বিখ্যাত হলিউডি সিনেমা লরেন্স অব অ্যারাবিয়ার কথা মনে আছে? ব্রিটিশ গোয়েন্দা টমাস এডওয়ার্ড লরেন্সের আরব মিশনকে কেন্দ্র করে সেই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছিল। কূটকৌশল চালিয়ে নিজের জাতির স্বার্থ রক্ষার অবদান হিসেবে তাকে জাতীয় বীর হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য। অথচ মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া এক বইতে লরেন্স ব্রিটিশদের বেইমানির জন্য অনুশোচনা প্রকাশ করে গেছেন।
টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স ছিলেন ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ব বিশারদ, সামরিক নীতি নির্ধারক ও লেখক। তিনি ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা ছিলেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি মধ্যপ্রাচ্যে বিশেষ সামরিক তৎপরতা চালিয়েছেন। আরবদের বন্ধু সেজে তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বীজ উস্কে দিয়েছিলেন তিনি। এর মাধ্যমে উসমানীয় খেলাফত বিরুদ্ধে আরবদের অভিযান চালাতে প্ররোচিত করেন। তাকে ব্রিটিশরা আদর করে লরেন্স অব অ্যারাবিয়া বলেও ডাকে।
১৯১৬ সালে আরবরা উসমানীয় খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। উসমানীদের পরাজিত করতে ফয়সাল বিন আল-হুসেন বিন আলী আল-হাশেমির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন লরেন্স। আরবদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল, তুর্কিদের তাড়াতে পারলে তারা পুরো অঞ্চলে স্বাধীন আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। অভ্যাস অনুযায়ী, ব্রিটিশরা কথা রাখেনি। তুর্কিদের পরাজয়ের পর এই অঞ্চলটি ব্রিটেন ও ফ্রান্স ভাগাভাগি করে নিয়েছিল।
লরেন্সের আরব বিদ্রোহের বিবরণ দিয়ে ‘দ্য সেভেন পিলারস অব উইজডম’ শিরোনামে ১৯২৬ সালে বই প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ১৯২৪ সালে তিনি বইটিতে যুক্ত করার জন্য ১০০ কপি ‘প্রসপেক্টাস’ প্রকাশ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেটি আর মূল বইয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। ১৯৩৫ সালে লরেন্স মারা যাওয়ার পর ওই প্রসপেক্টাসেরও সন্ধান পাওয়া যায়নি। লরেন্স তার সেই প্রসপেক্টারে ব্রিটিশদের বেইমানির জন্য ‘গভীর দুঃখ ও অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন।’
দ্য সেভেন পিলারস অব উইজডম বইটির মুছে ফেলা প্রথম অধ্যায়টির সন্ধান পেয়েছেন বিরল বইয়ের বিক্রেতা গ্লেন মিচেল। তিনি বইয়ের ওই অংশটি প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।