক শিল্পীবৃন্দ।
কোরাসে অংশগ্রহনকারী শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাছের চৌধুরী, আশীষ বড়ুয়া, শেখ মাওলা মিলন, রোমানা শিমু, ফাহমিদা শম্পা, আসমা খানম বীনা, শিখা আহমেদ, মাসুমা মেরিন, পলি হোসেন, দেওয়ান আলী বিজয়, মমতা আবেদীন, মেজবাহ আলমগীর, মোহম্মদ স্বপন, হাওয়া বেগম, শারমিন জাহান, জলি নাইম, আলো হোসেন, নায়লা হোসেন, জেবা রাসেল, ইমাম হোসেন ও হাসনাত সানী। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও অভিনয়ে ছিলেন বাংলাদেশর জনপ্রিয় অভিনেত্রী রিচি সোলাইমান ও ওয়াশিংটনের জনপ্রিয় সংগঠক শামীম চৌধুরী।
ফ্রেন্ডস এ্যান্ড ফ্যামেলী ডিএমভির এই আয়োজনের সাথে আরো যারা বিভিন্ন ভাবে সংযুক্ত এবং অ্যাওয়ার্ড গ্রহন করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অ্যাজাইল ওয়ান টেক জাহিদ হোসেন, কমনওয়েলথ মর্টগেজ তৌফিক মতিন, ডাটাগ্রুপ জাকির হোসেন, মিনা শো এন্টারটেইনমেন্ট মিনা মুক্তা, ৩৫তম ফোবানা কনভেনার জি আই রাসেল, ভিডিএইচ কাজী টি ইসলাম, ব্যবসায়ী এজেএম হোসেন, ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, রিয়েলষ্টেট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাজীব, রিয়েলটর মাসুদ হাসান, বাংলাস্কুল, বন্ধন, একতারা, বাকোডিসি, শাহীন ওয়ারলেস রিয়েলটর মোহাম্মদ নিজাম, বর্ণমালা প্রমুখ।
পিঠার পাশাপাশি অনুষ্ঠানকে সাজানো হয়েছে দেশীয় পণ্যের সমাহার দিয়ে। শাড়ি চুড়ি গয়না খেলনা দেশীয় খাবার সহ ছিল নানা ধরনের ষ্টল। ছিল পিঠা প্রতিযোগীতায় আকর্ষণীয় পুরস্কার আর কে জুয়েলার্স এর পক্ষ থেকে ডায়মন্ডের আংটি, মনির হোসেনের পক্ষ থেকে একটি ল্যাপটপ এবং শামসুদ্দীন মাহমুদের পক্ষ থেকে আরেকটি ল্যাপটপ।
পিঠা প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান লাভ করে ঝাল টক মিষ্টি পিঠা ঘর, দ্বিতীয় স্থান সখী পিঠা ঘর এবং তৃতীয় হয়ে পুরস্কাল লাভ করে ঢাকা পিঠা ঘর। অনুষ্ঠানে পিঠা প্রতিযোগীতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন রোকেয়া নাসিমা আক্তার পপি, ইনারা ইসলাম, কবিতা দেলওয়ার, শেখ মিলন ও মনিষা মনি।
বিভিন্ন ষ্টলে শীতের পিঠার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পিঠাগুলো ছিল চিতোই পিঠা, পাকানো পিঠা, পাকোয়ান পিঠা, পক্কন পিঠা, পাটিসাপটা, কুশলি পিঠা, ভাপা পিঠা, ভাত পিঠা, কাটা পিঠা, নকশি পিঠা, পুলি পিঠা, দুধ পিঠা, লাউ পায়েস, ছিট পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, গোকুল পিঠা, গড়গড়া পিঠা, ম্যারা পিঠা, মুঠা পিঠা, সিদ্ধ পিঠা, পুতুল পিঠা, লরি পিঠা, চাছি পিঠা, সাগুদানা, ঝুড়িসীতা, তারাজোড়া, জামাই পিঠা, জামদানি পিঠা, হাদি পিঠা, পাটা পিঠা, তেজপাতা পিঠা, তেলেভাজা পিঠা, ঝুরি পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা, বিবিয়ানা পিঠা, চষি পিঠা, খান্দেশা, গোলাপফুল পিঠা, পাতা পিঠা, সবুজ পিঠা, কেক পিঠা, গুলগুলা, ফুলকুচি, সেওই পিঠা, লবঙ্গ পিঠা, ক্ষীরডুবি, খাস্তা পিঠা, পেঁপের সন্দেশ, কড়ি পিঠা, সিরিনচ পিঠা, ঝিকমিক পিঠা, পয়সা পিঠা, সংসার পিঠা, শিঙাড়া পিঠা, বিবিখানা পিঠা, চান্দ পাকোড়া, ঝালপোয়া পিঠা, মালপোয়া পিঠা, মালভোগ, ক্ষীরকুলি, মালাই পিঠা, নারকেল ভাজা পুলি, নারকেল সিদ্ধ পুলি, নারকেল ঝুরি পিঠা, পাকোন পিঠা, সাজ পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, ঝাল পিঠা, বিস্কুট পিঠা, খাস্তা পিঠা, গজা, রুটি পিঠা, দুধ পায়েস, কুলি পিঠা, দুধকুলি পিঠা, জামাই কুলি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, চুটকি পিঠা, রসপুলি, কাটা পিঠা, মুরালি পিঠা, খান্দাশ, পয়সা পিঠা, চুষি পিঠা ইত্যাদি অন্যতম।
এছাড়াও ছিল বিরিয়ানি, ফুচকা, বুট মুরি, চা, পপকর্ণ, মোগলাই, সমুচা, সিঙ্গারা সহ নানা খাবারের সমারোহ। এছাড়া গার্মেন্টস, শাড়ী চুড়ি গয়না, জুতা সহ নানা ধরনের ষ্টলে ষ্টলে মেলা প্রাঙ্গন ছিল ভরপুর।
অনুষ্ঠানে আগামী ২০২১ সালে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য ৩৫ ফোবানা সম্মেলনের কর্মকর্তাদের পরিচয় করিয়ে দেন ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলীর ডিএমভির আকতার হোসেন। মঞ্চে ৩৫ ফোবানা সম্মেলনের কর্মকর্তাদের উপস্থিত ছিলেন ৩৫ ফোবানা সম্মেলনের সভাপতি ইনারা ইসলাম, কনভেনার জি আই রাসেল, প্রধান সমন্বয়ক এজেএম হোসেন, সহ সভাপতি আব্দুস সাত্তার, দস্তগীর জাহাঙ্গীর, শামসুদ্দিন মাহমুদ, ক কনভেনার মজনু মিয়া, সমন্বয়ক দেওয়ান এরশাদ আলী বিজয় প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে মঞ্চ তৈরিতে ছিলেন হারুনুর রশীদ, মঞ্চ ব্যবস্থাপনায় ছিলেন মোস্তফা হোসেন মুকুল এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন আকতার হোসেন। ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলী ডিএমভি কর্নধার আকতার হোসেনের সমাপনী বক্তব্যে আগামী ৪ এপ্রিল শনিবার বৈশাখী মেলা এবং আগামী বছর ২০২১ সালের ১৬ জানুয়ারি শনিবার আবারো পিঠা উৎসবের আয়োজনের ঘোষনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।