ফেসবুকের কল্যানে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরের প্রায় প্রতিটি বাঙ্গালীর কাছে বেশ পরিচিত একটি মুখ।
আমাদের সমাজের সব অসঙ্গতি তুলে ধরেন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে। তার সাথে দৃষ্টি আকর্ষন করেন কর্তৃপক্ষের।
৯৯% সময়েই ফল আসে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।তারপর তিনি ফলোআপ করেন এবং ধন্যবাদ জানান কর্তৃপক্ষকে। খুশি হয় দুপক্ষই।
করোনা মোকাবেলায় ব্যারিস্টার সুমন বেশ সজাগ একদম শুরু থেকেই।আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা এর ভয়াবহতা অনুধাবন করার অনেক আগেই সেই জানুয়ারির ২৪ তারিখে নিউ ইয়র্কে রেকর্ড করা একটি ভিভিওতে সরকারকে আগাম সতর্ক করে অনুরোধ করেছিলেন যথাযথ প্রস্তুতি নিতে। তখন থেকেই প্রস্তুতি নিলে আজ আমাদের এই দূর্দশা হতো না।
আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে মার্চের ১৯ তারিখ থেকে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে গিয়ে দেশের মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন কতটা ভয়াবহ হতে পারে এই ভাইরাস।
অনুরোধ করেছিলেন নির্বাচন কমিশনকে সকল নির্বাচন বন্ধ করতে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার অনুরোধে কর্ণপাত না করে নির্বাচন চালিয়ে গেছে।
মার্চের ২৩ তারিখে দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধির না করতে অনুরোধ করেন দেশের সকল ব্যবসায়ীদের। সতর্ক করেন একদিন মরতে হবে আমাদের সবাইকে। এখন ব্যবসা করার সময় না। এখন একজনের পাশে আরেকজনের দাঁড়ানোর সময়।
মার্চের ২৫ তারিখে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করতে হাজির হন ক্যামেরার সামনে। অনুরোধ করেন যাতে তিনি অন্তত সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং মেনে চলেন এবং বাকিদের কাছে একটা উদাহরণ সেট করেন।
মার্চের ২৮ তারিখে বয়স্কদের কান ধরে উঠবস করা ছবি এবং ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। তৎকালীন এসিন্যান্ডের বিরুন্ধে আইনি লড়াইয়ের ঘোষণা দেয় যাতে আর কোন মানুষ ক্ষমতার অপঃব্যবহার করার দুঃসাহস না করে।
একই দিন নিজের ব্যবহারের জন্য থাকা জিপ গাড়িটিকে নিজের উপজেলা হাসপাতালের জন্য এম্বুলেন্স হিসাবে ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেন। মার্চের ৩১ তারিখে সকল ডাক্তারদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ করেন তারা যেন বিনা চিকিৎসায় রোগীদের ফিরিয়ে না দেন। মনে করিয়ে দেন তাদের হিপোক্রেটিক ওথের কথা।
এপ্রিলের প্রথম থেকেই বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের সাথে জড়িত হয়ে মাঠ পর্যায়ে নিজের এলাকার মানুষদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান এই সংকট মোকাবেলায়। সবাইকে মনে করিয়ে দেন এখনই সময় দেশপ্রেমিক হয়ে দেশের পাশে দাঁড়ানোর।
এপ্রিলের ৩ তারিখে নিজের বেতনের ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিলিয়ে দেন সাধারণ মানুষের জন্য। অন্যসব নেতাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন কিভাবে বিপদের দিনে নিজ এলাকার মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে হয়।
এপ্রিলের ৫ তারিখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন গার্মেন্টস শ্রমিকদের সাথে অনিয়মের ব্যাপারে। গার্মেন্টস মালিকদের অনুরোধ করেন তাদের মানুষের মত মূল্যায়ন করতে এবং এই বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াতে।
এপ্রিলের ৬ তারিখে সকল টেলিফোন অপারেটরদের অনুরোধ করেন ব্যবসায়ী মনভাব থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের পাশে দাঁড়াতে। তার এই আহবানে সারা দিয়ে প্রায় সব অপারেটরই নতুন সব প্যাকেজ অফার নিয়ে আসে গ্রাহকদের জন্যে।
এপ্রিলের ৭ তারিখে ত্রাণ বিতরণে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানান এবং সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেন।
এপ্রিলের ৮ তারিখে তার প্রতিবেশীদের আশ্বস্ত করে বলেন কাউকে না খেয়ে মরতে হবে না। পরিষ্কার বলে দেন তার বাড়িতে ১ কেজি চাল থাকলেও তা ভাগ করে খাবেন সবার সাথে।
এপ্রিলের ৯ তারিখে নিজ উদ্যোগে মেডিকেল টীম গঠন করেন এবং ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রোগীদের বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা দেবার অঙ্গীকার করেন।
এপ্রিলের ১১ তারিখে নিজের বাড়ি ছেড়ে দেন ডাক্তারদের জন্য যাতে তারা তাদের পরিবারের কাছ থেকে দূরে থেকে সংক্রমণ রোধ করতে পারেন।
এপ্রিলের ১২ তারিখে খাদ্যের ঘাটতিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সবাইকে খাদ্যগ্রহণে সময় সংযমী হতে বলেন। এই ঘাটতি যেন মানুষের মধ্যে পেনিক সৃষ্টি করতে না পারে তাই সবাইকে অগ্রিম সতর্ক করে দেন।
এপ্রিলের ১৩ তারিখে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেন দেশের সকল ভাল আবাসিক হোটেল ফ্রন্ট-লাইন ওয়ার্কারদের জন্য ভাড়া নিয়ে নেয়া হয়। এই মূহুর্তে ডাক্তার-নার্স-পুলিশরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিরিলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের পরিবারের সুবক্ষার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী তথা রাষ্ট্রকে নেয়ার আহবান জানান।
তার ফলাফলও মিলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই। সরকার থেকে প্রকাশ করা হয় ফ্রন্ট লাইনারদের জন্য হাস্পাতালের তালিকা।
আজ এপ্রিলের ১৪ তারিখ। পহেলা বৈশাখ। হয়তো আজও কোন সামাজিক কাজে নিজেকে মেলে ধরবেন দেশের মানুষের সামনে। প্রতিদিনের মত আজও জয় করবেন লাখো-কোটি মানুষের।
আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা যখন নিজের জীবন বাঁচাতে কোরান্টিনে চলে গেছেন তখন নিঃস্বার্থভাবে দেশের মানুষের পাশে এসে দাড়ায় কিছু সাদা মনের মানুষ। এমনই একজন ব্যারিস্টার সুমন।
দেশের নেতারা যখন ত্রাণের চাল চুরি করতে ব্যস্ত তখন ব্যারিস্টার সুমনরা এগিয়ে দেন নিজের ঘরের চাল।
আমরা যেন বিপদ চলে যাওয়ার পর তাদের এই মহানুভবতা মনে রাখি। কারণ আমাদের দেশে ব্যাংক-ব্যালেন্সওয়ালা মানুষ অনেকে আছে কিন্তু এরকম বড় হৃদয়ের মানুষ খুব বেশি নাই।তার দেখাদেখি আমাদের সমাজের আরও যত বিত্তবান নাগরিক আছেন তারাও যেন এগিয়ে আসেন সেই কামনা।