তাসরীনা শিখা ||
‘আমার একলা আকাশ থমকে গেছে
রাতের স্রোতে ভেসে, শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে, তোমার কাছে এসে
শুধু তোমায় ভালোবেসে,।
এই গানটির মাঝে যে মিষ্টি ভালোবাসা লুকিয়ে আছে তা শুনে সবার মাঝে অল্পবিস্তর ভালবাসা জেগে উঠতে বাধ্য। এমন অনেক গান কবিতা আছে যা শুনে বয়সের বাঁধ ভেঙ্গে ভালোবাসা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো উছলে পরে।
এখন বলি ভ্যালেন্টাইন ডে অথবা ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস –
রোমে ২৬৯ সালে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন পাদ্রী ছিলেন। তিনি প্রেম ভালোবাসা এবং বিবাহের পক্ষে ছিলেন । তিনি বহু প্রেমিক প্রেমিকা, যুবক-যুবতীকে বিবাহ দিয়েছেন। তখন রোমে সম্রাট ক্লাউডিয়া ২য় নামে একজন নির্দয় সম্রাট ছিলেন। তিনি একবার যুদ্ধে হেরে গিয়ে উপলব্ধি করলেন তার দেশে সৈন্য সংখ্যা কম। তখন তিনি দেশের সকল যুবকদের আহবান জানালেন যুদ্ধে যোগদান করতে কিন্তু যুবকরা তাদের স্ত্রী ও প্রেমিকাদের ফেলে যুদ্ধে যোগদান করতে রাজী হলেন না। তখন সম্রাট ঘোষণা দিলেন তার সম্রাজে কোন যুবক বিবাহ করতে পারবে না। ভ্যালেন্টাইন সম্রাটের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলেন এবং গোপনে যুবক-যুবতীদের বিবাহ দিতে লাগলেন । সম্রাট খুব্ধ হয়ে ভ্যালেনটাইনকে কারাগারে বন্ধি করেন। যুবক-যুবতীরা প্রতিদিন কারাগারের বাইরে এসে তাকে গোলাপ ফুল উপহার দিয়ে যেতো । সেখান থেকেই ভ্যালেন্টাইন ডে-তে প্রেমিক-প্রেমিকাদের গোলাপ ফুল দেওয়ার প্রচলন শুরু হয়েছে।
ভ্যালেন্টাইন কারাগারে বসে নানা রকমের ধর্ম গ্রন্থ পাঠ করতেন। জেলের জেলারের একটি অন্ধ কন্যা ছিলো। জেলারের অনুরোধে ভ্যালেন্টাইন তার কন্যাকে ধর্ম গ্রন্থ শিক্ষা দিতে লাগলেন । অন্ধ মেয়েটির নাম ছিলো জুলিয়া। ভ্যালেন্টাইন ও জুলিয়ার প্রার্থনার ফলে জুলিয়া তার দৃষ্টি শক্তি ফিরে পায়। তখন তাদের দুইজনের মাঝে গভীর প্রেম গড়ে উঠে । তাদের প্রেম সম্পর্কে জেলার অবগত ছিলেন। সে খবর জানাজানি হয়ে গেলে এবং সম্রাটের কানে সে কথা পৌঁছালে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। ধীরে ধীরে বিশ্বের সকল দেশে ভ্যালেন্টাইনের এবং জুলিয়ার প্রেমের নিদর্শন হিসাবে পালিত হতে থাকে ভ্যালেন্টাইন ডে ।
এখন এইদিনটি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মহা সমারোহে পালিত হচ্ছে । আমরা বাঙ্গালিরা উৎসব প্রিয় জাতি। সব কিছুই আমরা মহা সমারোহে পালন করি। বাংলাতে ভ্যালেন্টাইন ডে-কে “ভালোবাসা দিবস” নামে আখ্যায়িত করা হয়। ভ্যালেন্টাইন ও জুলিয়াকে স্মরণ করে বাঙ্গালিরা ভালোবাসা দিবস পালন করে। ভালোবাসা দিবসটি অবশ্য এখন বাণিজ্যিক পর্যায় চলে গেছে। এখন ভ্যালেনটাইন ডে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার মাঝে সীমাবদ্ধ না, সেটা ছড়িয়ে পরেছে সব প্রিয়জন ও পরিবারের সবার মাঝে উপহার আদান প্রদান করে। আমাদের তরুন বয়সে কখনো ভালোবাসা দিবসের নাম শুনিনি। আমাদের ভালোবাসার জন্য কোন বিশেষ দিন উৎযাপিত হতো না। কিন্তু তখন ভালোবাসার গভীরতা ছিল অনেক বেশি।তখন ভালোবাসায় ছিলো ত্যাগ ছিলো মহত্ব।
এই দিবসে ফুলের দোকান খালি হয়ে যায়। গোলাপের দাম বেড়ে যায় দ্বিগুণ। মানুষ ছুটে যায় গোলাপ ফুল কিনতে। এবার মহামারির কারনে ভ্যালেন্টাইন ডে হয়তো কোথাও সেভাবে পালন করা সম্ভব হবে না। ভালোবাসা বাস করবে মানুষের হৃদয়ে ।
আমাদের তরুন বয়সে এতো ফুলের দোকান ছিল না , ছিলো না এতো গোলাপের সমারোহ। তখন ভালোবাসা ছিলো মানুষের হৃদয়ে। প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা ছিলো নীল খামে, প্রেমিকার ভীরু নয়নে, লজ্জাভরা মুখে, আবেগকাতর দেহে। তখন ভালোবাসায় যতটা মাধুর্য্য ছিলো কালের প্রবাহে তা অনেকটাই হারিয়ে গেছে। এখন প্রেমিকের প্রেমিকার প্রতিমুগ্ধ দৃষ্টি কতটুকু আছে বুঝা না গেলেও আছে অসংখ্য গোলাপের ভালোবাসা। কখনো আবার দেখাযায় গোলাপ শুকাবার আগেই ভালোবাসা শুকিয়ে যায়।
সবাই বলে ভালবাসার রং লাল ? সত্যি কি ভালোবাসার রং লাল? আমার দৃষ্টিতে ভালোবাসা নানা রঙে রঙ্গিন। মান অভিমান, প্রেম ভালোবাসা, চোখের জল, বিরহ, হৃদয় উজাড় করে দেওয়া সব মিলেই ভালোবাসার রং। ভালোবাসার কোন বয়েস নেই ,নেই কোন সময় সে অপ্রত্যাশিত ভাবে দ্বারে এসে দাঁড়াতে পারে । ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে বহুদুর।
আজকের ভালোবাসা দিবসে আমার ভালোবাসা বিলিয়ে দিলাম বিশ্বের সব মানুষের মাঝে। আমার ভালোবাসা রইলো নির্যাতিত ও সুবিধা বঞ্চিত নারী-পুরুষ এবং শিশুদের জন্য । আমার নানা রঙের ভালোবাসা ছড়িয়ে দিলাম আমার প্রিয় কাছের মানুষদের মাঝে । ভালোবাসা যেন সবার জন্য হয় চিরদিনের ।ভালোবাসা দিবসে অফুরান ভালোবাসা আপনাদের সবার জন্য ।