জসিম মল্লিক
লেখক পরিচিতিঃজন্ম বরিশাল শহরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর লেখালেখির শুরু এবং দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক-এ নিয়মিত লিখছেন। ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজের মধ্য দিয়ে তার সাংবাদিকতার শুরু। দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছরের সাংবাদিকতা ও লেখালেখির অভিজ্ঞতা।এ পর্যন্ত তার প্রায় পঁয়ত্রিশটির মতো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশ এবং কানাডা নামক দুটো মহান দেশের নাগরিক বলে এই দেশ দুটি আমার ভালবাসার তালিকার শীর্ষে থাকবে সবসময়। এর পরের দেশ দুটি হচ্ছে ভারত এবং আমেরিকা। কারণ বলছি। আমি বরিশালে জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি। আমার শৈশব, কৈশোর কেটেছে বরিশালে। সর্বোপরি বরিশালে আছে আমার মা-বাবা, আমার ভাই-বোন, আমার আত্মীয়-পরিজন আর বন্ধুরা। তাই বরিশাল আমার সব সময়ের জন্য প্রিয় শহর। আবেগের শহর। আমি যদি কখনও আবার ফিরি তাহলে বরিশালেই ফিরব।
বরিশাল ছেড়ে একদিন আমি ঢাকা আসলাম। আমার লেখাপড়া, জীবন সংগ্রাম, চাকরি, সংসার সবই ঢাকায়। তাই ঢাকা সবসময় আমার স্মৃতির শহর হয়ে থাকবে। ঢাকা আমাকে অনেক দিয়েছে। তারপর একদিন আমি কানাডায় পাড়ি জমাই। এক বছর অটোয়া কাটিয়ে আমি টরন্টোতে স্থায়ী হই। দীর্ঘদিন এই শহরে থেকে শহরের গলিপথ, আনাচ-কানাচ সব আমার অতি পরিচিত হয়ে উঠেছে। ভালবাসার শহর টরন্টো। এই শহরের পথে নামলেই মনে হয় এটা আমার নিজের শহর। মোলায়েম, নিরাপদ, উষ্ণ আর সহজ একটি শহর।
ভারত আমার প্রিয় দেশ নানা কারণে। আর কলকাতা শহর হচ্ছে আমার একটি আবেগের নাম। আমি প্রথম ইমিগ্রেশন পার হয়ে যে শহরে গিয়েছি সেটা ভারতের কলকাতা। জীবনের প্রথম বিদেশ ভ্রমণ। তাই ভারত আমার ভালবাসার দেশ হিসাবেই থাকবে। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত আমাদের এক কোটি মানুষকে নয় মাস আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে যুদ্ধ করেছে। শুধু তাই নয় বেড়ানো, কেনাকাটা, চিকিৎসা,পড়াশুনা বা ব্যবসার কাজে আমরা বেশি যাই ভারত।
ঐতিহাসিকভাবেই দুই বন্ধু দেশ। দুই পাড়েই রয়েছে আত্মীয়তার অবিচ্ছেদ্য বন্ধন। ভারতের গান শুনে, সিনেমা দেখে আর বই পড়ে পড়ে বড় হয়েছি। আমার ছেলে হায়দরাবাদের মেয়ে বিয়ে করেছে। ভারতে আমার অনেক বন্ধু আছে। কানাডায় আমার অনেক সহকর্মী ভারতীয়, আমার প্রতিবেশী ভারতীয়। মনে আছে আমার বস অনেক বছর আগে একবার বলেছিল জসিম, যদি কখনো বিদেশে যাও তাহলে চেষ্টা করবা ভারতীয়দের প্রতিবেশী হতে…।
আমার অপর ভালবাসার দেশ হচ্ছে আমেরিকা। কারণ হচ্ছে কলকাতার পরই আমার দ্বিতীয় বিদেশ ভ্রমণ ছিল আমেরিকা। এক লাফে আটলান্টিক পাড়ি দেওয়া যাকে বলে। আমেরিকার যে শহরটিতে প্রথম পা রেখেছিলাম সেটি হচ্ছে বিশ্বের রাজধানী হিসাবে খ্যাত নিউ ইয়র্ক। তাই নিউ ইয়র্ক সবসময় আমার প্রিয় জায়গা। নিউ ইয়র্কে আমার অনেক বন্ধু আর আত্মীয় আছে। নিউ ইয়র্কের মাটিতে যখনই পা রাখি মনে হয় এটা আমার নিজের শহর। এই শহরের মানুষ আমাকে অনেক ভালবাসে, প্রশ্রয় আর সম্মান দিয়েছে। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি।
এরপর তো অনেক দেশেই গিয়েছি, অনেক শহর ঘুরেছি। আমেরিকারই বিশ-পঁচিশটা স্টেটে গিয়েছি কিন্তু নিউ ইয়র্কের কোনো তুলনা নাই। গত বিশ-বাইশ বছরে কমপক্ষে পঞ্চাশবার নিউ ইয়র্কে যাওয়া হয়েছে আমার। আমেরিকা এই পৃথিবীর মানুষকে অনেক দিয়েছে। পৃথিবীর মানুষের আমেরিকার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আমেরিকার পর আমি ভারতকেই সুপার পাওয়ার হিসাবে দেখতে পছন্দ করব। তাতে বাংলাদেশও লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।